শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ‘অসাংবিধানিক সরকার যেন না আসতে পারে সতর্ক থাকুন’

‘অসাংবিধানিক সরকার যেন না আসতে পারে সতর্ক থাকুন’

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে যেন আর অসাংবিধানিক সরকার না আসতে পারে এ জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনকল্যাণে তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ল্েয স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা কারও প্রতি কোন ধরনের পপাতমূলক আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না। জেলা প্রশাসকদের সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। গতকাল নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি ১৭ দফা নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আর যেন দেশে কোন অসাংবিধানিক শাসক না আসতে পারে সে জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ১৭ বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মিলিটারি, কোয়াশি মিলিটারি এবং মিলিটারি ব্যাকড সরকারের যাঁতাকলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের দেশে কখনওই মতার হস্তান্তর সুষ্ঠু হয়নি। পঁচাত্তরে হত্যা-ক্যু’র মাধ্যমে মতার পালাবদল শুরু হলো। তারপর এভাবেই চললো। ২০০১ সালেই কেবল শান্তিপূর্ণভাবে মতার হস্তান্তর হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ৫৬৪৪টি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কোন নির্বাচনে হস্তপে করিনি। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ ভুল করতে পারে। বিভ্রান্ত হতে পারে। কাকে ভোট দিতে হবে- তা দিতে দিতে শিখবে। আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। জনগণ ভোট দিলে আছি। না হলে নাই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিভাবে নির্বাচন হয় তা আপনাদের দেখতে হবে। জেলা প্রশাসকদের ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনাদের বহুবিধ জনকল্যাণমুখী কাজের মধ্যে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে ল্য রাখার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখ করা ১৭টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- তৃণমূলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা; সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ; নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং ও বাল্যবিয়ের মতো ‘সামাজিক ব্যাধির’ বিস্তাররোধ; প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণ; জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিার সব স্তরে নারীশিার হার বৃদ্ধি ও শিার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা; প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিা বিস্তার ও মানোন্নয়ন; পণ্যের চাহিদা, মজুত ও সরবরাহ নিয়মিত পর্যবেণ; রোজায় পণ্য সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা কঠোরভাবে দমন; ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় দতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি; কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদপে; খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ; স্থানীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি; প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ে উৎসাহিত করা; পরিবেশ রায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি; দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে নির্দেশনা অনুসরণ এবং সাধারণ মানুষের সুবিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা এ চার বছর কর্মেেত্র যতটা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন, অতীতে তা পারেন নাই। মসজিদ ও মাদরাসাকে ব্যবহার করে কেউ যাতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে না পারে এ জন্য আপনাদের সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া সব জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, এ সম্মেলনে প্রতি বছর কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময়ের যে সুযোগ সৃষ্টি হয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যাগুলো এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের পন্থা ও কৌশল নির্ধারণে এ সম্মেলনে আলাপ-আলোচনা হয়। তিনি বলেন, এটা আমাদের মেয়াদকালের শেষ সম্মেলন। সামনের নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই পরবর্তী সম্মেলন করবে। জনগণ আমাদের ভোট দিলে আবার দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সরকার গত সাড়ে চার বছরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। অনেক েেত্রই আমরা অর্জন করেছি অভূতপূর্ব সাফল্য। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, আগামী নির্বাচনের আগেই সরকারের অবশিষ্ট অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। যুদ্ধাপরাধের ছয়টি মামলার রায় ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাকি রায় পাবো। এ রায় ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়ন হবে। আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ‘উল্লেখযোগ্য সাফল্য’ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মতা বিকেন্দ্রীকরণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার পারলাম না। আগামীতে এলে জেলা ও উপজেলার মতা নির্দিষ্ট করবো। জেলা ও উপজেলার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করবো। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম-ও অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। বিভাগীয় কমিশনারদের পে ঢাকার এএন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী এবং জেলা প্রশাসকদের পে ভোলার খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, যশোরের মোস্তাফিজুর রহমান ও কুমিল্লার তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।