আকরাম হোসেন রিপন
চীফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: ছিচকে প্রতারক থেকে মহা প্রতারক অবশেষে রিজেন্ট গ্রুপের এমডি কাপাসিয়ার মাসুদ পারভেজ। এ যেন সিনেমার কল্প কাহিনিকেও হারমানায়। মানুষ জন্মের পর প্রথমেই রাখা হয় তার নাম আর সেই নাম থেকেই শুরু মাসুদ পাভেজের জীবনের প্রতারণার ইতিহাস। তার নিজ এলাকা কাপাসিয়ায় তাকে মাসুদ নামেই চেনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ভিজিটিং কার্ডে তার নাম মাসুদ করিম রিজেন্ট গ্রুপের এমডি হিসাবে তার নাম লেখা রয়েছে মোহাম্মদ মাসুদ পাভেজ। তার গ্রেফতারের খবরে কাপাসিয়ায় তার প্রতি নিন্দার ঝড় উঠেছে। সচেতন মহল ও তার ঘনিষ্টজনরা এবং তার কাছে প্রতারিতরা তাকে একজন প্রতারক হিসেবে জানলেও সে যে এত বড় প্রতারক এবং তার এমন জঘন্য রূপ কল্পনাও করতে পারেননি। কাপাসিয়ার সকল মহলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জন তাকে নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।
জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু হানিফ মোড়লের একমাত্র ছেলে মাসুদ পারভেজ উচ্চ শিক্ষা শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের উত্তরা শাখায় কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পৈত্রিক ভিটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বরুন গ্রামে হলেও সে বেড়ে উঠেছে সদরের কলেজ রোড এলাকায় পিতার গড়ে তোলা নিজস্ব বাড়িতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্টজনরা জানান, পড়ালেখা শেষে চাকরীর জন্য অপেক্ষমান সময়েই মাসুদ পারভেজ কাপাসিয়ায় বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হয়ে নানা কৌশলে প্রতারণা শুরু করেছিলেন। এ সময় তার সাথে পরিচয় হয় বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের নারি সদস্য রওশন আরা বীথির। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে দুই সন্তানের জননী বীথি এক সময় সংসার ত্যাগ করে গোপনে মাসুদ পারভেজের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চাকুরি হলে আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে বিশাল ঝমকালো আয়োজনে পারিবারিকভাবে এক সহকর্মীর সাথে তার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। কিছুদিন পর আগের বিয়ের কথা জানাজানি হলে সেই সহকর্মীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর কিছুদিন পর নানা আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় দোষীসাব্যস্থ হলে ব্যাংকের চাকরিটাও তার চলে যায়। তারপর থেকে মাসুদ পারভেজকে কাপাসিয়ায় খুব একটা দেখা না গেলেও হঠাৎ সে দামী গাড়ি হাকিয়ে কাপাসিয়ায় আসত। এ সময় নানা কৌশলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অন্তত পনের লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক দেন দরবার করেও তার কাছ থেকে একটি টাকাও কেউ ফেরত পায়নি। পারিবারিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতেও কেউ সাহস দেখায় নি।
তার প্রতারণার শিকার কাপাসিয়া বাজারের বর্ণালী জুয়েলার্সের মালিক চন্দন রক্ষিত জানান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চাকরীরত অবস্থায় ২০১১ সালে দ্বিতীয় বিয়ের সময় বাকীতে স্বর্ণের গহনা কিনে তার একাউন্টের নামে ৫ লাখ টাকার ব্যাংক চেক দেয়। পরবর্তী সময়ে বাকী টাকা চাইলে দেই দিচ্ছি করে এক সময়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন মাসুদ পারভেজ ইতোমধ্যে সেই একাউন্ট ক্লোজ করে ফেলেছেন। তাই তিনি আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ারও সুযোগ পাননি। এ ছাড়াও বিভিন্ন কৌশলে রাওনাট গ্রামের রাজনীতিবীদ আলমগীর আকন্দ, আলতা মাসুদ, কাপাসিয়া বাজারের লাকি স্টোরের স্বত্বাধিকারি আল আমিন মোড়ল ও মামাত ভাই আনোয়ার হোসেনের প্রায় পনের লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, বহুল আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদের প্রধান সহযোগী ও রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজকে গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের সালদৈ গ্রামে তার স্ত্রীর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে র্যাবের একটি টিম গ্রেফতার করে।