স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে মতাসীন দল। দলে তার অবস্থান নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এক প তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ তুলছে। তারা বলছেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি দলের জন্য তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়ার পে মত তাদের। তবে ভাল ইমেজের এ নেতার পরে নেতাকর্মীরা চান দলে থেকে তিনি যেন নেতৃত্ব দেন। আশরাফকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের এমন মিশ্র অবস্থান তার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই। অভিযোগ থাকলেও সৈয়দ আশরাফ দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দলীয় সভানেত্রীর বিশ্বস্ত হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তবে দলীয় ঝামেলা এড়াতে আশরাফ অনেকটাই গা বাঁচিয়ে চলেন। এ কারণে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ কম। সর্বশেষ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধায় তিনি নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন। আশরাফ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেয়ারই বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তার আপত্তি আমলে না নিয়ে দলের হাইকমান্ড নির্বাচন দেয়ার পে মত দেন। এ কারণেই তিনি নির্বাচনের সময় অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। পাঁচ সিটিতেই হারের পর আশরাফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নেতারা। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন দলের নেতারা। এ অভিযোগের কারণেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বলে সংবাদ প্রকাশ হয়। গত বৃহস্পতিবার তিনি দলীয় সভানেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলেও আলোচনা রয়েছে। তবে গতকাল আশরাফ পদত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ সংক্রান্ত সংবাদ ভিত্তিহীন। গতকাল জাতীয় সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার পদত্যাগ সংক্রান্ত সে খবর গণমাধ্যমে এসেছে তা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য একটি গোষ্ঠী এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, পদত্যাগের খবর আমার কাছে নেই। আপনাদের কাছে থাকলে বলেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানান, দলের ঐক্যে ফাটল ও বিভ্রান্তি ছড়াতে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে তিনি কোন পদত্যাগপত্র দেননি। দলের ভেতর ও বাইরের একটি অংশ কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়েছে। তবে কারা অপপ্রচার চালিয়েছে এ বিষয়ে দলের নেতাদের কারও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলীয় সূত্র দাবি করেছে, দলের কয়েকজন নেতাও সৈয়দ আশরাফকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প।ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। এছাড়া এর আগেও তার বিরুদ্ধে নেতারা দলীয় ফোরামে অভিযোগ তুলেন। এমন টানাপড়েনের মধ্যেই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল নতুন করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। ওই নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার দিকটি বড় দাগে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর দলের এই বেহাল অবস্থার পেছনে সাধারণ সম্পাদকের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন। দলের নেতাকর্মীদের দাবি সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য এখনই সাংগঠনিক কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত। কিন্তু এ পর্যন্ত দলীয় সাধারণ সম্পাদকের প থেকে এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন। সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে ইতিমধ্যে নেতাদের তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গাজীপুরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখভালের। এ বিষয়ে গতকাল জানতে চাইলে নাসিম জানান, সাংগঠনিক কাজেই তিনি গাজীপুরে অবস্থান করছেন। নির্বাচনের পর সাংগঠনিক যে দুর্বলতা ধরা পড়েছে তা কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে এ নেতা জানান।
এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করতে চাইলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এই মুহূর্তে তার পদত্যাগ মেনে নেবেন না। ইতিমধ্যে তার এই মনোভাব তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়ার জন্য তিনি তাকে নির্দেশ দেন। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সময় সৈয়দ আশরাফ দলের জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪শে জুলাইয়ের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ওই কাউন্সিলে প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়ে অপোকৃত তরুণ নেতৃত্ব তুলে আনা হয়। ওই চমক কমিটি গঠনের পর দলের প থেকে বলা হয়েছিল, নতুন নেতৃত্ব দলকে সামনে এগিয়ে নেয়ার েেত্র ভূমিকা রাখবে। তবে পূর্ণ মেয়াদ শেষে ওই কমিটি তেমন কোন চমকই দেখাতে পারেনি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলেও নেতৃত্বে বহাল থাকেন সৈয়দ আশরাফ। বড় ধরনের রদবদল না হলেও কিছুটা পরিবর্তন আসে কমিটিতে। দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেও সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ফোন করলে তাকে পাওয়া যায় না। এমনকি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ফোন করে তাকে পান না। রাজনৈতিক ইস্যুতেও তিনি অনেক সময় নিশ্চুপ থাকেন। এ কারণে প্রায়ই দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বা প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম দলীয় বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।