শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > খেলা > কীর্তি গড়ে ম্যানসিটিকে হারিয়ে সেমিতে টটেনহ্যাম

কীর্তি গড়ে ম্যানসিটিকে হারিয়ে সেমিতে টটেনহ্যাম

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
এর চেয়ে উত্তেজনাকর ম্যাচ হয় না! পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকল নাটক আর রোমাঞ্চ। প্রথম ২০ মিনিটে হলো ৫ গোল। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাল খেলা। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর জয় পেল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে তাতেও লাভ হলো না। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছুঁতে না পারায় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের টিকিট কাটা হলো না সিটিজেনদের। উল্টো হারের হতাশা ভুলে মূল্যবান অ্যাওয়ে গোলের ভেলায় চেপে সেমিতে উঠল টটেনহ্যাম হটস্পার।

কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ম্যানসিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল টটেনহ্যাম। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বুধবার রাতে দ্বিতীয় লেগে সিটি দুর্গ ইতিহাদে খেলতে নামেন স্পার্সরা। তবে শেষ আটের ফিরতি পর্বে ৪-৩ গোলে হেরে গেছেন তারা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪। শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের মাঠে গোলের সুবিধা নিয়ে শেষ চারের টিকিট পায় টটেনহ্যাম।

অসাধারণ এই জয়ে দারুণ কীর্তি গড়েছে হটস্পার। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়েছে তারা। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ আয়াক্স। কোয়ার্টারে জুভেন্টাসকে হারিয়ে সেরা চারের টিকিট হাতে পেয়েছে ডাচ দলটি।

ম্যানসিটি-টটেনহ্যাম দুই পর্বের লড়াইয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন মূলত সন হিউং-মিন। প্রথম পর্বে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন তিনি। ফিরতি পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে করলেন মহামূল্যবান দুটি গোল। রাহিম স্টার্লিংয়ের জোড়া গোলে শেষ চারের স্বপ্ন জেগেছিল সিটির। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবে রূপধারণ করেনি।

গোলোৎসবের শুরু চতুর্থ মিনিটে। ডি-বক্সে কেভিন ডি ব্রুইনের রক্ষণচেরা পাস ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন স্টার্লিং। তবে সিটির এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তিন মিনিট পর আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত বল ঠেলে দেন হিউং-মিনের পায়ে। সেটি পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে সোজাসুজি নিচু শট নেন তিনি। গোলরক্ষক এডারসনের পায়ে লেগে তা ভেতরে ঢোকে।

১০ মিনিটে ফের চিত্রপটে হিউং-মিন। এবার দারুণ এক গোলে স্বাগতিক সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফরোয়ার্ড। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের পাস ডি-বক্সে পেয়ে ডান পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি।

তবে সমতায় ফিরতেও সময় লাগেনি ম্যানসিটির। পরের মিনিটে সৌভাগ্যসূচক গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে দলটি। বের্নার্দো সিলভার নেয়া শট ঠেকাতে গিয়ে একটু আগেই ঝাঁপিয়ে পড়েন হুগো লরিস। এতে বল ডিফেন্ডার ড্যানি রোজের পায়ে লেগে দিক পাল্টে গড়াতে গড়াতে গোললাইন পেরিয়ে যায়।

এরপর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এগিয়ে যায় খেলা। চলে দুই দলের আক্রমণ-পাল্টাআক্রমণের মহড়া। এবার এগিয়ে যায় সিটি। ২১ মিনিটে ডি ব্রুইনে ও স্টার্লিংয়ের সমঝদার জোট। তাদের দারুণ বোঝাপড়ায় লিড পায় দলটি। ডান দিক থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের দূরের পোস্টে বাড়ানো দুর্দান্ত ক্রস পেয়ে কোনাকুনি শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ছন্দে থাকা ইংলিশ ফরোয়ার্ড।

পরেও কেউ কাউকে নাহি দেব ছাড়-এ নীতিতে এগিয়ে চলে খেলা। তবে প্রথমার্ধে আর কেউই গোলের দেখা পায়নি। বিরতির পর প্রতিপক্ষের রক্ষণে প্রচণ্ড চাপ বাড়ায় সিটি। সাফল্যও হাতেনাতে ধরা দেয়। ৫৯ মিনিটে আগুয়েরোর নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়ায় দলটি। ডি ব্রুইনের রক্ষণচেরা পাস ডি-বক্সে ডান দিকে পেয়ে জোরালো কোনাকুনি শটে নিশানাভেদ করেন আর্জেন্টাইন তারকা। এতে সিটির আকাশে উঁকি দেয় সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন।

তবে নাটকীয়তার তখনও বাকি ছিল। ৭৩ মিনিটে সেটপিসে ম্যাচে ব্যবধান কমায় টটেনহ্যাম। কিরান ট্রিপিয়ারের কর্নার ছোট ডি-বক্সে ফের্নান্দো লরেন্তের ঊরুতে লেগে জালে জড়ায়। ভিএআর দেখে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন সমান হয়। তবে অ্যাওয়ে গোলের হিসাবে ফের এগিয়ে যায় অতিথিরা।

ইনজুরি টাইমে বল ঠিকানায় পাঠান স্টার্লিং। এতে উচ্ছ্বাসে মাতেন স্বাগতিক সমর্থকরা। সাইডলাইনে বাঁধনহারা উল্লাসে ফেটে পড়েন পেপ গুয়ার্দিওলা। তবে মুহূর্তেই সব আনন্দ উবে যায়। আক্রমণ তৈরির সময় আগুয়েরো অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্যে বাতিল হয়ে যায় গোল। ম্যাচশেষে সিটি খেলোয়াড়দের চোখেমুখে বিরাজ করে রাজ্যের হতাশা। কারও চোখে পানি।

সেটিও স্বাভাবিক। দুর্দান্ত জয়ের পরও যে ইউরোপসেরার টুর্নামেন্টে থেকে বিদায় নিতে হলো তাদের। উল্টো ওদেরই সামনে হেরেও ইউরো মঞ্চের সেমিতে ওঠার আনন্দে তথাকথিত বিজয়োল্লাসে মাতেন মাওরিসিও পচেত্তিনোর শিষ্যরা।