শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > আগুন জ্বলছে না ইটভাটায়, দুশ্চিন্তায় পুড়ছেন মালিকরা !

আগুন জ্বলছে না ইটভাটায়, দুশ্চিন্তায় পুড়ছেন মালিকরা !

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
রাজশাহী: মৌসুমের এক-তৃতীয়াংশ সময় পেরিয়ে গেলেও কেবলমাত্র কয়লার অভাবে আগুন জ্বলছে না রাজশাহীর ১২৩টি ইটভাটায়। স্মরণকালের ভয়াবহ কয়লা সঙ্কটে ভুগছে এ অঞ্চলের ইটভাটাগুলো। তাই সব রকম প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভরা মৌসুমে ইটভাটাগুলোয় আগুন দেওয়া সম্ভব হয়নি এবার।

কয়লা আমদানি ও সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভাটা মালিকরা ইট পোড়ানো নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কয়লার অভাবে ইট পোড়াতে না পারায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। আর উৎপাদন বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছে ইটের। আগে ১ হাজার ইট কেনার জন্য ৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও এখন লাগছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এক হাজার ইটে আড়াই হাজার টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

রাজশাহী জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের নির্দিষ্ট এ মৌসুমে প্রতিটি ভাটায় কমপক্ষে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়াতে আগে কাঠ ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে সে সুযোগ আর নেই।

সরকারের নির্দেশনায় জেলার ১৫৭টির মধ্যে পুরোপুরি সচল থাকা ১২৩টি ভাটাকে এরই মধ্যে হাওয়া ভাটায় (কয়লা জ্বালানি) উন্নীত করা হয়েছে। ফলে ইচ্ছা করলেও এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্ভব নয়। প্রতি ভাটায় এক মৌসুমে কয়লা লাগে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টন।

কিন্তু নভেম্বর মাস থেকে মৌসুম শুরু হলেও কয়লার আমদানি ও সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইট পোড়ানো যাচ্ছে না। অথচ রাজশাহী জেলার ১২৩টি ইটভাটায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। জ্বালানির অভাবে ইটভাটা বন্ধ হলে এ সব শ্রমিকরা বেকার হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি শাজাহান আলী জানান, ইটভাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ভাটা মালিকদের জন্য কয়লা সরবরাহ করা হয় না। এর উপর বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলনকৃত কয়লার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় ভারতের পরিবেশবিদরা উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে।

শাজাহান আলী বলেন, কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে, তা নিশ্চিত নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ইটভাটার ব্যবসায় চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। এতে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। অপরদিকে রাজশাহীর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চরমভাবে ব্যাহত হবে। তাই আগামী রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সরকারের কাছে কয়লা আমদানির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এতেও কাজ না হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, সেপ্টেম্বরে ইটের ফর্মা তৈরি করা হয়। নভেম্বরে ভাটায় আগুন দেওয়া হয়। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই পাঁচ মাসই ইটভাটার ভরা মৌসুম। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়েও ভাটায় আগুন দেওয়া সম্ভব হয় নি। জেলার পবাসহ নয় উপজেলার সাধারণ ভাটাগুলোর মধ্যে ১০টিতে বাধ্য হয়েই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তবে ওই ভাটাগুলোও কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। আর তা হলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজও বন্ধ হবে, শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীসহ গোটা বাংলাদেশে মোট ৯ হাজার ব্রিকফিল্ড (ইটভাটা) রয়েছে। প্রতি মৌসুমে একটি ব্রিকফিল্ড থেকে সরকার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ভ্যাট ও ৪৫ হাজার টাকা করে ইনকাম ট্যাক্স আদায় করে। পরিবেশ অধিদফতরকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। আর ইউনিয়ন কাউন্সিল পায় ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন যা-ই হোক ইটভাটায় আগুন জ্বললেই এ টাকা দিতে হয়। তবে কয়লা আমদানি না করলে চলতি বছর এ বাবদ মোটা অংকের টাকা সরকার হারাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার তেবাড়িয়ার এসআরবি ইটভাটার মালিক আবদুস সাত্তার বলেন, অন্য বছরের মত এবারও শ্রমিকরা ভাটার কাজ শুরু করেছেন। ইট পোড়ানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। কিন্তু কয়লার অভাবে তিনি ভাটায় এখনও আগুন দিতে পারেন নি। এখন প্রায় ২৫০ জন শ্রমিককে তার প্রতিদিন খরচ দিতে হচ্ছে। তার মত রাজশাহীর অন্যান্য ভাটা মালিকরাও কয়লার জন্য বসে আছেন। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে কয়লা না পেলে এবার আর ভাটা চালাবেন না বলে জানান তিনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম