শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > আন্তর্জাতিক > ‘আফ্রিকার মক্কা’ নামে খ্যাত ইথিওপিয়ার হারার শহর

‘আফ্রিকার মক্কা’ নামে খ্যাত ইথিওপিয়ার হারার শহর

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥

মুজতাহিদ ফারুকী: তখন হারার শহরে রাত নেমে এসেছে এবং আমি, খুব বীভৎস না হলেও, রীতিমত শ্বাসরুদ্ধকর একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। এক তরুণ একটি দন্ডের মাথায় মাংস ঝুলিয়ে সেটি মুখে করে কয়েকটি হায়েনাকে খাওয়ানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। হায়েনাগুলি অন্ধকার থেকে এগিয়ে আসছে। তারা যখন পায়ে পায়ে আলোর কাছে এগিয়ে আসে তখন তাদের চোখ জ্বলজ্বল করতে থাকে।

এটি এমন এক আচরণ যা দেখে উপস্থিত পর্যটকদের চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে।

বিনিয়াম আশেনাফি নামের ওই তরুণ বলেন, “আমি এটা করি কারণ আমি প্রাণিদের ভালোবাসি।” ৩২ বছরের এই তরুণ হলো তার মতো আরও অনেক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীর একজন যারা প্রতিদিন ওই ভাগাড়ের প্রাণিদের খাবার দেয়।

আশেনাফি বলেন, “আমরা ওদের হায়েনা বলি না। আমরা ওদের বলি তরুণ পাদ্রী। প্রত্যেক আরবি নববর্ষে আমরা শহরের চার কোণে ওদের জন্য পরিজ ভোজের আয়োজন করি।
“যদি ওরা এগিয়ে আসে এবং আমাদের দেয়া খাবার গ্রহণ করে তার অর্থ হলো আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে। যদি তারা খাবার প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সেটা একটি খারাপ লক্ষণ।”
উল্লেখ্য, বহু শতাব্দী ধরে হারারের মানুষ হিংস্র হায়েনাদের সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে।

এমনকি ১৩’শ ও ১৬’শ শতাব্দীতে তৈরি শহরের সুরক্ষিত দেয়ালগুলোতেও ছোট ছোট ফাঁক রাখা হয়েছে যাতে রাতের বেলা হায়েনারা শহরে ঢুকতে পারে। হায়েনাদের প্রতিদিন খাবার দেয়ার ঘটনা হলো শহরটির অভিনব ঐতিহ্যের একটি দৃষ্টান্ত।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ আবদুস সামাদ ইদ্রিস জানান, “এটি হলো বিশ্বের প্রাচীনতম এক সভ্যতা। এখানে যেসব মসজিদ দেখবেন সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি তৈরি করা হয়েছিলো সেই ১০ম শতাব্দীতে।”

হারার শহরের অনেক নাম রয়েছে। যেমন, ‘দরবেশদের শহর’ বা ‘জীবন্ত জাদুঘর’। এটিকে ‘শান্তির শহর’ও বলা হয়। শহরটিতে শত শত মসজিদ রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)এর অনুসারীরা ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মক্কা শহরে বিধর্মীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসেন এবং বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার অংশ আক্সুম রাজতন্ত্রে এসে নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেন। শহরটিকে অনেকে ‘আফ্রিকার মক্কা’ হিসাবেও উল্লেখ করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন যে, হারার-এর বাসিন্দারা মদীনাবাসীর ইসলাম গ্রহণেরও আট বছর আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

ইতিহাসবিদ আবদুস সামাদ জানান, “হারার ও হারলার বাসিন্দারা সাত হাজার বছরের প্রাচীন অধিবাসী। তবে হারার শহরটি তৈরি হয়েছিলো আজ থেকে এক হাজার ১০ বছর আগে।”
১৮৮৭ সালে ইথিওপিয়ার অংশ হওয়ার আগে ১৬’শ শতকে শহরটি ৪০ বছর ধরে ছিলো হারারি রাজতন্ত্রের রাজধানী।

বর্তমানে হারার হলো ইথিওপিয়ার ক্ষুদ্রতম রাজ্য ‘হারারি জনগণের জাতীয় আঞ্চলিক রাষ্ট্রের’ রাজধানী। ২০০৬ সালে ইউনেস্কো আফ্রিকান ও ইসলামি সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এখানকার অভিনব ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের স্থাপত্য, পারিবারিক বন্ধন, বস্ত্রশিল্প এবং সমৃদ্ধ ইসলামি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য হারারকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করে।

সূত্র: বিবিসি