আসাদুজ্জামান ॥
গাজীপুর: রেলস্টেশন ও বস্তি বলতে আমাদের মাথায় প্রথমেই যে বিষয়টি ঘুরপাক খায় সেটি হচ্ছে, মাদকের আখড়া, ছিনতাই, চুরি, দেহ ব্যবসা, ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা অসামাজিক অপকর্মের এক বিশাল এলাকা। নানা ধরনের অনিয়মে ভরপুর অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের কাহিনী শোনা যায় মানুষের মুখ থেকে। তবে আজকের বিষয়টি ভিন্ন ধর্মী। কয়লার খনিতে যেমন অমূল্য রতন হীরের সন্ধান মিলে ঠিক তেমনি একটি ‘‘মুসাফির ইশকুল’’।
‘আমরা কিছু মুসাফির, গড়ে তুলবো সুখের নীড়’ এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে জয়দেবপুর রেলস্টেশন এর শিশু, ছিন্নমূল পথ শিশু যাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কাজ করছে ‘মুসাফির ইশকুল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পথ শিশুদেরও রয়েছে অধিকার, শিক্ষার অধিকার। দারিদ্রতার জন্য যে সকল শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, সে সকল সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ঘিরেই মুসাফির ইশকুলের কার্যক্রম। মুসাফির ইশকুলের শিশুদের মেধা বিকাশে সর্বদা প্রতি নিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সদস্যবৃন্দ। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ গড়ার কারিগর তৈরীর মহান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে। এমন মহান উদ্যোগের উদ্যোক্তা মুসাফির ইমরান নামে এক তরুণ। তিনি বর্তমানে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ পর্বে পড়ালেখা করছেন। তার সাথে রয়েছে কিছু তরুণ শিক্ষার্থী যাদের সাথে নিয়েই মুসাফির ইমরান এই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান ৫০ উর্ধ্ব শিশুদের নিয়ে সরাসরি এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ১৫ জন সদস্য। এই সংগঠনের সকল সদস্যরা অন্যন্য, চাননা কোন খ্যাতি, আশা নেই কোন পুরস্কারেরও। তারা জানেন কিভাবে ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা বিক্রি করতে হয়। তারা ভালবাসেন সেই শিশুদের সাথে সময় কাটাতে, ভালবাসেন তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে। তাদের সুশিক্ষা প্রদানের বিনিময় হিসেবে তারা বেশ ভালোবাসায় সিক্ত সে সকল কোমলমতি শিশুদের ভালোবাসায়। তাদের ইচ্ছে এ সকল শিশুরা এক সময় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। পৌঁছাবে তাদের নির্দিষ্ট স্বপ্নে। সুবিধা বঞ্চিত প্রতিটি শিশুকে “মুসাফির ইশকুলের” প্রত্যেকটি সদস্য তুলে দিচ্ছেন শিশুদের স্বপ্ন মাদুরে। যার ওপরে ভর করে তারাও এক সময় বিশ্ব জয় করবে। নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে ব্রতীকরবে। সাপ্তাহিক-এর পাঠদানের পাশা পাশি “মুসাফির ইশকুলে” শিক্ষা দেওয়া হয় নৈতিকতার সচেতন করা হয়নি অধিকার সম্বন্ধে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে সামনে রেখে প্রতিটি শিশুকে সচেতন করা হয় প্রচলিত সকল সামাজিক রাষ্ট্রীয় সম্বন্ধে যাতে তারা নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন থাকে রোগ-ব্যাধি থেকে প্রাথমিক মুক্তি লাভের উপায় সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া হয় শিশুদের মেধাবিকাশের জন্য শিশুদের সাথে এমন এক নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা হয় যেন সবাই একই পরিবারের শিশুদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষা উপকরণ এর পাশাপাশি প্রত্যেক সপ্তাহে নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া প্রতি ঈদে নতুন পোষাক, ঈদের খাদ্য সামগ্রী, বিভিন্ন উৎসবে পোষাক ও অনুষ্ঠান উদযাপন, স্কুল ড্রেস, স্কুলব্যাগ, কেডস ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয় নিয়মিত।
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা সমাজের কল্যাণে নানান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নানা সময় নানাদিক দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। নিত্যদিনের শারীরিক শ্রম এর সাথে যথাসাধ্য সকল সদস্যরাই অর্থনৈতিক ভাবেও সাহায্য করে থাকেন। শিশুদের বই, খাতা, কলম, স্কুল ড্রেস, বোরখা, কেডসসহ শিক্ষা উপকরণ ক্রয় অনেক টাকা ব্যয় হয় যা উক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে সম্পূর্ণ বহন করা সম্ভব নয়। মানবিক দায়িত্ববোধ উদ্বুদ্ধ করে আমাদের সকলের উচিত এ সকল অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো যারা স্বপ্ন দেখে নতুন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। তাই আপনাদের মধ্য থেকে কেউ সাহায্য করলে এ সকল শিশু তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে আরও এক ধাপ এগোতে সহায়তা পাবে। আপনারা চাইলে সরাসরি শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করেও দিতে পারেন।