শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > করোনায় গতি কমেছে পদ্মা সেতুর কাজে

করোনায় গতি কমেছে পদ্মা সেতুর কাজে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্প এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ দুই প্রকল্পের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে এ দুই প্রকল্পের কেউ আক্রান্ত হননি। করোনা প্রতিরোধে এ দুই প্রকল্পের কর্মীদের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।

বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে কেরানীগঞ্জের জাজিরা এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে করে এসব তথ্য জানায় পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।

সংবাদ সম্মেলনে সিআরইসির দেয়া তথ্য মতে, পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। আর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের এখন পর্যন্ত মোট ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা (অগ্রাধিকারমূলক) অংশ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ আগামী বছর শেষ হবে।

সিআরইসি দাবি করে বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তারচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ধীরগতিতে জমি অধিগ্রহণ ও এ সংক্রান্ত মীমাংসার কারণে।

চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা প্রস্তাব দেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালির মতো দেশেও করোনাভাইরাস দ্রত ছড়িয়ে পড়ছে। চীন ছাড়াও এসব দেশ থেকে মানুষ আসার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। বড় প্রকল্পগুলোর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করোনাভাইরাসের প্রভাব কমাতে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। যেমন- বড় প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত চীনা কর্মকর্তাদের ভিসার জন্য একটি গ্রিন চ্যানেল তৈরি এবং প্রকল্পের সরঞ্জামাদি আনার ক্ষেত্রে কাস্টম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক ওয়াং কুন জানান, এ দুই মেগা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো কর্মকর্তার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। এমনকি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কারণে এখন পর্যন্ত কেউ-ই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।

ওয়াং কুন আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এ দুই মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে কিছুটা ব্যাহত করছে। কেননা, কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখন চীনে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তার একাডেমিক সেন্টার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করোনাভাইরাসের প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।’

করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতির বিষয়ে ওয়াং কুন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের পক্ষ থেকে দুটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন, তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশ। পদ্মা বহুমুখী সেতুর যেসব চীনা কর্মকর্তা ছুটিতে কাটাতে হুবেই প্রদেশে গিয়েছিলেন, তাদের ছুটি এখন বলবৎ আছে। কেননা, হুবেই প্রাদেশিক সরকারের বাংলাদেশ থেকে আগত এসব কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও, যারা বাংলাদেশে আসার অনুমতি পাচ্ছেন, তাদের বাংলাদেশে আসার পর কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হচ্ছে।’

চীনা ঠিকাদারি এ প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) এখন পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও অ্যালাইনমেন্টের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাঁধ নকশার কাজ হয়েছে ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ, টেস্ট পাইন ডিজাইন হয়েছে ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ওয়ার্কিং পাইল ডিজাইন হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, কালভার্টের ডিজাইন হয়েছে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ, বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, টেস্ট পাইলের কাজ হয়েছে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ওয়ার্কিং পাইলের কাজ হয়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা (অগ্রাধিকারমূলক) অংশ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ আগামী বছর শেষ হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৪২টি পিয়ারের (খুঁটি) মধ্যে ৩৯টির কাজ শেষ হয়েছে। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২৫টি স্প্যান উঠেছে। সর্বোপরী এ প্রকল্পের ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামছুজ্জামান, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর লিউ ঝেনহুয়া, বাংলাদেশ রেলওয়ের পিবিআরএলপির প্রকল্প প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী, সিআরইসির পিবিআরএলপির প্রকল্পে পরিচালক ওয়াং কুন, সিআরইসির পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক লিউ জিয়ানহুয়াসহ বাংলাদেশে চাইনজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, মালিকানা অংশিদারিত্বের প্রতিনিধি, অন্যান্য বড় প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং চীনা ঠিকাদাররা।