শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > করোনায় ১০ গুণ বাড়তি মূল্যে মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ : টিআইবি

করোনায় ১০ গুণ বাড়তি মূল্যে মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ : টিআইবি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
জাতীয় সংকটসহ এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে অনিয়ম, দুর্নীতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত জনপ্রিতিনিধিকে চিরতরে জনপ্রতিনিধিত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে।

সোমবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় সংকটসহ এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে অনিয়ম, দুর্নীতি রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একটা সরকারি, জনগণের অর্থায়নের প্রকল্প সেটা দুর্যোগ মোকাবিলার অংশই হোক বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক বাজেটিকভাবে, প্রশাসনিকভাবে প্রভাবশালী মহল ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যন্ত জড়িত। তারাই এই প্রকল্পগুলোকে নিজেদের সম্পদ বিকাশের একটা উপায় হিসেবে, লাইসেন্স হিসেবে দেখতে চান।

তিনি বলেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের পর্যাপ্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত না করলে এটা কখনোই নিয়ন্ত্রণ হবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে, সরকারকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের সংস্কৃতিটাকে পরিবর্তন করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে এটা কঠিন, কিন্তু খুব সহজ যদি সদিচ্ছা থাকে। স্থানীয় পর্যায়ে যেসব জনপ্রতিনিধি অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে, আমি মনে করি, তারা সরকারের এবং সরকারি দলের ও প্রধানমন্ত্রীর অবমাননা করেছেন, অসম্মান করেছেন। তাহলে তাদের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদার অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা যাবে না কেন? আইনের আওতায় আনা যাবে না কেন? তাদের চিরতরে জনপ্রিতিধিত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হোক। তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা মানে হলো পুরস্কৃত করা। কারণ, কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসবে।

এদিকে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ত্রাণ বিতরণের দুর্নীতির কারণে ১০ জুন পর্যন্ত ৮৯ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৫৪ জন ইউপি সদস্য, ১ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ৪ জন পৌর কাউন্সিল এবং ১ জন উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান রয়েছেন।’

‘ত্রাণ বিতরণের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার হার ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়ার হার ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়ার হার ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং কোনো ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি সেই হার ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ২ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

দুর্নীতিবিরোধী এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চিকিৎসাসামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া অন্যরা কিছুই জানতে পারছেন না। একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরনের ক্রয় নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তকর্তাদের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। লিখিতভাবে যেসব কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলোরও মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫-১০ গুণ বাড়তি মূল্যে মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। আইইডিসিআর থেকে করোনা উপসর্গধারীদের রক্ত সংগ্রহ, পরিসঞ্চালন ও পরীক্ষার কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকুয়াম টিউব ও ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ সরবরাহের অভিযোগ আছে।

‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পে অস্বাভাবিক ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ৫০০-১০০০ টাকা দামের সেফটি গগলসের (১ লাখ) প্রস্তাবিত ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ৫,০০০ টাকা। ১ লাখ ৭ হাজার ৬০০ পিপিই কেনার ক্ষেত্রে প্রতিটির প্রস্তাবিত ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৭০০ টাকা, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১০০০-২০০০ টাকা। ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট শু কেনার জন্য প্রতিটির প্রস্তাবিত মূল্য দেখানো হয়েছে ১,৫০০ টাকা, যার বর্তমান বাজর মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা।

এ ছাড়া ৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যারের প্রস্তাবিত ক্রয়মূল্য ৫৫ কোটি টাকা, ৪টি ওয়েবসাইটের উন্নয়নে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৩০টি অডিও-ভিডিও ক্লিপের ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গবেষণায় ২৯ কোটি ৫০ লাখ, ৩০টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টে ৪৫ কোটি টাকা, ইনভেশনে ৩৬ কোটি টাকা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করনোয় আক্রান্ত রোগীদের অন্যত্র নেয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ব্যয়গুলোকে অস্বাভাবিক বলছে টিআইবি।

টিআইবির প্রতিবদনে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার দুর্নীতির ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে এবং এই সিন্ডিকেটে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই একাংশ কারা? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এটা প্রকাশ করা আমাদের নীতিমালা বহির্ভূত।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি পরীক্ষাগারে করোনা পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি অপেক্ষা ১০০০-১৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরীক্ষার ক্ষেত্রে দালাল কর্তৃক ১০০০-১৫০০ টাকায় সিরিয়াল বিক্রি হচ্ছে। ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়’ এমন সার্টিফিকেটও বিক্রি করা হয়েছে।