শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > শিক্ষাঙ্গন > কঠোর আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা

কঠোর আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় কঠোর আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গত মাস থেকে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গণস্বার গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে যৌক্তিক কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে শিক্ষার্থীরা আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করবেন। আন্দোলনকারীদের দাবি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কেন থাকবে? কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি মানা না হলে আগামী ২৫ আগস্টের পর অবস্থান ধর্মঘট, অবরোধ কর্মসূচি ও পিএসসি ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রহিম কৌশিক বলেন, কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার সাধারণ শিার্থীদের প্রাণের দাবি। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনের আরেক অন্যতম সংগঠক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। ঈদের ছুটিতে অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। এখনো ছুটির আমেজ কাটেনি। আমরা আবারো শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন-লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো। আশা করি, সরকার আমাদের আন্দোলনে বাধা দেবে না। জানা যায়, কোটাধারীদের সুবিধার জন্য ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতেই কোটা প্রথার অনুসরণ করে পিএসসি। এতে সাধারণ মেধাবী শিার্থীরা বাদ পড়ে যান। পিএসসির এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিার্থী। এতে হাজার হাজার শিার্থীর ঢল নামে শাহবাগে। পরের দিন মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে এই আন্দোলন থামিয়ে দেয় পুলিশ ও সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারপরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে থাকেনি, থেমে থাকেনি তাদের কার্যক্রমও। পুলিশ ও ছাত্রলীগ আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার পর থেকে ফেইসবুক ও ব্লগে কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া এরই মধ্যে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। ৩৪তম বিসিএসের আগে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর। কিন্তু এবার কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় প্রিলিমিনারি পরীা থেকেই। সাধারণ শির্থীদের অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে মেধাবীরা তাদের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। অযোগ্য ও মেধাহীনরা চাকরির সুযোগ পাবেন। তাই তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। জুলাইয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথ আক্রমণে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ নির্মমভাবে সাধারণ শিার্থীদের ওপর গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছোড়ে। অন্য দিকে সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের লাঠিপেটা করে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ ও শতাধিক শিার্থী আহত হন। আন্দোলন চলাকালে সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দিলে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। এতে সাধারণ শিার্থীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যান। উল্লেখ্য, ৩৪তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের ৪৪২টি পদসহ মোট দুই হাজার ৫২টি পদের বিপরীতে ২৪ মে অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থী। ৮ জুলাই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীার প্রকাশিত ফলাফলে ১২ হাজার ৩৩ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। উত্তীর্ণদের মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, ১০ শতাংশ জেলা কোটায়, ৫ শতাংশ উপজাতি কোটায় এবং ১০ শতাংশ নারী কোটায়। সব কোটা মিলে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে এ বছর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশসহ মোট ৫৬ শতাংশ উত্তীর্ণ করা হয় কোটা পদ্ধতিতে। প্রিলিমিনারি পরীাতেই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিসিএস বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন ও সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। পাঁচ দিন বিক্ষোভের পর পিএসসি ফল পুনর্মূল্যায়ন করে। আন্দোলনের মুখে আরো ৩৪ হাজার ২১৭ জনকে উত্তীর্ণ করে আগের ১২ হাজার ৩৩ জনসহ মোট ৪৬ হাজার ২৫০ জনকে পাস করানো হয়।