শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেবেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী!

অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেবেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মঙ্গলবার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে সাক্ষাৎকার নেবেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। সকাল ৯টায় তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করবেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলবাজি বন্ধ করতেই শিক্ষামন্ত্রী নিজেই সাক্ষাৎকার নেবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা এক ধরনের চাপ দিয়ে থাকেন। এছাড়া দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে নিয়মিত। এগুলো থেকে রেহাই পেতেই এ উদ্যোগ।

তবে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক শিক্ষকরা বলছেন, মন্ত্রী নিজে এ সাক্ষাৎকার নিলেও নানা অনিয়ম বন্ধ করতে পারছেন না। কারণ, তদবিরবাজরা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তদবিরের কাজ সেরে ফেলেছেন।

তবে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, অনিয়ম বন্ধ করতে আমাদের এ উদ্যোগ। এটা কোনো পরীক্ষা না। কেবল অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের পদায়নের জন্য তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের ৬৬টি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এসব পদে আসীন হতে ইচ্ছুক শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নিতেই ২৫ মার্চ মঙ্গলবার ও ২৮ মার্চ শুত্রুবার দুই দফা সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আর দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলবে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ পর্ব। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এ সাক্ষাৎকার সরাসরি নেবেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদায়নের বিষয়টি একটি রুটিন কাজ। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় একজন মন্ত্রীর দু’টি দিন ব্যয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয়টি অনেকটা ‘মশা মারতে কামান দাগানোর মতো’। কেননা, যে কাজটি ফাইল নোটের মাধ্যমে সচরাচর দাফতরিক পর্যায়ে হয়ে থাকে, সেটা নিয়ে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মূল্যবান সময় ব্যয় শুধু অনর্থক নয়, অপ্রয়োজনীয় বটে।

এ ধরনের পদক্ষেপকে প্রশাসনিক ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসন যদি এ বিষয়টি করতে ব্যর্থ হতো, তবেই শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় এই ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল মন্ত্রী নাহিদেরই তত্ত্বাবধানে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে, যেখানে এ কাজটি সম্পূর্ণ করতে সর্বোচ্চ একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে মনোনীত করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি সচিবেরও কাজ নয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি একটি ফিট লিস্ট (উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন) তৈরি করবেন। অথচ সেই কাজে মন্ত্রী নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করতে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ বিসিএস শিক্ষক সমিতির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে যে নীতিমালা করা হয়েছে তাতে পরিষ্কার ভাষায় কর্মকর্তা (অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ) নির্বাচনের কথা বলা আছে। এরপরও এ ধরনের সাক্ষাৎকার গ্রহণের আয়োজন কেবল রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত কর্মঘণ্টার গচ্চাই নয়, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির লক্ষ্য হতে পারে।

বিষয়টি জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে জানান, এটা কোনো পরীক্ষা না। তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা মাত্র। এটিকে নেগেটিভভাবে দেখার কিছু নেই।

তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আইডিয়াগুলো জানার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদায়নের মতো বিষয়ে সাক্ষাৎকার খোদ শিক্ষামন্ত্রীর নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। একজন মন্ত্রী কেন এ কাজটি করবেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মন্ত্রীকে যদি এ কাজ করতে হয় তবে নীতিনির্ধারণী কাজ করবেন কে?

তিনি বলেন, প্রশাসন যদি এ কাজটি করতে ব্যর্থ হয় তবেই সংশ্লিষ্ট সবোচ্চ ব্যক্তি এখানে হাত দিতে পারেন।

তিনি মন্ত্রী থাকার সময় এ ধরনের কোনো সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কী না জানতে চাইলে ওসমান ফারুক জানান, আমি মন্ত্রী থাকাকালে কোনো দিন এ ধরনের সাক্ষাৎকার নেইনি।

বর্তমানে সারাদেশে সরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩০৫টি। এর মধ্যে কলেজ ২৭১টি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি)১৪টি, সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ ১৬টি এবং সরকারি মাদ্রাসা ৪টি। এর মধ্যে ৫৭টি কলেজের অধ্যক্ষ ও ৯টি কলেজের উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অধ্যক্ষ পদের জন ১৭০ জন অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক এবং উপাধ্যক্ষ পদের জন্য ৫৬ জন সহযোগী অধ্যাপক আবেদন করেছেন।

গত ১৬ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ সকাল ও বিকাল দু’শিফটে আবেদন তালিকার ত্রুমিক নং ১ থেকে ১২৫ পর্যন্ত এবং ২৮ মার্চ বিকাল তিনটা থেকে অধ্যক্ষ হতে ইচ্ছুক তালিকার ১২৬ থেকে ১৭০ পর্যন্ত ও উপাধ্যক্ষ হতে ইচ্ছুক বাকি ৫৬ জন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ঢাকা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।

অধ্যক্ষ- উপাধ্যক্ষ হতে ইচ্ছুক কর্মকর্তাদের নামের তালিকা তাদের গ্রেডেশন তালিকার ত্রুমিক নাম্বার যুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ- উপাধ্যক্ষ নিয়োগের নীতিমালা
২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর স্বাক্ষরে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের নীতিমালা জারি হলেও এটি মূলত স্বাক্ষরিত তার আগের বছর ২০ নভেম্বর। দুই পৃষ্ঠার এ নীতিমালায় কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছাড়াও ফিটলিস্ট তৈরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের একাডেমিক যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা, সততা, দেশপ্রেম, সাহস, দক্ষতা অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিবেচনায় নেওয়ার কথা রয়েছে।

তালিকা তৈরির জন্য ৬টি অনুসরণীয় শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভে ইচ্ছুক কর্মকর্তাকে সচিবের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে, এ দুটি পদের জন্য অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকরা আবেদন করতে পারবেন। ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে অধ্যক্ষ এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করা যাবে।

এ দু’টি পদের জন্য নায়েম প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার ওপর কোর্সকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারীর এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) সন্তোজজনক হতে হবে।

পাঁচটি শর্ত পূরণ করলে অধ্যক্ষ আর চারটি শর্ত পূরণ করলে উপাধ্যক্ষ পদে পদায়নের জন্য বিবেচিত হবেন। অধ্যক্ষদের শর্তগুলো হলো ফিটলিস্ট থেকে জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হওয়া, জ্যেষ্ঠতাসহ উচ্চতর ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ, প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া, এলপিআরে যাওয়ার এক বছর আগে যেকোনো কর্মকর্তার অগ্রাধিকার, ফিটলিস্টে অন্তর্ভূক্ত পিএইচডি ডিগ্রিধারীর অগ্রাধিকার এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের নির্বাচিত সিনিয়র কর্মকর্তা না থাকা।

উপাধ্যক্ষ পদায়নে বিবেচনায় সহযোগী অধ্যাপক হলে প্রথমে সি, ডি, ই, ক্যাটাগরি কলেজে পদায়ন, এ ধরনের কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে তার (সহযোগী অধ্যাপক)দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ‘এ’ এবং ‘বি’ মানের কলেজের উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন। একই ভাবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থাকলে কনিষ্ঠরা সেখানে নিয়োগ পাবেন না। এমনকি সেখানে তার জ্যেষ্ঠ কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম