শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ইফতারিসহ সকল খাদ্যের বিশুদ্ধতার নিশ্চিত করার দাবি

ইফতারিসহ সকল খাদ্যের বিশুদ্ধতার নিশ্চিত করার দাবি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা : আসছে পবিত্র রমজান মাস। প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই রমজানে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ যান ও কলকারখানার পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়,একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পঁচা-বাসীসহ বিভিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এতে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টিসহ গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ইফতারিসহ সকল খাদ্যদ্রব্যের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ এর যৌথ উদ্যোগে এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে শুক্রবার, সকাল ১১টায় চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে উক্ত দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধন থেকে জানানো হয়-প্রতিটি ভোক্তার নিরাপদ ও ভোজালমুক্ত খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ- মাংসসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও ভোক্তা অধিকার কর্মীদের বক্তব্যে এবং সাম্প্র্রতিক সময়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) -এর ঢাকার বাজারে মৌসুমী ফলে ফরমালিন পরীক্ষার ফলাফলে বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা রীতিমত আতঙ্কজনক।
নানা ধরনের বিষাক্ত ও নিম্নমানের খাদ্যের কারণে আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর অসুখের ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের মধ্যে প্যাকেটজাত খাদ্য ও পানীয় যেমন রয়েছে, তেমনি আছে শাক সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি। ভেজাল খাদ্যে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। কিছু খাবার এমনই বিষাক্ত যে তা ডিএনএকে পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। উৎপাদিত, প্যাকেটকৃত, প্রক্রিয়াজাত তরল ও কঠিন খাদ্যের অধিকাংশই বিষ ও ভেজালে ভরপুর। ফল কৃত্তিম উপায়ে পাঁকাতে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামকসহ বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক এবং তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে । মিষ্টিতে কৃত্রিম মিষ্টিদায়ক, আলকাতরা এবং কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। মাছে ফরমালিন, শাকসবজিতে কীটনাশক ও ফরমালিন, শুটকিতে ডিডিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন ফলের রস, স্ন্যাকফুড, জ্যাম-জেলী, আচার-চাটনীতে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে এসবের প্রভাবে গলায় ক্যান্সার, রক্ত ক্যান্সার, বাল্য হাঁপানি এবং চর্ম রোগ হয়। ফরমালিনযুক্ত খাবার মানুষের শরীরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এতে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, অস্থিমজ্জা জমে যায়। এর ফলে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। গর্ভবতী মহিলারা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি ও লিভার পচে যাওয়া, রক্ত সরবরাহ বিঘিœত হওয়া, অন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, নির্বাহী সদস্য এ কে এম সেরাজুল ইসলাম, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসেন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম, হাজারীবাগের সাধারণ সম্পাদক জি এম রুস্তম খান প্রমুখ।

এছাড়াও পুরান ঢাকার বিভিন্ন সংগঠনের (ইসলামবাগ অনির্বাণ যুব সমাজ কল্যাণ সংঘ, বড় কাটরা সমাজ কল্যাণ পরিষদ, কামালবাগ যুব সমাজ কল্যাণ সংসদ, মুসলিম যুব সংঘ, চাম্পাতলী প্রতিভা সংঘ, মিট এন্ড ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বাংলাদেশ মানবাধিকার ও নির্যাতন দমন সোসাইটি, ঢাকা ওয়েল ফেয়ার ক্লাব) নেতৃবৃন্দসহ শত শত মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।

বক্তারা জানান, রমজানে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়। এছাড়াও একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। এসব খাবার ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টিসহ গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারের ভেজাল বিরোধী অভিযান সত্বেও বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য ব্যবসায়ীদের উপর কোন প্রভাব পড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিনত হব । বিষাক্ত খাদ্য নিরব ঘাতক হিসাবে কাজ করছে। ভ্রাম্যমান আদালত গণহত্যামূলক এ অপরাধে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করার ফলে তাদের তান্ডবতা বেড়েই চলছে।