শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > কাপাসিয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ

কাপাসিয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ

শেয়ার করুন

আকরাম হোসেন রিপন
চীফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর কাপাসিয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এখন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ। আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের প্রথম ক্লাস। কলেজটিতে এখন বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ১২৫ শিক্ষার্থী। গত ২৭ অক্টোবর সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি কলেজটির ভবন উদ্বোধন করে ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, বঙ্গতাজ কন্যা কাপাসিয়ার সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দাবীর প্রেক্ষিতেই এই এলাকায় এ নার্সিং কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে কলেজটিকে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মীনি আওয়ামীলীগের দূরদিনের কান্ডারী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

সকাল দশটায় শুরু হয় প্রথম দিনের ক্লাস উপস্থিত ছিল প্রায় শতভাগ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রথম ক্লাসে নিজেরা নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়। পরিচিত হয় শিক্ষক মন্ডলীদের সাথেও।

কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থী একরাম জানায়, সরকারী ভাবে নার্সিং পড়ার সুযোগ পাওয়ায় আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আজিজা খাতুন বলেন, এই কলেজটি বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমিতে তারই সহধর্মীনি সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত। এমন একটি কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করছি।

নেত্রকোনা থেকে আসা এনামুল হক জানায়, কাপাসিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত ভাল কলেজটি পড়াশোনা করার মত একটি উপযুক্ত স্থানে প্রতিষ্ঠিত আমার ধারণা এখানে পড়াশুনা করে আমাদের নার্সিং শিক্ষাও হবে আমাদের মন মানসিকতা কোমলভাবে গড়ে উঠবে যা এই পেশায় অত্যন্ত জরুরী।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহা পরিচালক তন্দ্রা শিকদার জানান, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজের কার্যক্রম চালু হওয়াতে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবলের নতুন দ্বার উম্মোচিত হলো। এখানে পোস্ট বেসিক বিএসসি নার্সিং ডিগ্রী কোর্স চালু করা হয়েছে। প্রথম সেশনে ১২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমরা আশাবাদী এই কলেজ সুদক্ষ নার্স তৈরি করতে সক্ষম হব। যারা দেশে ও দেশের বাহিরে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি বলেন, নার্সিং কলেজের শুভ শুচনায় আগত শিক্ষার্থীদের আমি স্বাগত জানাই, এখানে পড়াশোনা করে পাশ করা যেন শুধু সনদ অর্জন করা না হয়। নার্সিং সেবা মানবতার সেবা যারা এখানে পড়াশোনা করবে তারা সেই মানব সেবার সংকল্প নিয়ে পড়াশোনা করবে বলে আমি আশাবাদি। মানব সেবায় ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল এর মত তারা যেন আলো জ্বালাতে পারে। এই শুভদিনে আজ এটাই আমার চাওয়া ও প্রার্থনা। বর্তমান সরকার একটা সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়তে চান। যেখানে মানুষ তার মৌলিক অধিকারগুলো পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার সুযোগ পাবেন। স্বাস্থ্যসেবা সেই মৌলিক অধিকারের অন্যতম প্রধান উপাদান। কলেজটি চালু হওয়ায় তা অনেকাংশে পূরণ হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি যেমন মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটাবে তেমনি ঘটবে মানব সম্পদেরও উন্নয়ন। বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় এই নার্সিং কলেজ।

উদ্বোধনী অরিয়েন্টেশনে প্রভাষক মরিয়ম বেগমের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন নাহার বেগম। বিভিন্ন নিয়ম তুলে ধরেন প্রভাষক রিনা পারভিন ও প্রভাষক জাকির হোসেন।

কাপাসিয়ার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র সরকারী হাসপাতাল হচ্ছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তার সাথে যোগ হয়েছে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নাসিং কলেজ। উপজেলার বেশির ভাগ গ্রাম গুলো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। তাই কেউ অসুস্থ হলেই তাদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে রোগীর ভীর সামলাতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমসিম খেতে হয়। অসহায় লক্ষ্য মানুষের স্বপ্ন হলো নার্সিং কলেজটি চালু হওয়ায় বর্তমানে কর্মরত নার্সদের পাশাপাশি শিক্ষানবিশ নার্সদের কিছুটা হলেও বারতি সেবা পাবেন তারা। অপরদিকে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্বেও পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় অনেকের পক্ষেই ঢাকায় গিয়ে নার্সিং পড়া সম্ভব হয়না। তারা এখন সরকারী খরচেই বিএসসি নার্সিং পড়ার স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানার ভিতরেই নির্মাণ হয়েছে কলেজটি। ইতিমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে আশপাশে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন উন্নতমানের দোকানপাট। ফলে এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দুর হবে অনেকের বেকারত্ব।

কলেজের পাশে ডে-নাইট ফার্মেসীর মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানায়, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার, তার সাথে নার্সিং কলেজ চালু হয়েছে। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ অধিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাবেন।