শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > সারাদেশ > ঘোড়াশাল পৌরসভার উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে জনগণ: পৌর মেয়র

ঘোড়াশাল পৌরসভার উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে জনগণ: পৌর মেয়র

শেয়ার করুন

বিল্লাল হোসেন
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি ॥
ঢাকার অদূরে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ঘোড়াশাল পৌরসভার অবস্থান। ২৭.৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

এখানে ১ লাখ ১২ হাজার লোকের বাস। মোট ভোটার সংখ্যা ৫৮ হাজার ৩শ’ জন। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ঘোড়াশাল শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত।

এখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউরিয়া সার কারখানা, জুট মিল, ইস্পাত ও পেট্রোলিয়াম কারখানা রয়েছে। ঘোড়াশাল একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শরীফুল হক।

২০১৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন শরীফুল হক। দীর্ঘ সময় মেয়রের দায়িত্বে থেকে তিনি রাস্তাঘাট নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিটি সড়কের পাশে বাতি স্থাপন, আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম, পৌর কেন্দ্রীয় মসজিদ, পৌর ঈদগাহ নির্মাণসহ দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাসহ কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধির অভিযোগ, ‘সুযোগ-সুবিধার তুলনায় পৌরকরের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে। এ কারণে ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকটি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।’

এসব অভিযোগের জবাব ও নিজের সফলতার কথা জানাতে বাংলাভূমি’র মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র মো. শরীফুল হক। তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীর দোরগোড়ায় সেবা পোঁছে দেয়ার জন্য নিজেকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রেখেছি। গত ৮ বছরে যেসব উন্নয়ন কাজ করেছি তার সুফল এখন পৌরবাসী পাচ্ছেন।

আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারত না। শুকনো মৌসুমেও অনেক এলাকায় পানি আটকে থাকত। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা ছিল। রাতে পৌর এলাকার পথগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকত। নির্বাচিত হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি।

ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ডাম্পিংয়ের জায়গা ক্রয় করেছি। এডিপি, ইউজিপ-২সহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নের পৌরবাসীর জন্য একটি আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, একটি পৌর ঈদগাহ, একটি আধুনিক পৌর মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

এ তিনটি কাজ সম্পন্ন করেছি। পৌরসভার সৌন্দর্য্য বর্ধনে ঘোড়াশাল চত্বর এবং পলাশ বাসস্ট্যান্ড চত্বর নির্মাণ করেছি। বর্তমানে ২ প্রকল্পের আওতায় পৌরসভায় প্রায় ৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সম্প্রতি রেলস্টেশনের পাশে থাকা ঝোপঝাড় পরিস্কার করে ফুলের বাগান করে শহরের প্রবেশমুখে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার কাজ চলছে।

ইতিমধ্যে বড় বড় ৬টি ড্রেনসহ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে এসব ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান (দিলীপ) দ্বিতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার নির্দেশে ও পরার্মশক্রমে পৌর এলাকার যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি এবং এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় পৌরসভাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, যাবো।

পৌরসভার একাধিক পয়েন্টে মাদক বেচাকেনার অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। একদিকে এ সমস্যা নির্মূল সম্ভব নয়। তবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। পৌরসভায় যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ধরার জন্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শরীফুল হক বলেন, ‘অনেকে আছেন যারা ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা হওয়ার পর পৌর কর দেননি। কর দিয়ে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে এমনটা মনে হচ্ছে। আসলে সরকারিভাবে যা ট্যাক্স নির্ধারণ করা আছে তার চেয়ে অনেক কম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে।

আধুনিক পৌরসভা ও শতভাগ নাগরিক সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত হারে ট্যাক্স দিতে হবে।’ শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করেছি। পৌর এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।

মেয়েরা যেন স্কুল কোন বাঁধা ছাড়াই যেতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। চিহ্নিত বখাটেদের ব্যাপারে পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’ মেয়র বলেন, ‘বিএনপি জোট আমলে ঘোড়াশাল পৌরসভার কোনো উন্নয়নই হয়নি। এটি ছিল অবহেলিত একটি পৌরসভা। সেই পৌরসভাকে কোথায় নিয়ে এসেছি তা মানুষই দেখছে।