শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > অর্থ-বাণিজ্য > চার হাজার গাড়িতে কর ফাঁকি!

চার হাজার গাড়িতে কর ফাঁকি!

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরনো গাড়ি আমদানিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্যাক্স ফাঁকির ঘটনা ঘটতে চলেছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও ডিলারদের সংগঠন বারভিডার কয়েকজন নেতা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে চার হাজার গাড়ি বন্দর থেকে খালাস করার চেষ্টা করছেন। খুব শিগগিরই এসব গাড়ি ছাড় করা হতে পারে। গাড়িগুলো ছাড় করলে সরকার রাজস্ব হারাবে আটশ’ থেকে একহাজার কোটি টাকা।

রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন বছর আগে এই গাড়িগুলো আমদানি করেছেন বারভিডার কয়েকজন নেতা। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তারা এতদিন গাড়িগুলো ছাড় করেননি। নতুন বাজেটে ট্যাক্স কমানোর পর তারা গাড়িগুলো ছাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

জানা যায়, গাড়ি আমদানির পর কেউ গাড়ি ছাড় না করালে তা তিন মাসের মধ্যে নিলামে বিক্রি করার কথা। কিন্তু রাজস্ব বিভাগ তা করেনি। উপরন্তু তিন বছর তারা তাদের হেফাজতে রেখেছে। তারা কেন গাড়িগুলো নিলামে তোলেনি, এটি নিয়ে খোদ গাড়ি ব্যবসায়ীরাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা তাদের হেফাজতে রেখেছেন।

সূত্র জানায়, চার হাজার গাড়ির মধ্যে মংলা বন্দরে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার এবং চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে ৫০০ গাড়ি। মংলা বন্দরে শুধু হকস বের মালিক আবদুল হকের রয়েছে ৯০০ গাড়ি। মূলত তিনিই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার সিন্ডিকেটের নাটের গুরু। তিনি এখন গাড়িগুলো ছাড় করানোর জন্য রাজস্ব বোর্ডে দিনভর ধর্না দিচ্ছেন।

রাজস্ব বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হকস বের মালিক আবদুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওই কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি ট্যাক্স কমানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। অবশ্য নগদ নারায়ণ নিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি কার্পণ্য করেননি।

চলতি অর্থবছরে পুরনো গাড়ির ওপর ট্যাক্স কমিয়ে আমদানি শুল্ক ৫ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। নতুন বাজেট অনুযায়ী, এক বছরের কম পুরনো গাড়িতে কোনো অবচয় সুবিধা নেই। এক বছরের বেশি কিন্তু দুই বছরের কম পুরনো গাড়ির অবচয় সুবিধা দেওয়া হবে ৩০ শতাংশ। দুই বছরের বেশি কিন্তু তিন বছরের কম পুরনো গাড়িতে অবচয় সুবিধা ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, তিন বছরের বেশি কিন্তু চার বছরের কম পুরনো গাড়িতে অবচয় সুবিধা ৪০ শতাংশ। চার বছরের বেশি কিন্তু পাঁচ বছরের কম গাড়িতে অবচয় সুবিধা ৪৫ শতাংশ।

ট্যাক্স কমানোয় এই সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ওই গাড়ি ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, গাড়িগুলো তিন বছর আগে আমদানি করায় গেলে অর্থবছরে (২০১২-১৩) বাজেটে ধার্য করা করের আওতায় ছাড় করাতে হবে। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীরা ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের বাজেটে অনুমোদিত করের আওতায় গাড়ি ছাড় করাতে রাজস্ব বোর্ডে জোর লবিং করছেন।

সূত্র জানায়, রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যেই নতুন বাজেটের আওতায় গাড়িগুলো ছাড়ের অনুমতি দিয়েছে। খুব শিগগিরই ব্যবসায়ীরা ছাড় করিয়ে নেবেন বলে জানা গেছে।

রাজস্ব বোর্ড গাড়িগুলো ছাড় দিলে গাড়িপ্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার। গাড়িগুলোরে মধ্যে বিলাসবহুল গাড়িও রয়েছে। প্রাডো ব্র্যান্ডের প্রতিটি গাড়িতে রাজস্ব হারাবে ১০ লাখ টাকা।

এদিকে, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও গাড়ি আমদানিতে এমন পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেনি।

গাড়ি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স ফাঁকি সম্পর্কে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনকে কয়েকবার কল করলেও তিনি মোবাইল ধরেননি।