বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বাংলাদেশের কারাগারে দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বন্দী থাকার পর ভারতের বহুল আলোচিত উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে ‘হস্তান্তর’ করেছে বাংলাদেশ। অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘ দিন থেকেই ভারত সরকার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে রাজি করাতে পারছিল না তারা।
কিন্তু ২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডারের অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে নূর হোসেন ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে। দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত এই সেভেন মার্ডারের ঘটনায় চাপে পড়ে সরকার। বিচার কাজ সম্পন্ন করতে নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়ে। তাকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে। দফায় দফায় চিঠি দেয়া হয় ভারত সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ে।
অন্যদিকে ভারত সরকারও অনুপ চেটিয়াকে ফেরত আনতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে তাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় এবং কৌশলগত কারণে অনুপ চেটিয়াকে এতদিন ভারতের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন অসমর্থিত সুত্রে জানা যায়, নূর হোসেনের বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে দেয়ার দর কষাকষি চলতে থাকে উভয় দেশের মধ্যে। চলতি বছরের অক্টোবরে তা এক প্রকার সমঝোতায় পৌঁছায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের খবর জানার পরই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেয়ার আবেদন করে সরকারপক্ষ। মূলত দুই দেশের মধ্যে ‘সমঝোতা’ হওয়ার পরই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারে জন্য আবেদন করে আদালতে। কারণ যেহেতু নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি ছিল। তাই নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে বিচারাধীন মামলা সম্পন্ন না হলে কিংবা সেই দেশের আদালত যদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার না করে তাহলে তাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের বাধা রয়ে যাবে। সেই বাধা দূর করতেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় আটক হয়ে নূর হোসেন বর্তমানে ভারতের চব্বিশ পরগনার দমদম সেন্ট্রাল কারাগারে আটক আছেন।
তবে বন্দি হস্তান্তরের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা কাউকে দেব কাউকে নেব এমন সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে আমাদের নেই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তাদের সঙ্গে আমরা একটা সম্পর্ক রক্ষা করে চলি। ভারতে নূর হোসেনের মামলা যেদিন শেষ হবে এবং ভারত যেদিন আমাদের সেই বিষয়টি জানাবে সেদিনই আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।’
বিদেশে পলাতক বা বন্দি কোনো বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে অনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সুত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার প্রথমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ‘নোট ভারবাল’ পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপরই শুরু হবে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া।