বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > খেলা > করোনার মধ্যেও শুভ জন্মদিন সাকিব

করোনার মধ্যেও শুভ জন্মদিন সাকিব

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর পর এবারের জন্মদিনটা একটু ভিন্নভাবেই কাটাতে হচ্ছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। একে তো কাটাচ্ছেন নিষেধাজ্ঞার একটি সময়। তারওপর, করোনাভাইরাসের কারণে এখন তিনি নিজেই রয়েছেন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে। এর মধ্যেই ৩৩ বছরে পা রাখলেন সাকিব আল হাসান। আজকের এই দিনে, ৩৩ বছর আগে মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৩৩তম জন্মদিনে সাকিবকে বাংলাভূমি’র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।

১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সাকিব। বাবার নাম মাশরুর রেজা। ছিলেন কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি নিজে ছিলেন ফুটবলের ভক্ত। খেলতেন জেলার বিভিন্ন লিগে। বাবার পছন্দের বিপরীতে ছেলে হলেন ক্রিকেটার। গ্রামাঞ্চলের ক্রিকেট খেলতে গিয়েই তিনি চোখে পড়ে যান এক আম্পায়ারের। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় মাগুরার ইসলামপুর পাড়া ক্লাবে। সেই ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে সাকিব প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেন। প্রথম বলেই তুলে নিয়েছিলেন উইকেট। প্রকৃত ক্রিকেট জীবনের শুরু সেই বল থেকেই।

মাগুরা মাতিয়ে সাকিব বিকেএসপিতে এসে ভর্তি হন ৬ মাসের কোর্স করার জন্য। খুব দ্রুতই নিজেকে পরিচিত করে তোলেন সাকিব। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুযোগ পান অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার। এছাড়া জাতীয় লিগে খেলার জন্য তালিকাভূক্ত হন খুলনা বিভাগীয় দলে।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দ্যুতিময় পারফরম্যান্সই সাকিবকে নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে (অপর দুটি দেশ ছিল ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা) মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও ৩টি উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ৩৫.১৮ গড়ে সংগ্রহ করেন মোট ৫৬৩ রান এবং ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।

এরপর ২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে সাকিব প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। একই সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা এবং মুশফিকুর রহীমের। সেই সিরিজেই হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের।

২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন সাকিব। এই ধারাবাহিকতায় টেস্টেও নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করে সেরা অলরাউন্ডারের আসন দখল করেন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হন তিনি। যা ক্রিকেট বিশ্বে একমাত্র ঘটনা।

ওয়ানডে অভিষেকের পরের বছরই ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্টে অভিষেক হয় সাকিবের। ২০০৬ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি। ২০০৯ সালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফির ইনজুরির কারণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একইভাবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর তার নেতৃত্বেই ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ।

নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলা সাকিব গত বছরের অক্টোবেরর শেষে বড় এক ধাক্কা খেলেন। জুয়াড়িদের প্রস্তাব আকসুকে না জানানোর কারণে সাকিব আল হাসানকে সবধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। যদিও নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময়ই এক বছর স্থগিতের কথা জানিয়ে দেয়া হয় আইসিসির পক্ষ থেকে। চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে আবারও মাঠে ফিরতে পারবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

এখন পর্যন্ত ৫৬ টেস্ট ১০৫ ইনিংসে ব্যাট করে সাকিব ৩৯.৪০ গড়ে করেছেন ৩৮৬২ রান। রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ২১৭ রানের। ৯৫ ইনিংসে বল করে পেয়েছেন ২১০টি উইকেট। বোলিং গড় ৩১.১২ ও ইকোনোমি ৩.০১ করে। ১০ উইকেট পেয়েছেন দু’বার। ৫ উইকেট পেয়েছেন ১৮বার। এক ম্যাচে তার সেরা বোলিং ফিগার ১২৪ রানে ১০ উইকেট। আর এক ইনিংসে ৩৬ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট।

ওয়ানডেতে ২০৬ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ১৯৪ বার। ৩৭.৮৬ গড়ে করেছেন ৬৩২৩ রান। রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৭টি হাফসেঞ্চুরি। এক ম্যাচে তার সেরা ১৩৪ (অপরাজিত)। আর ২০৩ ইনিংসে বল করে ৩০.২১ গড় ও ৪.৪৮ ইকোনোমিতে নিয়েছেন ২৬০ উইকেট। ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন দু’বার। সেরা বোলিং ফিগার ২৯ রানে ৫ উইকেট।

৭৬টি টি-টোয়েন্টিতে ১২৩.৭৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৫৬৭ রান। রয়েছে ৯টি হাফসেঞ্চুরি। আর ৭৫ ইনিংসে বল ঘুরিয়ে নিয়েছেন ৯২ উইকেট। ইকোনোমি ৬.৮১। সেরা বোলিং ফিগার ২০ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট।