শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > চোখের জলে ঈদ কাটবে রানা প্লাজার শ্রমিকদের

চোখের জলে ঈদ কাটবে রানা প্লাজার শ্রমিকদের

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খেয়ে না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে রানা প্লাজার আহত শ্রমিক ও নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের। আহতদের অনেকেই আর ভবিষ্যতে করতে পারবেন না ভারি কোনো কাজ। আসন্ন ঈদ যেন চোখের জলেই কাটাতে হবে এসব শ্রমিকদের।

এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ শ্রমিকই পাননি কোনো সাহায্য। ফলে হাজারো শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ধসে পড়া রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় অবস্থিত ফ্যানটম গার্মেন্টেসের শ্রমিক নিরু আজও সাভার ট্র্যাজেডির চিহ্ন চোখে বয়ে বেড়াচ্ছেন। তার এক চোখ প্রায় অন্ধ। ভেঙে আছে নাকের হার। মাথার আঘাতও গুরুতর। প্রয়োজন তিনটি অপারেশন। তাতে দরকার হবে আড়াই লাখ টাকা।

‘যেখানে খাইতেই পাইতাছি না সেখানে এতো টাকা পামু কৈ আফা’- বলেন নিরু।

চিকিৎসার জন্য সরকারের কোনো সহায়তা পাননি নিরু। বিজিএমইএ থেকে এক মাসের বেতন ছাড়া অন্য কোনো সহায়তাও জোটেনি তার ভাগ্যে। রাজবাড়ীতে আছে নিরুর মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছোট সন্তানের জন্ম হয়েছে রানা প্লাজা ধসের চারদিন পরে। তাই তার ঈদে কোনো চাহিদা নেই। কিন্তু মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। মেয়ে বলেছে, আব্বু আমার জন্য জামা এনো। কিন্তু আজ আর নিরুর জামা কেনার সামর্থ্য নেই, তাই ঈদে বাড়িও যাচ্ছেন না।

চিকিৎসা করতে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে জমি, হারাতে হয়েছে গোয়ালের গরু। এভাবেই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকেই যেন এগিয়ে যাচ্ছেন নিরু।

অন্যদিকে ঈদের দিন সকালে ছেলেকে সেমাই রান্না করে খাওয়াতে পারবেন কিনা তা জানেন না শিউলি। শিউলি একই ভবনের নিউ ওয়েভ স্টাইলের সিনিয়র অপারেটর। ‘একমাত্র ছেলের জন্য এবার একটি গেঞ্জিও কিনতে পারিনি’ বলেই চোখের জল যেন ওড়নায় লুকানোর চেষ্টা করেন শিউলি। বলেন, এ পর্যন্ত ঈদের কোনো বাজার করতে পারিনি। এমনকি সকালে সেমাই রান্না করতে পারবো কিনা তাও জানি না।

রানা প্লাজার ৬ষ্ঠ তলার ইথারটেক গার্মেন্টসের শাবানা আক্তার অর্থের অভাবে ওষুধ পর্যন্ত খেতে পারছেন না। ডাক্তার বলেছেন, ৬ মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে। তবুও কাজ খুঁজছেন শাবানা। কিন্তু কোনো কাজ নেই। ঈদ নিয়ে বলেন, আপা আমাগো ঈদ! ঘুমাইলেই খালি লাশ দেখি।  সব মিলিয়ে মাত্র ১৬ হাজার টাকা পেয়েছি।

চার জনের পরিবার নিয়ে পথে বসতে চলেছেন ইথারটেকের শ্রমিক আবদুল খালেকও। তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত সাহায্য বলতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছি। এর ওপর এক টাকাও পাই নাই। আমি এতো অসুস্থ যে, অন্য কোথাও কাজও করতে পারছি না। পরিবার নিয়ে কিভাবে দিনযাপন করবো, তাই বুঝতেছি না। ঈদের কথা কি বলবো?

এভাবেই প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে যেন মরতে বসেছেন রানা প্লাজার তিগ্রস্থ শ্রমিকরা। চোখে-মুখে তাদের রাজ্যের হতাশা। তাদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যতও দাঁড়িয়েছে ধ্বংসের মুখে।

রানা প্লাজার বেশিরভাগ আহত শ্রমিকই আর ভবিষ্যতে কাজ করতে পারবেন না। ফলে আগামী ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।

গত ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১১৩১ জন শ্রমিক নিহত হন। প্রায় ২ হাজার ৫শ’ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তাদের বেশিরভাগই গুরুতর আহত হয়ে কর্মমতা হারিয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ৩শ’ শ্রমিক।

দুর্ঘটনার পর ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও আহত এসব শ্রমিক ও নিখোঁজদের পরিবারের বেশিরভাগই সরকার বা তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএদর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিপূরণ পাননি। আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও হয়নি।