শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > আইডিআরএ রেটিং কমিটির মেয়াদ অনন্তকাল!

আইডিআরএ রেটিং কমিটির মেয়াদ অনন্তকাল!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ২০১৩ সালে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সংগ্রহে ঝুঁকির বিমা মূল্য, প্রিমিয়াম হারসহ অন্যান্য শর্ত ও সুবিধা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি (সিআরসি) গঠন করা হয়। এরইমধ্যে পেরিয়ে গেছে ২ বছরেরও বেশী সময়।

কিন্তু প্রথম কমিটিতে যারা ছিলেন তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে চলছেন। প্রবিধানে স্পষ্ট কিছু না থাকায় কমিটির মেয়াদ যেনো অনন্তকাল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

কোন প্রকার মেয়াদ নির্ধারণ ছাড়াই এ কমিটি গঠন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কমিটিতে আইডিআরএ’র সদস্যর আপত্তির পরও এক বিশেষ ব্যক্তিকে সদস্য করা হয়। এমনকি যোগ্যতা হারিয়েছেন এমন দু’জনকে বহাল তবিয়তে রাখা হয় এই কমিটিতে।

আইডিআরএ সূত্র মতে, কমিটিতে বিআইএ মনোনীত ৪ জন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স থেকে আক্তার আহমেদ, রূপালী থেকে পি কে রায়, ইউনাইটেড থেকে সৈয়দ শাহরিয়ার আহ্সান এবং ক্রিস্টাল থেকে মো. আবদুল লতিফ মিঞা।

এরমধ্যে আক্তার আহমেদ ও আবদুল লতিফ মিঞা সিইও পদে না থেকেও কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এমনকি সিআরসির বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছন। যা প্রবিধানের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন। আকতার আহমেদ রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহীর পদ ছাড়েন ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স থেকে আবদুল লতিফ মিঞা সিইওর পদ ছাড়েন ২০১৪ সালের জুলাই মাসে।

সাধারণ বিমা খাতের এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির এমন চিত্রে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এমনকি খোদ কমিটির এক সদস্যও এ বিষয়ে বাংলানিউজের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম হার নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান সিআরসি’র প্রবিধান গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি। এরপর ওই বছরের মার্চের ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র ৫২তম সমন্বয় সভায় এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই সভায় আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে গ্রিন ডেল্টার বহুল বিতর্কিত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) নাসির এ চৌধুরীকে কমিটিতে রাখার প্রস্তাব করেন চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। তবে গ্রিন ডেল্টার এ বিতর্কিত সিইওকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে আপত্তি জানান আইডিআরএ’র ওই সময়ের সদস্য মো. ফজলুল করিম।

কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, ফজলুল করিম সভায় বলেন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ অনুযায়ী ৬৭ বছর অতিক্রম হলে কেউ বিমা কোম্পানির সিইও হতে পারবেন না। কিন্তু আইডিআরএ’র বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নাসির এ চৌধুরী রিট করে(রিট পিটিশন নম্বর-১৭/২০০৮) সিইও পদ ধরে রাখেন।

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলাকারীকে ও প্রবিধান অমান্য করে সিইও পদ ধরে রাখা ব্যক্তিকে কমিটিতে সাধারণ বিমাকারীর প্রতিনিধি মনোনীত করা হলে একজন মামলাকারীকে পুরস্কৃত করা হবে। এতে বিমা খাতে অশুভ বার্তা প্রেরিত হবে। তাছাড়া বিমাখাতের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এ ধরনের পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত ও আপত্তিকর হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন সদস্যের এমন আপত্তি জানানোর পরও আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে সিআরসির কমিটিতে নাসির এ চৌধুরীকে রাখা হয়।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে নাসির এ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বিষয়ে কে আপত্তি তুলে ছিলো তা আমার জানা নেই। আইডিআরএ আমাকে কমিটিতে রেখেছে সেজন্যই আছি। আমি কোন তদবির করে কমিটির সদস্য হইনি। আপনি আইডিআরএ কে প্রশ্ন করেন কেন আমাকে কমিটিতে রেখেছে।’

কমিটির মেয়াদ না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আইডিআরএ জানে কেন কমিটির কোন মেয়াদ রাখেনি। আইডিআরএকে প্রশ্ন করেন তারা কেনো ঘোড়ার ডিমের কাজ করে।’

এ দিকে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রবিধানে বলা হয়েছে, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে কমিটির প্রধান হবেন। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন চেয়ারম্যানের মনোনীত আইডিআরএ’র দু’জন সদস্য ও সাধারণ বিমা কোম্পানির ৩ জন প্রতিনিধি। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন(বিআইএ) থেকে মনোনীত ৪ জন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে কমিটিতে থাকবেন।

তবে কমিটির মেয়াদ কতো দিন হবে এবং কি কারণে সদস্যপদ শূন্য হবে সে বিষয়ে প্রবিধানে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ একবার কমিটি গঠন করা হলে তা অনন্তকালের জন্য বহাল থাকবে। এমনকি বিমা আইনেও সিআরসি ভেঙে দেয়ার ক্ষমতাও্ আইডিআরএকে দেওয়া হয়নি।

একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ বিমা ব্যবসা একটি বিশেষ গোষ্ঠৗর নিয়ন্ত্রণে রাখাতেই এ ধরনের প্রবিধান করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বিতর্কিত সিইও নাসির এ চৌধুরীকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। আর অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আইনগত বৈধতা দেয়ার বিশেষ কাজে লাগছে প্রবিধানটি।

কমিটির নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ না থাকা এবং সিইও না হয়েও বিআইএ’র প্রতিনিধি হিসেবে দু’জন কমিটির সদস্য থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো।

এর বাইরে কমিটি নিয়ে আর কোন মন্তব্য করেননি তিনি।

আক্তার আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দেশের বাইরে আছেন জানিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। অপর সদস্য আবদুল লতিফ মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের একটি কমিটির নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকা উচিত ছিলো।

যেমন একজন দুই মেয়াদের বেশি সদস্য থাকতে পারবেন না এ ধরনের বিধান করা যেতে পারে। যাতে পর্যয়ক্রমে প্রতিটি কোম্পানি থেকে সদস্য নির্বাচিত হতে পারে। কমিটির মেয়াদ না থাকা বিস্ময়কর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিইও পদে না থাকার পরও কমিটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আইডিআরএ থেকেই আমাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

এদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের মনোনীত আর এক সদস্য প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের সিইও মোহাম্মদী খানমকে কমিটিতে রাখা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। যে সময় তাকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়, সে সময় তিনি এডিশনাল এমডি ছিলেন।

সিইও পদের কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে একজন এডিশনাল এমডিকে কমিটিতে রাখার বিষয়টি দৃষ্টিকটু বলেও বাংলানিউজের কাছে মন্তব্য করেন একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানির সিইও। তারা বলেন, চেয়ারম্যানের এ ধরনের সিদ্ধান্ত তার খামখেয়ালিপনার বহি:প্রকাশ। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম