বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ইন্টারনেটের কল্যাণে স্থায়ী সম্পর্কবিমুখ তরুণদের মধ্যে অল্প বয়সে বিয়ে করার ঝোঁক বাড়ছে। মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রিয়ানা বেলুর গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ, ডেটিং ওয়েবসাইট ব্যবহার এবং তরুণদের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে নিবিড় একটি যোগসূত্র রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের কল্যাণে বিয়ের হার ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। খবর টেকক্রাঞ্চের।
বেলু বলেন, ভোক্তাদের ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের ধরন দেখে এটা নিশ্চিত যে, ইন্টারনেট ২১-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে বিবাহের হার বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি, সেখানে বিয়ের হারও অনেক বেশি। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আর্থসামাজিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বেকারত্ব এবং বয়সের তারতম্য ইন্টারনেটের কারণে বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। এর সুবাদে এসব অঙ্গরাজ্যে প্রথম বিয়ের হার ১৩-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা আরো জানান, তরুণদের বিয়েমুখী করতে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখছে ইন্টারনেট।
প্রথমত, ডেটিং সাইটগুলোর কারণে কাঙ্ক্ষিত সঙ্গী খোঁজা সহজ হয়ে গেছে। বেলু বলেন, প্রথাগত আনুভূমিক সার্চ মডেলে ব্যক্তিবিশেষ তার উপযোগী সঙ্গী খোঁজেন। এতে প্রায় একই উত্স থেকে বিভিন্ন সম্পর্কের খোঁজ আসে। সার্চ অব্যাহত রাখলে পছন্দমাফিক গুণাগুণ-সংবলিত সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যায়। সার্চের তত্ত্ব অনুযায়ী, খুঁজতে যত বেশি অর্থ ব্যয় করা হবে, ততই অধিক গুণাগুণ ও মূল্যবোধ সংবলিত পাত্রপাত্রীর খোঁজ পাওয়া যাবে; তাতে বিবাহবন্ধনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।’
নতুন শহরে লোকজনের সঙ্গে দেখা করাও কঠিন। এ বিষয়টি ইন্টারনেটভিত্তিক বিয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি শক্তি হিসেবে কাজ করছে। অফলাইনে উপযুক্ত পাত্রপাত্রী খুঁজে বের করা অনেক কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে পাত্রপাত্রীর গুণাগুণ ও মূল্যবোধ বেশ খানিকটা অস্পষ্ট থেকে যায়। আবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে সশরীরে দেখা করার বিষয়েও অনাগ্রহী। এদিক থেকে একটি অনলাইন কেন্দ্রীয় বিয়ের সাইট গ্রাহকদেরকে অনেকগুলো সমস্যা থেকে দূরে রাখে। কারণ, সার্চে নিজের নাম লুকিয়ে রেখেই পছন্দের পাত্রপাত্রীর খোঁজ করা যায়।
বেলু বলেন, নিজে নারী হিসেবে জানি নারীর মন বোঝা কতটা কঠিন। হয়তো আপনাকে সে অনেক পছন্দ করেছে, তার পরও মুখ ফুটে আপনাকে সে প্রস্তাব করবে না। এক্ষেত্রে পুরুষকেই প্রস্তাব করার কঠিন কাজটা করতে হয়। মুখোমুখি দেখাতে নারীদের এ লুকোছাপায় ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা আবার সামনে চলে আসে। কারণ, অনলাইনে একজন নারী যত সহজে হ্যাঁ বলতে পারেন; তত সহজে সম্মুখে একটা আইসক্রিম চাইতে পারেন না।
অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরকে পছন্দ করলেও সময়-সুযোগের অভাব কিংবা মানসিক টানাপড়েনের কারণে বিবাহের প্রস্তাব করা কঠিন হয়ে যায়। ইন্টারনেটে আলাপ করতে করতে কিংবা খেলাচ্ছলেই সেটা করা অনেক সহজ হয় প্রযুক্তিমনাদের জন্য।
তবে ইন্টারনেটের সুবাদে বিয়ের প্রবণতা বাড়লেও সেটা খুব ইতিবাচক না-ও হতে পারে। ম্যাচ ডটকম জানায়, বিয়ের সংখ্যা বাড়লেও সেগুলোর টিকে থাকা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ২০০৫ সালে এক জরিপে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, ৫ শতাংশ বিয়েই অনলাইনে শুরু হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনলাইনে গুণাগুণ পছন্দের সঙ্গে মিলে গেলেও ব্যক্তিগতভাবে বাছাই করা সঙ্গীটি বাস্তবে ভিন্ন ধরনের। তাতে বিয়ের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়ে যায়।
বেলু জানান, বিয়ে হোক না হোক প্রথম পরিচয়ের দিনটিকে সহজ করে তুলতে ইন্টারনেট ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মাইক্রোব্লগিং সাইট কিংবা অন্যান্য সাইটে বাছাই করা সঙ্গীর কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে তার সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যায়।