বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
আমেরিকায় তোলা আমার পরিবারের শেষ ছবি এটি। ছবিটা গত অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে তোলা। আমার স্ত্রী আর দুই কন্যা। এক মাসের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে ইউএস ইমিগ্রেশন অফিসার তাদের অবরুদ্ধ করে, তারপর ফের দেশে পাঠিয়ে দেয়। আপনি রাতের খাবার খেয়ে প্ল্যান করছেন সকালে স্ত্রী-সন্তানদের এয়ারপোর্ট থেকে পিক করবেন- মাঝ রাতে ইমিগ্রেশন অফিসার হঠাৎ আপনাকে ফোন করে বললো ‘আপনার স্ত্রী-সন্তানদের আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না’। অথচ তাদের আমেরিকান পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র সবই রয়েছে। খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা না!
তবে আপনার দেশ হলে আপনিও একইভাবে ভাবতেন। দেশের নিয়ম অনুযায়ী যা হচ্ছে- ভালো হচ্ছে। ইমিগ্রেশন অফিসারের সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলার পরও আমি হেরে গেলাম। আমার পরিবারকে ঢাকায় পাঠানো হলো। আমেরিকার গ্রিনকার্ডধারী কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আজ এয়ারপোর্টে আটকে রয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সেকেন্ডে সব কিছু বদলে দিলো।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য অভিবাসী আমেরিয়ায় আসে। এসব অভিবাসীদের আচার-আচরণ এবং জীবন যাপন অকৃত্তিম দেশের টানে আপ্লুত। প্রতিটি মুহূর্তে দেশকে স্মরণ করা আর বাঙালি সংস্কৃতি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। এখনও নিউ ইয়ার্কের আনাচে কানাচে চায়ের আড্ডায় দেশের খবর নিয়ে হট্টগোল হয়। এখানে বাংলাদেশের প্রায় সবক’টি জাতীয় দিবস উদযাপন হয় মহা আনন্দে। নিউ ইয়র্কের কোনো বাঙালির বাসায় গেলে বোঝার উপায় থাকে না এটা আমেরিকা। খাবার টেবিলে মাছ ভাত, দেশি সবজি।
বর্তমান প্রক্ষিতে কিছুটা সমস্যা সবার হচ্ছে।পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য এখন আর অতো সহজ হবে না। এখানে মনে রাখতে হবে, একটি দেশে জন্মালেই ওই দেশের ওপর আপনার অধিকার জন্মায় না। আমেরিকাও আমাদের কোনো দিন আপন মনে করবে না। আজকের পরিস্থিতিতে সবার উপলদ্ধি করার সময় এসে গেছে- সীমারেখা দিয়ে দেশের সংজ্ঞা হয় না। পুরোপুরি আমেরিকান হতে হলে নতুন চামড়া নিয়ে ফের জন্মাতে হবে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকার কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা তারাই বুঝুক। আমাদের বিবেচনা করা উচিৎ নতুন চামড়া নিয়ে আবার জন্ম নেওয়া ভালো হবে নাকি বাঙালি হিসেবে মর্যাদা রক্ষা করা ভালো হবে।
সেই সঙ্গে হিসাব করে দেখা দরকার আমেরিকা থেকে আমরা কি পরিমাণ ডলার বাংলাদেশে পাঠাই আর আমাদের দেশ থেকে আমেরিকায় কত আসে! মেক্সিকানরা কাজ করে টাকা তাদের দেশের পাঠিয়ে দেয়। আমরা প্রতি বছর জমি বিক্রি করে আমেরিকায় আসি, এখানকার টাকা এখানেই খরচ করে ফেলি। যে কারণে মেক্সিকানদের বের করে দেওয়া হলে তাদের খুব বেশি আসবে-যাবে না। সবচেয়ে দুঃখজনক অধিকারের জন্য আন্দোলন হলে তা বাঙালি শূন্য থাকে। আবার এসব বাঙালিরাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে।