শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > অক্টোবর মিশনেই একাট্টা বিএনপি

অক্টোবর মিশনেই একাট্টা বিএনপি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণায় নড়েচড়ে বসলেও অক্টোবর মিশনে একাট্টা বিএনপি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অক্টোবরেই চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। ১৮ দলীয় জোটের শরিকদের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার আহ্বান এলেও পূর্বপরিকল্পনা থেকে সরছে না বিএনপি। বিভাগীয় জনসভা ও দেশজুড়ে গণসংযোগ শেষেই নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে তারা। তবে দাবি আদায়ে নানামুখী চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে বিরোধী জোট।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের ঘোষণা ও নৌকার পক্ষে দেশজুড়ে প্রচারণার পর বিএনপি বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দলটির নেতারা কেবল বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রতিবাদ এবং সঙ্কট সমাধানে আলোচনায় ফিরতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী শিবিরে হাতাশা নেমে এসেছে। এমনকি প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে জাতীয়তাবাদী সমর্থিত পেশাজীবীরা জনগণের হতাশার বিষয়টিও তুলে ধরছেন। যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকারকে সমঝোতায় ফেরাতে বাধ্য করা সম্ভব হবে। দেশবাসীকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন এদেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা-কর্মসূচির পাশাপাশি অনেক কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। সরকারের ফাঁদে আমরা পা দেব না। বরং পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল নিশ্চিত করা হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসতে শেখ হাসিনাকে বাধ্য করা হবে বলেও তিনি জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে কয়েক দফা আলটিমেটাম শেষে গত ঈদের পর ১৮ দলীয় জোটনেত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কঠোর কোনো কর্মসূচি দেননি। কেবল ৭ বিভাগে
জনসভা এবং দেশব্যাপী গণসংযোগের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
আজ নরসিংদী থেকে জনসভা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুর ও ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহীত জনসভা হবে। ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা, ২৮ সেপ্টেম্বর বরিশাল এবং ৫ অক্টোবর সিলেটে জনসভার পর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ ঢাকায় জনসভা করবেন খালেদা জিয়া।
বিরোধী জোটের এমন অহিংস কর্মসূচিকে কোনোরকম পাত্তাই দিচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২ সেপ্টেম্বর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী ২৫ জানুয়ারির আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিয়মানুযায়ী ২৬ অক্টোবরের পর সংসদের অধিবেশন বসবে না এবং মন্ত্রিপরিষদ গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করেন এবং নানা উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট চান। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী তার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেজন্য আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও ঢাকার লালবাগে নির্বাচনী আদলে জনসভা করেন। এসব জনসভা গণমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার ও ব্যাপক কভারেজ পায়। নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তিনি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালান। একচ্ছত্র এ অপপ্রচারের পাল্টা কোনো জবাব বিএনপির পক্ষ থেকে মিডিয়ায় প্রচার না হওয়ায় জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার বিরোধী জোটের আন্দোলনের বড় কোনো কর্মসূচি না থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের কট্টর সমর্থক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। এ হতাশা ক্রমেই বিএনপি নেতাদের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে। কবে, কীভাবে আন্দোলন হবে? সরকারের এমন হার্ডলাইন অবস্থান এবং সেনা সমর্থনে তৃতীয় শক্তির উত্থানের গুঞ্জনকে ১৮ দলীয় জোট কীভাবে মোকাবিলা করবে—এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মী এবং পেশাজীবীরা বিশ্লেষণ করছেন। তবে এসব বিশ্লেষণে সঙ্কট পেরিয়ে ইতিবাচক ফল প্রাপ্তির সুখবর দিতে পারছেন না তারা।
গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সামনেই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, কবে ও কীভাবে হবে বিএনপির আন্দোলন? আদৌ কি বিএনপি পারবে জনগণের চাওয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে সরকারকে বাধ্য করতে?
পরক্ষণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ প্রশ্নের জবাব দেন। বলেন, পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। ভোটের মাধ্যমেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। আর এজন্য সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। এ আন্দোলনে পেশাজীবীদের আরও কঠোর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
কি এই বিএনপির পরিকল্পনা ও কৌশল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ঘোষিত কর্মসূচি আর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি ছাড়া তারা কিছু জানাতে চাননি। তবে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে কোনো চমক থাকতেও পারে বলে ইঙ্গিত দেন এক নেতা।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগকে প্রকাশ্যে সরকার যতই খাটো করে দেখুক না কেন, আন্তর্জাতিক চাপকে অগ্রাহ্য করে বেশিদূর এগুতে পারবে না। এমনকি ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনেও নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো ফর্মুলার এজেন্ডা সরকার নিয়ে আসতে পারে বলে সূত্রটি আভাস দেয়। সূত্রের দাবি, এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের দুজন উপদেষ্টা কূটনৈতিক পর্যায়ে জোর তত্পরতা চালাচ্ছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের গুলশানের বাসায় যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সময় সেখানে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ও কানাডার হাইকমিশনার হিথার ক্রুডেন। আর ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বাসায় গতকাল বৈঠক করেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্র্যাক চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা। দেশের রাজনীতিতে চলমান সঙ্কটাবস্থায় এসব বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বৈঠকের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, যে কারও বাসায় যে কেউ আসতেই পারেন। এর বাইরে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ বৈঠকের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে আমার দেশকে বলেন, এদেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। বেগম জিয়ার বিভাগীয় জনসভা শেষে ঢাকা থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, নরসিংদীর জনসভার জনস্রোত এ সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজানো শুরু করবে। কূটনৈতিক তত্পরতার বিষয়ে নোমান বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সবাইকে কাজে লাগাচ্ছেন। সব কৌশল কাজে লাগিয়ে জনগণের বিজয় নিশ্চিত করা হবে।