বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > এজেন্ট বের করার একটা প্রমাণ চাইলেন সিইসি, বিএনপি বলল একশটা দেব

এজেন্ট বের করার একটা প্রমাণ চাইলেন সিইসি, বিএনপি বলল একশটা দেব

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দল ও প্রার্থীদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘কোথায় কোন সেন্টার থেকে কারা পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে নামসহ এমন একটি প্রমাণ দেখান, তাহলে আমি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

কমিশনারের দাবি, বিভিন্ন সময় কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে আসেন না।

সিইসির এ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘এজেন্ট বের করে দেয়ার প্রমাণ ইসিকে একটি নয় ১০০টি দিতে পারবেন তারা।’

শনিবার (১৪ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ প্রসঙ্গটি নিয়ে সিইসির সঙ্গে তর্কে জড়ান বিএনপি নেতারা।

মতবিনিময়কালে সিইসিকে উদ্দেশ করে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি ক্রেডিবাল, নিউট্রাল নির্বাচন চাই। নিশ্চয় আপনারাও সেজন্যই এসেছেন। আমরা ২০ পারসেন্টের ভোটে মেয়র হতে চাই না, আমরা চাই ৬০-৭০ পারসেন্টের ভোটে মেয়র হতে।’

এ সময় তিনি ভোট সেন্টার থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, সেন্টারে বহিরাগতদের ঠেকানো ও গোপন বুথে অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি ঠেকাতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালটে নেয়া, প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ১ শতাংশের কম রিজার্ভ ভোট রাখা, ভোট কেন্দ্র প্রবেশে এনআইডিকার্ড বাধ্যতামূলক করা, লগিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ভোটের ফলাফল জানানো।

জবাবে সিইসি বলেন, ‘আপনারা কোথায় পেয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ১ পারসেন্ট বা ৫ পারসেন্ট ভোট থাকে। ৫ পারসেন্ট বা ১ পারসেন্টের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আমরা বিশেষ ব্যবস্থার কারণে ঢাকায় ১ পারসেন্ট ভোট রেখেছিলাম, চট্টগ্রামে সেটাও থাকবে না।

এ সময় তিনি ইভিএমের পাঁচটি সুবিধা তুলে ধরে বলেন, ‘এনআইডি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হলে, এমন হতে পারে ভোটারদের কার্ড কেড়ে নেয়া হতে পারে।’

ডা. শাহাদাত বলেন, ‘একটি বিষয়ে আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে, লাইনে বহিরাগতরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। অপরদিকে ভোটাররা ভোট দিতে না পেরে বিরক্ত হয়ে চলে যায়।কারণ বুথের মধ্যে আগে থেকে বহিরাগতরা বসে থাকে। বলে- আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান। তাই বুথের নিরাপত্তা দিতে হবে।’

জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি একটা প্রমাণ দেন যে কোথায় কোন সেন্টার থেকে কারা পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে নামসহ এমন একটি প্রমাণ দেখান, তাহলে আমি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এ সময় সভায় উপস্থিত ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘কোন সেন্টার থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দিয়েছে সে প্রমাণ আমরা দিতে পারব, কিন্তু কে বের করে দিয়েছে সে প্রমাণ আমরা কীভাবে দেব, আমাদের এজেন্টতো তাদের চেনে না।’

পাশ থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপিপ্রার্থী আবু সুফিয়ান দাঁড়িয়ে বলেন, ‘একটি নয় একশটি প্রমাণ দেব। চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ১৭১টি সেন্টার থেকে আমার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। সেই ছবি, ভিডিও প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনের ঢাকা অফিসে গিয়ে জমা দিয়েছি। সেখানে এমন অনেক প্রমাণ দেয়া হয়েছে যে মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়েছে, প্রবাসীরা ভোট দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী (চট্টগ্রাম-৯) আসনে ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাহাদাত বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি প্রার্থী ছিলাম, জেলে থেকে নির্বাচন করেছি। দিন শেষে দেখা গেল আমার প্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থী ৪ লাখ ভোটের মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়েছেন। অথচ পুরো দুনিয়া দেখেছে, দিনভর কোনো ভোটারকেই ভোট সেন্টারগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ইভিএমএ ভোট হলো, সেই ভোটের ফলাফল দেয়া হলো রাত ১ টায়!’

জবাবে সিইসি বলেন, আগে কখন কি ঘটেছে সে কথা বললে তো হবে না। এখনকার কথা বলেন।

এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিতর্ক করে লাভ নেই। এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দিচ্ছে না এ অভিযোগ আমরা বারবার করছি। গত নির্বাচনে (একাদশ সংসদ নির্বাচন) আমার সব এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমি সশরীরে গিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু প্রশাসন আমাকে কোনো সহায়তা করেনি। আগে যা হয়েছে হয়েছে, এবার এজেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনারা নিন। এজেন্ট পাঠাতে আমরা তো মারামারি করতে পারব না।’

জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘আমরা তো কোনো এজেন্টকে বাড়ি থেকে গিয়ে গার্ড দিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে আসব না। এজেন্টকে কেন্দ্রে আসতে হবে, কোনো বাধা পেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বা রিটার্নিং অফিসারকে বলবেন, তারা ব্যবস্থা নেবেন।’