শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > আমদানি কৃত বিদ্যুত প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা

আমদানি কৃত বিদ্যুত প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হলো ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি। শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশের উপকেন্দ্রে কন্ট্রোলরুমের সুইচ অন করে বিদ্যুত আমদানির সূচনা হলো। দণি এশিয়ার মধ্যে এই প্রথম প্রতিবেশী দুই দেশ বিদ্যুত বিনিময়ের জন্য গ্রিড-সংযুক্ত হলো। এই লাইন দিয়ে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হলেও আপাতত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের ঘাটতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারত সফরকালে সময় বিদ্যুত খাতে সহযোগিতার জন্য দুদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। পরবর্তীতে ওই সমঝোতার আলোকে পিডিবির সঙ্গে ভারতের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) বিদ্যুত বিক্রয় চুক্তি করে। এনটিপিসি ভারতের সরকারী খাত থেকে বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করবে। অন্যদিকে পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন (পিটিসি) বেসরকারী খাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করবে। পিটিসির দর প্রস্তাবটি সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যেই অনুমোদন করেছে। পিটিসির সঙ্গে ক্রয় চুক্তির বিষয়টি অবশ্য এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রিড লাইন পুরোপুরি ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই চুক্তি করা হবে।

দেশে এখন ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান হলে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এর সঙ্গে ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হলে চাহিদার সমান বিদ্যুত উৎপাদন হবে। চাহিদা ও সরবরাহ সমান হলে দেশে কোন ঘাটতি থাকে না। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ভারত থেকে পুরো ৫০০ মেগাওয়াট আমদানি শুরু হলে রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রর ওপর নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমে আসবে। ভারত থেকে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত পাওয়া গেলেও রেন্টাল কেন্দ্র থেকে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত নেয়া সম্ভব হয় না। কাজেই ভারতীয় বিদ্যুত বাংলাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।

বিদ্যুত বিভাগ কর্মকর্তারা জানান, যদিও বিল না আসা পর্যন্ত সরকারী খাতের বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দর নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তার পরও ভারতের বিদ্যুতের দর পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে হুইলিং চার্জসহ প্রতিইউনিটের দাম পাঁচ টাকার মধ্যে থাকবে। দেশের সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের গড় উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় ওই দাম কিছুটা বেশি। তবে দেশের গড় বিদ্যুত উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় তা কম হবে। অন্যদিকে বেসরকারী খাত থেকে আমদানির জন্য পিটিসি ছয় টাকা ৩৪ পয়সা দর প্রস্তাব করেছে। দেশে এখন কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে ১৪ থেকে ১৮ টাকায় প্রতিইউনিট বিদ্যুত কেনা হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী উভয় বিদ্যুত বেশ সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভেড়ামারায় বিদ্যুত সঞ্চালন শুরুর সময় পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী আলমগীর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক কাজী ইশতিয়াক হাসান পিজিসিবির পরামর্শক টিকে রায়, ও পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার ডিজিএম কলিম আফসার উপস্থিত ছিলেন।

পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ সরবরাহের পরিমাণ ১৭৫ থেকে ২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু পরীামূলক সঞ্চালন তাই বিদ্যুত আসবে, বন্ধ হবে-আবার চালু হবে, এভাবেই লাইন টেস্ট চলছে। লাইন টেস্ট সম্পন্ন হলে বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু হবে।

কাজী ইশতিয়াক হাসান জানান, আগামী ৫ অক্টোবর বাণিজ্যিকভিত্তিতে বিদ্যুত সঞ্চালনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গ্রিড উপকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দিল্লী থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুত আমদানির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

সূত্র জানায়, পিডিবি সম্প্রতি ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার লিমিটেডের (এনটিপিসি) সঙ্গে পরীামূলক সঞ্চালনের জন্য চুক্তি করেছে। এ জন্য ভারতকে তিন কোটি ৫৯ লাখ টাকা দিতে হবে। সূত্র আরও জানায়, ভারতের মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ও বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সাবস্টেশন নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের গ্রিড লাইন যুক্ত হয়েছে। তিন মাস বাণিজ্যিক সরবরাহের জন্য প্রতিদিন ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাবদ প্রতিমাসে ৫২ কোটি রুপীর এলসি খুলেছে বাংলাদেশ। মাসের বিল এলেই তা পরিশোধ করতে হবে।

বিদ্যুত আমদানির জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৯৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং দুটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে সে দেশের সীমান্ত প্রান্ত পর্যন্ত ১৯৫টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মোট ৭০ কিলোমিটার লম্বা এই সঞ্চালন লাইন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভূখ-ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা স্টেশন থেকে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রকটনগর সীমান্ত পর্যন্ত ৭৮টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যা ২৭ কিলোমিটার লম্বা বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন।

প্রসঙ্গত ভারত এর আগে নেপালের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করলেও দুই দেশের মধ্যে কোন গ্রিড সংযোগ নেই। নেপাল এবং বাংলাদেশের বাইরে পাকিস্তান ভারত থেকে বিদ্যুত কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটি ভারত থেকে দৈনিক অন্তত ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

উল্লেখ্য, সারাদেশে স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদনমতা নয় হাজার ১৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু নানা কারণে উৎপাদন মতা কমে যাওয়ায় নিট উৎপাদন মতা হচ্ছে আট হাজার ৫৩৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক ব্যবহার এবং সঞ্চালন তি বাদ দিয়ে পিক আওয়ারে সরবরাহ করা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট। দেশের মোট বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে এখন এক হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটি আর ৩৭৩ মেগাওয়াট বন্ধ আছে জ্বালানি সঙ্কটে। তবে এর সঙ্গে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে। পর্যবেকরা বলছেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৪৫০ মেগাওয়াট মতার বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। কাজেই কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে জাতীয় গ্রিডে এক সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হয়েছে। এবারই এক সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হলো। ওই বিবেচনায় এক সঙ্গে জাতীয় গ্রিডে এটি বিদ্যুতের সর্বোচ্চ সংযোজন।