বুধবার , ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > ইয়াবা সিন্ডিকেট বেপরোয়া

ইয়াবা সিন্ডিকেট বেপরোয়া

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ সারাদেশে ইয়াবা সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ব্যবসায় বেকার তরুণ-তরুণী ছাড়াও শিশু-কিশোরদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কখনও তাদের ম্যানেজ করেই চলছে এ ব্যবসা। মাঝে-মধ্যে ইয়াবার কিছু চালান ধরা পড়লেও চক্রের মূল হোতারা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা-ধানমন্ডি উত্তরায় ইয়াবা ব্যবসা জমজমাট। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে এ ব্যবসা। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্টহাউজ ও ড্যান্স ক্লাবগুলোতে দেদার কেনাবেচা হচ্ছে ইয়াবা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা টেকনাফ, যশোর, সাতক্ষীরা, বি-বাড়িয়া, সিলেট, ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, মুন্সীরহাট, বিলোনিয়া, কালীরহাট, পাঠাননগর, রানীরহাট, কুমিল্লা, সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রামসহ আরও কয়েকটি এলাকার সীমান্ত অহরহ ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিমের পাশাপাশি ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে।

এসব স্থানে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এ চালান আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌনে চার লাখ মাদকসেবী আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাব ও পুলিশের হাতে কয়েকজন কিশোর ও কলেজ পড়ুয়া মাদক ব্যবসায়ী আটক হলে তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

রাজধানীর তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তরার লিপি, লায়লা, ফাতেমা, ডালিম ও দাদা ফারুক, ধানমন্ডিতে মারুফা, লাইলি, নুরজাহান, পারুল বেগম, রুশিয়া, মর্জিনা বেগম, রুবিনা আক্তার, গুলবাহার, শাম্মী আক্তার, বিউটি ও রীনা, গুলশানে জসিমের মা, ফাতেমা ওরফে কালার বউ, শাহনাজ, জ্যোৎস্না, সখিনা, কল্পনা, রাশিদা ও হনুফা রয়েছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৪০ থেকে ৪২ জন ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াবা ব্যবসা। ফেনসিডিল ব্যবসায়ীরাই অধিক লোভে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বেশি লাভজনক হওয়ায় তারা এখন ইয়াবা ব্যবসা করছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার অনেক সুন্দরী তরুণী ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অনেকে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিকও বনে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ইয়াবা সিন্ডিকেটকে। ইয়াবা আকারে ছোট হওয়ায় সীমান্ত থেকে সহজে তা দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

রোববার বিকেলে রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকা থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা হলেন হাফিজ রায়হান ও হালিম মোল্লা।

তেজগাঁও থানার এসআই তোফাজ্জল বলেন, এরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ও ফেনসিডিল এনে তেজগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে পল্টন থানার এসআই আলী হোসেন ১৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৪জনকে আটক করেন।

গত ১৫ জুলাই কুমিল্লার দাউদকান্দির চেকপোস্টে ৩১ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। এরা হলেন, টেকনাফের মাদক আব্দুর রহমান, জোবায়ের ও শরিয়তপুরের সেলিম। এর আগে তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রীর ব্যাগ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হচ্ছে।

সম্প্রতি গোয়েন্দাদের পাতানো জালে আটক মনির হোসেন জানিয়েছেন, ঢাকার পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই রাজুর নির্দেশে মাদক ব্যবসায় নামতে হয়। এক বছর ধরে ওই ব্যবসা চালানো হচ্ছে। তার নিয়ন্ত্রণে ২০ থেকে ২৫ কিশোর জহুরি মহল্লাহ, তাজমহল রোড, আসাদগেট, নোয়াখালী পট্টি ও কুমিল্লা বস্তিসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নিয়মিত ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করে আসছে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, ইয়াবা সহজে বহন করার সুবিধার জন্য শিশুদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা ইয়াবা সেবন করছে বেশি। ইয়াবা সেবনে মুখে গন্ধ না হওয়ায় এদের চিহ্নিত করাও কষ্টকর। তারপরও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য যদি মাদক ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেয় বা আটক না করলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।