শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > কত অসহায় আমরা!

কত অসহায় আমরা!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ‘কত অসহায় আমরা এখন! মাননীয় স্পিকার একবার দেখবেন কি? কিভাবে আমরা বেঁচে আছি? আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করেছি। আমরা আপনাকে নির্বাচিত করেছি। খুব সামান্য মানবাধিকার কি আমরা পেতে পারি না।’

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান তার ফেসবুকে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সঙ্গে দিয়েছেন একটি রাস্তার বেহাল দশার ছবি। ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই এই রাস্তা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে কি না। হাঁটুপানি আর কাদায় একাকার। লালমাটির রাস্তা, কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত তলিয়ে যায়। আর সেই ছবি দেখেই ক্ষোভের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

উপজেলার প্রত্যন্ত কোনো অঞ্চলে হলে হয়তো এতটা আক্ষেপ প্রকাশ করতেন না অনেকে। খোদ পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাস্তাটি। যা রামনাথপুর গ্রামের বাসিন্দারের উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত। ঠিক যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার।

এ কারণে এখন ৭ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। এই গ্রামের অনেক ছাত্র-ছাত্রী উজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। তাদের বিপদটাই সবচেয়ে বেশি। বিকল্প পথ ঘুরতে হলে ১০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। যে কারণে বর্ষা এলেই তাদের স্কুল যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মমিনুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে ফোনে জানিয়েছেন, বাইসাইকেল বা রিকশা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না।

চলাচল উপযোগী এই রাস্তা নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভের আরেকটি প্রধান কারণ- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জের বধূমাতা। এই আসন থেকে দু’দফায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে এমপি হয়েছেন খোদ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এ কারণে স্থানীয়দের প্রত্যাশা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তারা মনে করছেন এতদিনের বঞ্চনার সুদাসলে উসুল হবে। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর সদগতি হবে। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন স্থানীয়রা। কিন্তু বাড়তি প্রত্যাশার বিপরীতে যখন ওই এলাকার একটি রাস্তায় এই বেহাল অবস্থা তখন স্বভাবতই ক্ষোভের পরিমাণটা বেড়ে যায়।

রামনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা আহসান উল্লাহ ইউনির্ভাসিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং’র ছাত্র মাহবুব আলম লিমু লিখেছেন, ‘রামনাথপুরের রাস্তার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে কিভাবে ডিজিটাল হয় আমার বুঝে আসে না।’

লিমু বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে। রিকশা যেতে চায়নি। মালপত্র মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি পৌঁছাতে হয় তাকে।

এমডি মাসুদ তার কমেন্টে লিখেছেন, ‘হায় কপাল আমাদের। এই যদি হয় রাস্তার দশা কি করে বাংলাদেশ ডিজিটাল করবেন আমার বুঝে আসে না, রাস্তার এই দশা দেখার কি কেউ নাই, কোথায় পীরগঞ্জের বধূমাতা?’

রোমান আলেয়া কমেন্ট করেছেন, ‘এই রাস্তা দিয়া আমার শ্বশুর বাড়ি যেতে হয়। দুঃখ হইলো এবার যেতে পরি নাই, এভাবেই দেশ এগিয়ে যাবে?’

জাহিদুল ইসলাম রুবেল লিখেছেন, ওই রাস্তায় তার জিপ পড়ে গিয়েছিল। একজন রাস্তার বেহাল দশা দেখে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। প্রশ্ন তুলেছেন এইটা রাস্তা না-কি চাষের জমি। আরেকজন তাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।

রাকিবুল নয়ন লিখেছেন, পীরগঞ্জের অনেক সম্মানিত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ও বাসায় যান। তারা তাদের নিজেদের সমস্যা দূর করেন। কিন্তু জনগণের সমস্যা দেখেন না।

ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে সাহযোগিতা কামনা করেছেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম