শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > খেলা > অবিশ্বাস্য আফ্রিদিতে পাকিস্তানের বড় জয়

অবিশ্বাস্য আফ্রিদিতে পাকিস্তানের বড় জয়

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ এ কোন আফ্রিদিকে দেখল ক্রিকেট বিশ্ব? কী ব্যাটে, কী বলে সমানতালে আলো ছড়ালেন এই অলরাউন্ডার। সমপ্রতি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়া আফ্রিদি অবিশ্বাস্য, রাজকীয় ও দুর্দান্তভাবে ফিরলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ব্যাট হাতে ৫৫ বলে ৭৬ রান আর ১২ রানে ৭ উইকেট দখল করে ইতিহাস গড়ে দলকে জেতালেন ১২৬ রানের বড় ব্যবধানে। পকিস্তানের কাছে নয়, এক আফ্রিদির কাছেই এদিন হেরেছে ক্যারিবীয়রা। ব্যাট হাতে প্রথমে পাকিস্তানকে মৃত্যুকূপ থেকে টেনে তুলেন আফ্রিদি। দলীয় ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন ক্রিজে আসেন এই সুদর্শন ক্রিকেট নায়ক। ৬টি চার আর ৫টি ছক্কার মাধ্যমে ৭৬ রান করে পাকিস্তান শিবিরে আশার আলো জ্বালেন তিনি। দলীয় ১৬৭ রানে আউট হওয়ার আগে পাকিস্তানকে এনে দেন শক্ত পূঁজি। শেষ পর্যন্ত তার ওই মহাকাব্যিক ইনিংসের ফলে পাকিস্তান ৯ উইকেট সংগ্রহ করে ২২৪ রান। জবাবে ক্যারিবীয়রা অল আউট হয়ে যায় মাত্র ৯৮ রানে। এেেত্রও নায়ক ওই আফ্রিদি। পাকিস্তান ও নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করে একাই ধসিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং সাইড ৯ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ মাত্র ১২ রানে ৭ উইকেট নেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে ভাল বোলিং ফিগার আছে মাত্র একজনের। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস ৮ ওভারে ৩ মেডেনসহ ১৯ রানের বিনিময়ে দখল করেছিলেন ৮ উইকেট। এ জয়ের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তান এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপে ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান দল ইনিংসের শুরুতে চোখে সর্ষে ফুল দেখছিল। তরুণ ফাস্ট বোলার জেসন হোল্ডারের তোপের মুখে গুঁড়িয়ে যায় টপ অর্ডার। হোল্ডার তার প্রথম স্পেলে ৮ ওভারে ৪ মেডেন দিয়ে ৮ রানের বিনিময়ে দখল করেন ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে তিনি ১৩ রানে দখল করেন ৪ উইকেট। তার ধাক্কায় পাকিস্তান ২৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে ৪৭ রানের মধ্যেই পাঁচজন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বড় বিপাকে পড়ে সফরকারী দল। উইকেটের এক প্রান্তে তখন হিমালয়সদৃশ অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। আফ্রিদি তার সঙ্গে জুটি গড়ে খেলতে থাকেন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে। আফ্রিদির ঝড়ের সঙ্গে উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রেখে ধীরে সুস্থে মিসবাহ করেন ১২১ বলে ৫২ রান। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তারা গড়েন ১২০ রানের জুটি। দলীয় ১৬৭ রানে আফ্রিদির ঝড় থামিয়ে দেন কাইরন পোলার্ড। ডিপ মিড উইকেটে আফ্রিদির আকাশছোঁয়া ক্যাচ অবিশ্বাস্যভাবে তালুবন্দি করেন ড্যারেন স্যামি। মিসবাহ ও আফ্রিদি ছাড়া সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে উমর আকমলের ব্যাট থেকে।
বৃষ্টির পূর্বাভাসের স্যাঁতস্যাঁতে কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদেহী পেসার মোহাম্মদ ইরফান পিচ থেকে আদায় করছিলেন সুইং এবং বাউন্স। ইরফানের বলে ওপেনার জনসন চার্লস (০) এবং ড্যারেন ব্র্যাভো (৫) ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। লেগ সাইডে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’জনের ক্যাচ তালুবন্দি করেন উইকেটকিপার উমর আকমল। এরপর সিমন্স ও স্যামুয়েলস ৩৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে কিছুটা বিরতিতে রাখেন পাকিস্তানি বোলারদের।
পাকিস্তানের বোলাররা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের ওপর চাপ বজায় রাখলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। দলের পঞ্চম বোলিং পরিবর্তন হিসেবে আফ্রিদির হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। সর্বশেষ ৬ ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য। ফর্মহীনতার কারণে রাখা হয়নি তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। সবকিছু পেছনে রেখে উইকেট ুধার্ত আফ্রিদি হামলে পড়েন প্রতিপরে ওপর। আর এতেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ক্যারিবীয়ানদের ব্যাটিং লাইন আপ। আফ্রিদির দুরন্ত গতির টপ স্পিন এবং গুগলির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১৪ রানে পতন ঘটে পাঁচটি উইকেটের। কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন ২৫ রান করা মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু আফ্রিদি ছিলেন আরও দুরন্ত সব প্রতিরোধ তার সামনে খড়কুটোর মতো ভেসে যায়। ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেরা বোলিং করে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আজ প্রোভিডেন্সে।
এই ম্যাচে যত সব রেকর্ড
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের পাশাপাশি ৩৫০ উইকেট দখল করার কৃতিত্ব দেখালেন আফ্রিদি। আফ্রিদির ওয়ানডে রান এখন ৭২৭৭ আর উইকেট ৩৫৫টি।
বিশ্বের অষ্টম ও পাকিস্তানের তৃতীয় বোলার হিসেবে (ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস) আফ্রিদি ওয়ানডেতে ৩৫০ উইকেটের বেশি দখল করলেন।
পঞ্চমবারের মতো একই ম্যাচে পাঁচ উইকেটের বেশি ও পঞ্চাশের বেশি রান করলেন আফ্রিদি। এমন কৃতিত্ব একবারের বেশি কোন খেলোয়াড়ের নেই। সর্বশেষ আফ্রিদি এই কাজ করেছিলেন ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপ।ে
ক্রিকেট ইতিহাসে একই ম্যাচে পাঁচ উইকেটের বেশি ও ফিফটি করার ১৬তম ঘটনা এটি।
১২ রানে ৭ উইকেট- আফ্রিদির এই বোলিং ফিগার তার ও পাকিস্তানের সেরা। আর বিশ্ব ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেরা। সেরা ওয়ানডে বোলিং ফিগার শ্রীলঙ্কার পেসার চামিন্দা ভাসের। তিনি ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন। তবে স্পিনার হিসেবে আফ্রিদি সেরা।
অষ্টমবারের মতো ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এক শ’ রানের নিচে অলআউট হলো। আর দেশের মাটিতে দ্বিতীয়বার এমনটি হলো।
জেসন হোল্ডারের ১৩ রানে ৪ উইকেট- চার ম্যাচে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
সংপ্তি স্কোর
পাকিস্তান: ২২৪/৯ (আফ্রিদি ৭৬, মিসবাহ ৫২, উমর ১৯, জামশেদ ৬, শেহজাদ ৫, আজমল ১৫, আসাদ ১১, রোচ ২/৩৮, হোল্ডার ৪/১৩, ব্রাভো ২/৫২, পোলার্ড ১/২৫)
ও.ইন্ডিজ: ৯৮ (স্যামুয়েলস ২৫, সিমন্স ১০, স্যামি ২১, নারাইন ১৪, ইরফান ২/১৭, আফ্রিদি ৭/১২)
ফল: পাকিস্তান ১২৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: শহীদ আফ্রিদি।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১-০।