শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > কাপাসিয়ার বহু অপকর্মের হোতা গজারী হারুন এখন ধরা

কাপাসিয়ার বহু অপকর্মের হোতা গজারী হারুন এখন ধরা

শেয়ার করুন

মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
গাজীপুর: কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ, সিংগশ্রী, তরগাঁও, বারিষাব ও টোক ইউনিয়নের বহু অপরাধের জন্মদাতা হারুন অর রশিদ (৪৮) ওরফে গজারী হারুন এখন ধরা খেয়ে জেলহাজত বাস করছেন। হারুন রায়েদ ইউনিয়নের ভূলেশ^র গ্রামের মৃত ফাইজ উদ্দিনের পুত্র। খোঁজ খবর নিয়ে যতদূর জানা যায়, বর্তমানে তার বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি ও বনমামলা চলমান। পূর্বে তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপসহ ১০/১২টি মামলা ঝুলে ছিল। এসবের কয়েকটি মামলায় জেলও খাটেন। বর্তমানে এসব মামলা শেষ অবস্থা কী জানা সম্ভব হয়নি।

গত সোববার (৬ জুলাই) বিকালে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি টিম গরুচুরির মামলায় {নং ৩৮(৩)২০২০} হারুনকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে সোপর্দ করেন। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ বিষয়ে ডিবি’র ওসি রাজিব কুমার দাস গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করেন।

তাছাড়াও তার বিরুদ্ধে ভূলেশ^র গ্রামের আ: রশিদ হত্যা মামলার {নং-২(১)১৭} এর সম্পূরক ১নং আসামী। বর্তমানে এ মামলাটি পিবিআই এ তদন্তাধীন। তাছাড়া গাজীপুর জেলা শ্রীপুর থানার গোসিংগা বিট অফিসের আওতায় বনবিভাগের মামলা পিওআর-১০-গো-৪২-শ্রী-২০১৭/২০১৮ এর ১নং আসামী। এ মামলাটির বর্তমানে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ, সিংগশ্রী, তরগাঁও, বারিষাব ও টোক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে হারুন ও তার ভাই রেহান। এমন কোন অপরাধ নেই যেন তাদের পক্ষে অসম্ভব। এলাকার চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, এসিড নিক্ষেপ, চাকুরির প্রলোভন দিয়ে বহু মানুষের অর্থআত্মসাৎ, সরকারি বনের গাছ কর্তনসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্মদাতা। এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তার অপকর্মর কারণে অশান্তিতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে রায়েদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিরণ মোল্লা বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করারও সাহস নেই অধিকাংশ ভোক্তভূমির। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১০/১২ বিঘা জমির গজারী কাঠ কেটে পাচার করেন। এর মধ্যে ভূলেশ^র গ্রামে ৫/৬ বিঘা, হাইলজোর গ্রামের মোতালিব মেম্বারের বাড়ির পাশে ১ বিঘা, রায়েদ মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলামের বাড়ির পাশে ২ বিঘা জমির গজারী গাছ কাটেন। পাবলিকের জোত জমির সাথে সরকারি জমির গজারি গাছ কেটে রাতের আধারে পাঁচার করে থাকেন।

দৃশ্য হারুন গজারী কাঠের ব্যবসা করলেও এসবের অধিকাংশ সরকারি বনের গাছ চুরি করে বিক্রি করা তার প্রধান কাজ। এলাকার মানুষ জানান, লেখাপড়া খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। ১৯৯৪ সাল প্রথম অপরাধ জগতের পদ চিহ্ন রাখেন। ভূলেশ^র গ্রামের হাছেন আলীর কন্যা সামসুন নাহার শিল্পীকে এসিড নিক্ষেপ করেন। এবিষয়ে হারুন জেল খাটেন দীর্ঘদিন। ১৯৯৫ সাল। রায়েদ মধ্যপাড়ার সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার আঃ মান্নানের বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে হারুন-রেহান দুই ভাইসহ ৫ জন ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হন। শুরু হয় দুই ভাইয়ের বিভিন্ন অপরাধ জগতের মিশন। ২০০৬ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই ভাই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীনের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে হারুন-রেহান হয়ে উঠে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক স¤্রাট। আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। অবাধে চলে চুরি, ডাকাতি, খুন, সরকারি গজারি বন কর্তন, চাঁদা আদায়সহ বহু অপকর্ম। যদিও রুহুল আমীন দলের নানাবিধ বিষয়ে বিতর্কিত সৃষ্টি করলে দল থেকে বহিস্কৃত হন।

হারুন কিন্তু থেমে নেই। অঢেল টাকার মালিক বনে যান। অপরাধের দাপট ও মাত্রা বেড়ে যায়। জোরপূর্বক মানুষের জমি দখল, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, স্থানীয় কৃষকদের ছেলো ইঞ্জিন, সাবমারসিবল পাম্প, পুকুরের মাছ ও গরু লুট, ডাকাতি, মাদক সিন্ডিকেট ইত্যাদি অপরাধ জগতে দূরন্ত দাপটে বিচরণ। একটুকুও ভ্রুক্ষেপ করেননি নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে জনতার সামনে মারধর করতে। সরকারি বনের জায়গা-জমির দখল নিয়ে বহু ঘটনা রয়েছে। কারো বাড়িতে প্রকাশ্যে লুটতরাজের ঘটনাও কম নেই হারুনের বিরুদ্ধে।

একজন সন্ত্রাসী হারুনের জন্য কাপাসিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের অস্থিরতার কারণ। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের বক্তব্য হলো, তাকে থামানো দরকার। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।