বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > আত্মবিশ্বাসী মহানগর সামর্থ্য প্রমাণের অপেক্ষায়

আত্মবিশ্বাসী মহানগর সামর্থ্য প্রমাণের অপেক্ষায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য এক পা বাড়িয়ে আছে বিএনপি। যে কোনো সময় কর্মসূচি ঘোষণা করবেন হাইকমান্ড। এই আন্দোলনে সেনাপতির ভূমিকা পালন করতে হবে নতুন নেতৃত্বের অধীন সেই পুরনো ব্যর্থ খেতাব পাওয়া নগর বিএনপিকেই। নগর নেতারা বলছেন, তারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত, শুধু কর্মসূচি ঘোষণার অপেক্ষা। এবার কর্মসূচি সফল করেই তারা ঘরে ফিরবেন। এবার তারা সামর্থ্য ও কৃতিত্ব প্রমাণের অপেক্ষায় আছে।

তবে নগর বিএনপির অভ্যন্তরীণ চিত্র একটু হতাশাজনক। নগরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ম্যাডাম বলছেন, সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেবেন, প্রস্তুতি নিন। নেতারা বলছেন, প্রস্তুতি নিন। কিন্তু প্রস্তুতি কীভাবে নেবো। আমাদের নামতে বলে নেতাদের আর পাওয়া যায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন হলে আন্দোলন সফল হবে। মামলা-হামলায় আমরা বিপর্যস্ত। বাসায় থাকতে পারি না, কেউ খোঁজ নেয় না। তার ওপর এখন পর্যন্ত থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গুলো গঠন করা শেষ হয়নি। অনেক স্থানে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত পদ না দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। অনেক স্থানে এর প্রতিবাদও হয়েছে।

তবে এর মধ্যেও তৃণমূল আত্মবিশ্বাসী। এবার তারা অবশ্যই সফল হবেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, সাংগঠনিক অবস্থার যাইহোক তারা প্রস্তুত। যেকোনো সময় আন্দোলনের ডাক দিলে তা সফলের জন্য কাজ করবেন।

গত আন্দোলনে ‘ব্যর্থ’ খেতাব পায় ঢাকা মহানগর বিএনপি। এর জেরে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনেন চেয়ারপারসন। গত জুলাই মাসে মির্জা আব্বাস ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি। নগরের নতুন কমিটি গঠনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটি গঠনের পর চার মাস অতিবাহিত হলেও রাজধানীর ৪৯টি থানা ও প্রায় ১০০টি ওয়ার্ড কমিটির অর্ধেক কমিটি গঠন করতে পারেনি মহানগর। যদিও নগর বিএনপির কাণ্ডারি মির্জা আব্বাস একাধিকবার বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছিলেন, ম্যাডামের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই সব কমিটি গঠন করা হবে। অবশ্য সেই সময় শেষ হলে এর দায় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে বলেছেন, সরকার আমাদেরকে সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে বাধা দিচ্ছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে সব কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়।

তবে এর জন্য নগর নেতাদের গ্রুপিংকেই দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় আন্দোলনের জন্য নগর বিএনপি কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় দেখা যাচ্ছে। চলছে বিতর্ক।

জানা গেছে, মহানগর কমিটি ঘোষণা পরপরই থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫টি সাব-কমিটি গঠন করেন নেতারা। কিন্তু এসব কমিটির কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটি গঠনে মহানগর বিএনপির ১৫ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা এলাকায় না গিয়ে নিজ কার্যালয়, বাসা কিংবা কোনো রেস্টুরেন্ট কমিটি গঠনের জন্য নির্দিষ্ট নেতাকর্মীদের ডাকছেন। ফলে সংগঠনের অন্য নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। ফলে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। কমিটি গঠন নিয়ে এলাকাভিত্তিক নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং বৃদ্ধির ফলে সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

কমিটি গঠনের বিষয়ে থানার এক প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যার যার এলাকায় সে সে বাঘ। কমিটি গঠনের দায়িত্ব যাকেই দেয়া হোক না কেন, এলাকার নেতাদের সাথে আলাপ করে কমিটি না দিলে সেই কমিটি টিকবে না। আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হবে। দলের ক্ষতি হবে।’

তবে নগর বিএনপি নেতাদের দাবি, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। অর্ধেকের বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। কিছু কমিটি নিয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করে অচিরেই কমিটি গঠন করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের একাধীক শীর্ষ নেতা জানান, অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ড কমিটি এবং এক তৃতীয়াংশ থানা কমিটি গঠন করা শেষ। বাকিগুলোর কাজ চলছে। নাম প্রকাশ করা হলে আন্দোলন দমাতে সরকার নেতাদের গ্রেপ্তার করবে তাই- কৌশলগত কারণে এসব কমিটি প্রকাশ করা হবে না।

এসব বিষয়ে নগর নেতারা বলেছেন, বিএনপি বড় সংগঠন। নেতৃত্বে পরিবর্তন এলে দ্বন্দ্ব কোন্দল সংর্ঘষ কিছুটা হবেই। এসবই গণতন্ত্রের অংশ। ম্যাডাম আন্দোলনের ডাক দিলেই সবাই এক প্লাটফর্মে আসবে এবং আন্দোলন সফলে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

কমিটি গঠন ও দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো দ্বন্দ্ব গ্রুপিং নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে।’

পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। যোগ্য পরীক্ষিতদেরকেই নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। অনেকেই পদ চায়। সবাইকে তো পদ দেয়া সম্ভব নয়। পদ না পেয়ে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানা বিএনপি সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমার থানার ওয়ার্ড কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।’

নতুন কমিটি ও আন্দোলনে প্রস্তুতির বিষয়ে পল্টন থানা বিএনপি নেতা ফিরোজ আলম বলেন, ’মহানগর বিএনপির কার্যক্রম চলছে। খুব সংক্ষপ্তি সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন হবে বলে আশা করছি। আগামী আন্দোলনকে বেগমান করার জন্য রাজপথের নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করে দায়িত্ব দেয়া হলে আমরা সফল হবোই।’

কোনো দ্বন্দ্ব কোন্দলের অবিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হাবিব উন নবী খান সোহেল বাংলামেইলকে বলেন, ‘আব্বাস ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ করছেন। বেশ কিছু কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই সকল কমিটি গঠন করা হবে। যোগ্য ও পরীক্ষিতদেরই কমিটিতে স্থান দেয়া হবে।’

কমিটি গঠনে দীর্ঘ সূত্রিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর ৪৯টি থানা ও প্রায় ১০০টি ওয়ার্ড । এতগুলো কমিটি করতে সময়তো লাগবেই।’ আন্দোলনে প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, ’জনদাবির আন্দোলনের জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা ম্যাডামের ডাকের অপেক্ষায় আছি। জনগণকে সাথে নিয়ে এ আন্দোলন সফল করেই নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবো।’ বাংলামেইল