বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে

চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের আড়ৎ চাঁদপুর মাছঘাট। এখানে এখন পদ্মা ও সাগরের প্রচুর ইলিশমাছ আমদানি হওয়ায় বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। বরিশাল, ভোলা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, জাহাজমাড়া, আলমঘাট, লগিমারাসহ দেশের দণিাঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ পদ্মা ও সাগরের ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো চাঁদপুর মাছঘাটে আসছে। চাঁদপুরের মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ইলিশ রফতানিকাজে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে।

গত ২০ দিন আগেও ইলিশের দাম অনেক বেশি থাকলেও এখন অনেকটা কমে এসেছে। এ মাছঘাটে ৫০-৬০ জন আড়ৎদার রয়েছেন। এ মৎস্য ব্যবসায় ছয়-সাত শ’ মৎস্যশ্রমিক জড়িত রয়েছে বিভিন্নভাবে। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট এখন ইলিশমাছে সয়লাব। পাইকারি মূল্য নির্ধারণের পর প্যাকেটজাত ও বাক্সভর্তি করে ট্রেন, ট্রাক, বাস, লঞ্চ ও কভারভ্যানে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, মৌলভী বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের রফতানি ও আমদানিকারক মোবারক হোসেন জানান, চাঁদপুর থেকে ইলিশমাছ ঢাকা ও কুমিল্লা হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরা পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকা পরে কাভার্ডভ্যানে বেনাপোল দিয়ে এবং কুমিল্লা আখাউড়া সিঙ্গারবেল, বিবিরবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইলিশমাছ ভারতে পাচার হচ্ছে। পাচারকারীদের এভাবে অবৈধভাবে ইলিশ পাচারের ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী মানিক জমাদার জানান, আগে এলসি খোলা থাকলেও গত বছর সরকার এলসি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়ায় ভারতে মাছ পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে চাঁদপুরের ইলিশ ভারত যাচ্ছে। এতে করে সরকার বিশাল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দণিাঞ্চলে পদ্মায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও ভরা মওসুম থাকা সত্ত্বেও মেঘনায় তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর নাব্যতা ও দূষিত পানির কারণে মেঘনায় তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা। তার পরও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দণিাঞ্চলের মাছ পেয়ে মহা খুশি। মৎস্যশ্রমিকেরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।

মৎস্যশ্রমিকরা জানান, বিগত বছরগুলো থেকে চাঁদপুরে প্রচুর ইলিশ আসছে। মৎস্য ব্যবসায়ী মো: শবেবরাত জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বরফ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক তি হচ্ছে। পর্যাপ্ত বরফের অভাবে ইলিশ মাছ সংরণ করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমরা জাটকা নিধনে অধিকতর অভিযান পরিচালনা করেছি; কিন্তু জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তারা প্রভাবশালীদের সহায়তা নিয়ে বেশি করে জাটকা নিধন করেছে।

এ কারণে ইলিশের ভর মওসুমে কিছুটা আকাল দেখা দিয়েছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কাক্সিত রুপালি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিকে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় চাঁদপুর হয়ে প্রতিদিন ট্রেন, লঞ্চ, ট্রাক, বাস ও কাভার্ডভ্যানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ পাঠানো হয়। দিন-রাত শত শত মৎস্যশ্রমিক ইলিশ মাছ ওজন দিয়ে বাক্স ও ঝুড়ি ভর্তি করছে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য।

বর্তমানে ৮ থেকে ৯ শ’ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে ইলিশ রফতানির পাশাপাশি চাঁদপুরের স্থানীয় বাজারেও বিক্রি হচ্ছে কম দামে। চাঁদপুর বড় স্টেশন রেলের পার্সেল কাক সহিদ উল্যাহ সরকার জানান, ট্রেনের মালবাহী বগি স্বল্পতার কারণে তেমন একটা মাছ ট্রেনে পাঠাতে না পারলেও প্রতিদিন ৯০-১০০ মণ ইলিশ ট্রেনে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাকি মাছই যাচ্ছে সড়ক ও নদীপথে।

তবে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ট্রেনে ইলিশ মাছ পাঠিয়ে। বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পদ্মার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর থেকে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। নদীর নাব্যতা ও দূষিত পানির কারণসহ কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে জাটকা নিধনের ফলে মেঘনায় তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশের ইলিশ সম্পদ টিকিয়ে রাখার লে সরকার সব রকম পদপে নেবে এমনটি প্রত্যাশা সবার। বেনাপোল সীমান্তে ৭৫০ কেজি ইলিশ আটক বেনাপোল সংবাদদাতা জানান, ভারতে পাচারকালে বেনাপোলের গাতিপাড়া সীমান্ত থেকে সোমবার ভোরে ৭৫০ কেজি ইলিশ মাছ আটক করেছে বিজিবি। ২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তায়েফ উল হক জানান, চোরাকারবারিরা গাতিপাড়া সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছের চালান ভারতে পাচার করছে।

এ ধরনের সংবাদের ভিত্তিতে দৌলতপুর বিজিবি সদস্যরা গাতিপাড়া সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৫০ কেজি ইলিশ মাছ আটক করতে সম হয়। অভিযানকালে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। আটক ইলিশ বেনাপোল কাস্টম হাউজে জমা দেয়ার পর সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা হয়েছে।