শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > ছড়িয়ে পড়ছে জাল টাকা

ছড়িয়ে পড়ছে জাল টাকা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ছে জাল টাকা। মাছবাজার থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার, মার্কেট, বিপণিবিতান থেকে ব্যাংক- সব স্থানেই পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকা। ঈদ সামনে রেখে নানা কৌশলে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে চক্রগুলো। গোয়েন্দারা বলছেন, বিপুল অঙ্কের জাল টাকা ঢুকছে সীমান্তের ওপার থেকে। চাহিদা মেটাতে রাজধানীতেও গড়ে তোলা হয়েছে তৈরির কারখানা। এ চক্রে ভারত, পাকিস্তান ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত জাল নোটের কারবারি। উদ্ধার হয়েছে ১০০ কোটি টাকার জাল নোট ও এগুলো তৈরির সরঞ্জাম। শনাক্ত হয়েছে সাতটি জাল টাকা তৈরির কারখানা। আরও অন্তত ১৫টি কারখানা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সর্বশেষ সোমবার রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পান গোয়েন্দারা। এ ছাড়া আরও দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট ও টাকা তৈরির কোটি টাকার সরঞ্জাম। গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের তিন নারী সদস্যকে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র জাল টাকার ব্যবসা করে আসছে। জাল টাকার তৈরির বেশ কয়েকজনের নাম পুলিশের কাছে রয়েছে। এদের মধ্যে আছে তৈরির মূল কারিগর জাকির মাস্টার ও কাওসারের নামও। এবার রোজার শুরু থেকেই তারা জাল টাকার ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তাদের এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের নাম আছে পুলিশের খাতায়।

তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জাল টাকা চক্রের সহস্রাধিক এজেন্ট এখন ঢাকায় বেশ তৎপর। তারা নতুন নতুন কৌশল নিয়ে বাজারে সক্রিয়। আর এসব জাল নোটের ছড়াছড়িতে তিগ্রস্ত হচ্ছে সহজ-সরল সাধারণ মানুষ। ১০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোটের পাশাপাশি ২০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ল্য করা যাচ্ছে বাজারে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। সূত্র জানায়, জানুয়ারি ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জাল নোট সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে জড়িতদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ছয় সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জাল নোটের মামলা হলেও অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি হচ্ছে না। ১৯৭৪ সালের আইনে জাল টাকা বা জাল স্ট্যাম্পের সঙ্গে জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল।

এরপর ১৯৮৭ সালের ১৯ জানুয়ারি আইনটি সংশোধন করে জাল নোটের সঙ্গে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড বা ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিতের বিধান রাখা হয়। আইন থাকলেও এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে এমন কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন স্থানে যেসব জাল নোট ধরা পড়ে থাকে এর সঠিক পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে জাল নোট ধরা পড়লে তা যথাযথ কর্তৃপরে মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জাল নোট ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ক্যাশ কর্মকর্তারা তা নষ্ট করে ফেলেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যন্ত পৌঁছায় না জাল নোটের হিসাব।

গ্রাহকদের অভিযোগ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও বেরিয়ে আসছে জাল নোট। বুথ থেকে জাল নোট বেরিয়ে এলে গ্রাহকের পে তা আর বদলে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই গ্রাহকদের শতভাগ তির শিকার হতে হয় এতে

যদিও ব্যাংকের প থেকে বলা হয়, এটিএমে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন থাকায় তা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। একাধিক সূত্র জানায়, বিশাল জালিয়াত সিন্ডিকেট দেশব্যাপী নিয়ন্ত্রণ করছে জাল টাকার ব্যবসা। এর সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও জড়িত। জাল নোট নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে প্রতারকরা নানা ধরনের সংকেত ব্যবহার করে থাকে। জাল এক হাজার টাকার নোটকে জুব্বা, ৫০০ টাকার জাল নোটকে পাঞ্জাবি এবং ১০০ টাকার নোটকে ডাকা হয় ধোপা বলে। অপর এক সূত্র জানায়, জাল টাকা গ্রামেগঞ্জে এজেন্টদের কাছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করছে এ সংঘবদ্ধ চক্র। ১০০ টাকার জাল নোট ৪০ টাকায়, ৫০০ টাকারটি ২০০ টাকায় এবং এক হাজার টাকার জাল নোট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে জাল টাকা ও চোরাচালান ব্যবসার অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে দেশি-বিদেশি জঙ্গিরা।

সম্প্রতি ২ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও এগুলো তৈরির নানা সরঞ্জাম নিয়ে ভারতীয় নাগরিকসহ তিনজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকরা হলেন ভারতীয় নাগরিক মাসুদুর রহমান (৪০), আবদুল বাসেত (৪১) ও শাহিন (৪০)। রাজধানীর মালিবাগে মৌবন হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবার সদস্য মোহাম্মদ দানিশ ও মোহাম্মদ সাব্বির আলী নামে দুই পাকিস্তানিকে।

পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ দানিশ ও মোহাম্মদ সাব্বির আলী জাল মুদ্রা ব্যবসায়ী দলের নেতা হিসেবে কাজ করছিলেন। রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন চানখাঁরপুল এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবার পাকিস্তানি জঙ্গি মোহাম্মদ মুবাশ্বের শরীফ ওরফে মুবিন ওরফে ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ হাজার টাকার জাল নোট। মুবাশ্বের ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বায়িং ব্যবসার আড়ালে মুদ্রা পাচারের কাজ করে আসছিল বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই জাল টাকা চেনেন না। এ কারণে খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা।