শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > রাজনীতি > আমি আবার কী অপরাধ করলাম: পাপিয়া

আমি আবার কী অপরাধ করলাম: পাপিয়া

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
রাজধানীর হোটেলগুলোতে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্লাকমেইলিং, তদবির বাণিজ্য, অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া এখন ১৫ দিনের পুলিশি রিমান্ডে। তার রিমান্ডের দুদিন শেষ হয়েছে। রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে অবৈধ কর্মকাণ্ডে দাবিয়ে বেড়ানো এই নেত্রী। এসব তথ্যের সূত্র ধরে পাপিয়ার সহযোগী ও তার প্রশয়দাতাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছে আইনশৃংখলাবাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের এই নেত্রী গ্রেফতারের পর থেকে বিমর্ষ হলেও তার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে না। গ্রেফতারের পর র‌্যাব হেফাজতে এবং পরবর্তীতে আদালতের কাঠগড়ায় তাকে বিমর্ষ দেখা গেছে। এত অপরাধের পরও আদালতের শুনানির ফাঁকে পাপিয়ার প্রশ্ন ছিল, ‘আমি আবার কী অপরাধ করলাম!

সোমবার বেলা ৩টা ২৯ মিনিটে প্রথমে পুরুষ আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। নারী পুলিশ সদস্যরা পাপিয়াসহ দুই নারী আসামিকে কাঠগড়ায় না নিয়ে আইনজীবীদের চেয়ারে বসানোর চেষ্টা করেন। তবে উপস্থিত আইনজীবীদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত অপরাধ জগতের এই রানিকে কাঠগড়ায় তোলা হয়।

কালো স্কার্ফ ও লেস দেয়া লিলেনের সালোয়ার-কামিজ পরা পাপিয়া কাঠগড়ায় উঠে শুরুতে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু সময় পর তাকে মুখ তুলে দুপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেন। এ সময় তাকে খুবই বিমর্ষ দেখা যায়। আইনজীবীদের কথা বলার সময় মাঝে কয়েকবার স্বামী সুমনের সঙ্গেও আলাপ করেন পাপিয়া। তবে সুমন এবং তাদের দুই সহযোগীকে এ সময় নির্বিকার দেখা গেছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ এ সময় আদালতকে বলেন, চাকরি দেয়ার নাম করে পাপিয়া বিভিন্ন লোককে ব্ল্যাকমেইল করত, নারীদের বিনোদনের কাজে লাগাত। বিত্তবানদের মনোরঞ্জনের জন্য বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে যেত আমন্ত্রণ করে। পরে সেসব নারীর সঙ্গে তাদের ছবি ও ভিডিও রেখে ব্ল্যাকমেইল, হয়রানি করত, অর্থ আদায় করত। এসব অপরাধের মূলহোতা পাপিয়া।

এর পর একজন আইনজীবী কাঠগড়ার সামনে এসে পাপিয়া এবং তার স্বামীকে বলেন, ‘আপনারা যদি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, তা হলে পুলিশের শেখানো কোনো কিছু বলবেন না।’

এ সময় পাপিয়াকে হতাশা প্রকাশ করে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কী অপরাধ করলাম!’

অন্য দুই মামলায় শুনানির জন্য নতুন হাকিম এজলাসে এসে আসন নিলে কিছুটা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতে দেখা যায় পাপিয়াকে।

আদালত চলাকালে বিচারক পাপিয়াসহ অন্য আসামিদের কিছু জিজ্ঞাসা করেননি, তারা নিজে থেকে কোনো কথা বলেননি।

পাপিয়ার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ না করলেও এতটুকু বুঝতে পেরেছেন ইমেজে যে কালিমা পড়েছে তাতে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই তো বিচারক পরিবর্তনের ফাঁকে এক আইনজীবীকে পাপিয়া বলেন, ‘আমার লাইফটাই শেষ হয়ে গেল!’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ (২৮) চারজনকে আটক করে র্যা ব-১। পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

এদিকে গ্রেফতারের পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় বাইজি সর্দারনী বেশে পাপিয়ার একটি ভিডিও। যেটি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে সর্বত্র।

ইতোমধ্যে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বের হতে শুরু করেছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে পাপিয়া এবং তার স্বামী গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তারা। অপরাধে জড়িয়ে পড়া যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে ইতিমধ্যে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

র্যা ব জানান, অনৈতিক কর্মের ভিডিও ধারণ করে ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। এ দুই উপায়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অস্ত্র ও মাদক মজুদের পাশাপাশি কিউঅ্যান্ডসি নামে ক্যাডার বাহিনীও গঠন করেছেন।

তিনি জানান, পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পদে মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন র্যা বের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন।

শুধু তাই নয়, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স দেয়া, গ্যাসলাইন সংযোগের নামেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেখেছেন এই দম্পতি।

এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে। র্যা বের দাবি, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী রেলওয়ে ও পুলিশে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এর বাইরে নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তারা।