সাদিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার ॥
দেড় বছরের শিশু নাম তার ‘সুখি’, অথচ সে এখনো বুঝতেই শেখেনি যে, সুখ তো দূরের কথা তার বাবা এক যুগেও পায়নি মাথা গোজার স্থায়ী কোন ঠিকানা। ওপারে চলে গেছেন মা, ছয় বছরের বোন ‘সিমা’ই এখন তার সব কিছু। একমাত্র বাবা হজরত আলী কোন কাজ না পেয়ে কখনো টোকাই, কখনো করেন ভিক্ষা।
এটি ইউরোপের বসনিয়ার জঙ্গলের শরণার্থী শিবির কিংবা উখিয়া ক্যাম্পের বাস্তহারা ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের গল্প নয়! এটি গাজীপুর জেলা সদরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে শালবনের ভিতর অস্থায়ী দশ-এগারটা পরিবারের গল্প। নেই বিশুদ্ধ পানি বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ছয় বছরের সিমা ও দেড় বছরের সুখির মত আরো কুড়ি খানেক বাচ্চার আবাস এখানে। এগারোটা পরিবারে এগারোজন নারীসহ প্রায় অর্ধশত সদস্য।
প্রায় এক যুগ আগে জামালপুর জেলার মাহমুদপুর চর এলাকায় যমুনার করাল গ্রাসে ভিটা-মাটি হাড়িয়ে গাজীপুরের সদরের হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থান নেন। দশ বছরে বেশি সময়ে তিন সন্তান রেখে চলে গেছেন ‘বাসেদ’, কবরটাও হয়েছে এই গাজীপুরেই। পঁচিশ বছর বয়সি সোমার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, প্রায় একযুগ হয়ে এলো, শুনেছি কত মানুষ ঘর বাড়ি পাইলো, আমাগো কোনো গতি হইলো না। স্বামী পঙ্গু, মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া উপায়ও নেই। মৃত জহির মাওলানার পুত্র হাবিবুর রহমান(৪০), জালাল শেখের পুত্র সফিকুল (৩৮), দুজনেই আপসোস করেন এবং সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। উক্ত এলাকাটি ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়, চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক কে জানালে, তিনি সাহায্যের জন্য তার দপ্তরে যাওয়ার সুপরামর্শ দেন এবং আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থান দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে ইউএনও এর সাথে আলাপ করতে বলেন।
কোন সাহায্যের হাত বাড়ানো যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকী আফসোস করে বলেন, ‘এত মানবেতর জীবন জাপন করছে মানুষ, আমার আমলে ছিলো না, আমি যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থল ভ্রমণ করবো, সরকারের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি তাদের সাহায্য করবো’।