শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > লাইফস্টাইল > গরমে ত্বকের যতœ

গরমে ত্বকের যতœ

শেয়ার করুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥ রোদ ও ধূলোবালিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের ত্বক। যারা চাকরিজীবী বা প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন, ত্বকের প্রতি অতিরিক্ত উদাসীন, তারাই ক্ষতির শিকার হন বেশি। রোদে রয়েছে ভিটামিন-ডি, যা ত্বকের পুষ্টি জোগায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোদে পোড়াটা আবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। রোদের ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে। তাই এই ঋতুতে ঘাম, ধূলোবালি, আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করা অপরিহার্য। গরমে যতেœর অভাবে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। অনেক সময় ত্বকের দাগ স্থায়ী হয়ে ওঠে, যা দেখতে দৃষ্টিকটু। পরামর্শ বিউটিশিয়ান দিয়েছেন তাছলিমা বেবি।
গরমে ত্বকে যেসব সমস্যা দেখা দেয় :

অতিরিক্ত গরমে ত্বক আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। জন্মগতভাবে ত্বক তিন ধরনের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ত্বক, শুষ্ক ত্বক ও তৈলাক্ত ত্বক। রোদ ও ধূলোবালি স্নিগ্ধ ও সতেজ ত্বকের বড় শত্রু। রোদের পোড়াভাব ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি বসে যায়। লোমকূপে ময়লা জমে মুখে ব্রণ হয় এবং রোদের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঘাম থেকে ঘামাচিসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কখনও কখনও র্যাশ হতেও দেখা যায়। ত্বক শুষ্ক হলে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায়, আর নমনীয়তা কমে গেলে ত্বকে ফাটল ধরে এবং বার্ধক্যের ছাপ ফুটে উঠে চেহারায়।

গরমে ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ :

ফেসওয়াশ :

গরমের দিনে ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বেশি যতœশীল হতে হয়। এজন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্লিসারিন-সমৃদ্ধ সাবান অথবা ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ। তবে গরমে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের গরমকালে কষ্ট হয় বেশি। তেলগ্রন্থিগুলো এ সময় সক্রিয় হয়ে উঠার কারণে তেল বের হয় বেশি। এজন্য তারা মেডিকেটেড ফেইস ওয়াশ ব্যবহার করলে ভালো ফল পেতে পারেন।

সানস্ক্রিন :

গরমের দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে সানস্ক্রিনের। রোদ থেকে রক্ষা পেতে বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করবেন, বিশেষ করে চোখের নীচের নমনীয় ত্বকের জন্য মেডিকেটেড সানস্ক্রিন এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলবিহীন সানস্ক্রিনই ব্যবহার করতে হবে। রোদে বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করবেন। সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তাতে যেন সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর এসপিএফ অন্তত ১৫ হয়। ওয়াটার প্রুফ সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন।

ক্রিম :

শুষ্ক ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য এবং বলিরেখা পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবসময় ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। অবশ্য ক্রিমের বদলে বেবি লোশনও ব্যবহার করতে পারেন। তবে গরমের দিনে ক্রিম হতে হবে তেলবিহীন। নতুবা ক্রিমের অতিরিক্ত তেল গরমে আরো বেশি সমস্যা তৈরি করবে।

কিছু সমস্যার সমাধান :

ক্স গরমে যাদের ত্বকে ঘামাচি হয়, তারা নিমপাতার রস লাগালে উপকার পাবেন। তেঁতো জাতীয় খাবার খান। ঘাম বেশি হলে ট্যালকম পাউডারের সাথে এক চিমটি খাবার সোডা ব্যবহার করুন।

ক্স গরমে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই রূপচর্চা করা জরুরী। ত্বক তৈলাক্ত হলে বার বার মুখ পরিষ্কার করতে হবে। শশা এবং মুশুরি ডাল একসঙ্গে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনার মুখের তেলতেলে ভাব কেটে যাবে।

ক্স গোলাপের পাপড়ি, খেঁজুর, দুধে ভিজিয়ে রাখুন, ২/৩ ঘণ্টা পর পেস্ট করে চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। পরে ঠান্ডা পানির সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন, ত্বক মসৃণ হবে। এ ছাড়া কমলালেবুর রস ভালো ময়েশ্চারের কাজ করে। এর সঙ্গে দুধ ও ময়দা মিশিয়ে মুখের ত্বক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত খসখসে ভাব থাকলে রাতে ঘুমানোর সময় ত্বক পরিষ্কার করে পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। সকালে ধুয়ে ফেলুন উপকার পাবেন। সারা বছরই ব্যবহার করতে পারেন। লাউয়ের রস, তরমুজের জুস বরফ করে মুখে ঘষুন। এতে রোদে পোড়াভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল মোলায়েম।

ক্স গরমে তৈলাক্ত ত্বক দ্রুত ঘেমে যায় ও ময়লা দ্রুত শুষে নেয়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি শশার রস পরিমাণমতো, আধা চা চামচ লেবুর রস, আধা চামচ গোলাপ জলে মিশিয়ে লোশনের মতো মুখে লাগিয়ে আধাঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন।

এভাবে সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচ দিন করুন।

ক্স গরমে অনেকের ত্বকে হিট র্যাশ বের হয়। হিট র্যাশ এড়াতে দইয়ের সঙ্গে হলুদ বা নিমপাতা বাটা মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এছাড়া খানিকটা লাউ থেঁতো করে এর সাথে তুলসী পাতা এবং চালের গুঁড়ো মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এতে র্যা শ হবে না আবার ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।

ক্স এ ভ্যাপসা গরমে ত্বকে তেলের পরিমাণটা একটু বেশিই থাকে। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করতে সিদ্ধ ওটস্, ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রস এবং থেঁতো করা আপেল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ক্স গরমে ব্রনের মাত্রা বেড়ে যায়। ব্রন এড়াতে সপ্তাহে তিন, চার বার চিরতার পানি এবং দুই-তিনটি কাঁচা হলুদ ও আখের গুঁড় খেতে পারেন। সব সময় মুখ পরিষ্কার রাখবেন। নিমপাতা, হলুদ, চিরতা ও মুলতানি মাটি এক সঙ্গে মিলিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।

ক্স রোদের প্রকট তাপের কারণে ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ দূর করার জন্য টমেটোর রস, কাঁচা হলুদের রস, ভুসিওয়ালা আটা মিশিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগান। গোলাপজল দিয়ে মুছে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা দুধ, লেবুর রস, পাকা পেঁপে, চন্দন, গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে নিয়ে পুরো ত্বকে লাগান, হালকা ম্যাসাজ করুন। ভালো ফল পাবেন।

কিছু টিপস:

ক্স গরমে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সঙ্গে সানগ্লাস ও ছাতা নিতে ভুলবেন না।

ক্স শুধু বাহ্যিক যতœ করলেই হবে না, প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ যতেœরও। গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল এবং কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

ক্স এ সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, এ জন্য গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। টক, ভাজাপোড়া এবং খুব বেশি গরম খাবার খাবেন না।

ক্স পঁচাবাসি খাবার এড়িয়ে চলুন।

ক্স রোদে বের হবার আগে সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না যেন। সানগ্লাস আপনার চোখকে রোদ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আপনার মধ্যে একটা স্মার্ট লুক নিয়ে আসবে।

ক্স বাইরে যেহেতু ঘন ঘন মুখ ধোয়া সম্ভব নয় তাই সঙ্গে ওয়েট টিস্যু রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলে নিজেকে অনেক ফ্রেশ ও সতেজ মনে হবে।

ক্স গরমে লেবুর শরবত হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এক চমৎকার পানীয়। শরবতে একটু লবণ ও চিনি মিশিয়ে নিন। চিনি শক্তি জোগাবে, আর লবণ পূরণ করবে আপনার শরীর থেকে ঘামের সাথে বেরিয়ে যাওয়া লবণের অভাবটুকু। আর লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। এই গরমে ভিটামিন সি ফিরিয়ে দেবে আপনার লাবণ্যতা।