মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > টাইগারদের কাছে আরো জয়ের প্রত্যাশা

টাইগারদের কাছে আরো জয়ের প্রত্যাশা

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
ঢাকা : সর্ববাঙালীর এভাবে এক জোয়ারে মেতে ওঠার উৎসব খুব কম আসে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালীর একই গর্বে বুক ফেঁপে ওঠার উপলক্ষও সচরাচর হয় না। একেই বলে জাতীয়তা। ঠিক এখানটাতেই আমরা সকল বাঙালী এককাতারে এসে দাঁড়াই, তখন আমাদের অবস্থান হয় সকল ব্যবধানের ঊর্ধ্বে। অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেডের ওভালে সোমবার বাঙালীর জীবনে মেতে ওঠার তেমনি একটি অনন্য উপলক্ষ তৈরি হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা নিশ্চয় সে জয়ে আপ্লুত হয়েছে। টিভি পর্দায় নিজের দেশের প্রতিনিধিদের বিজয়ে দেশজুড়ে আনন্দে উত্তাল হয়েছে সকলে। যে ঢেউ আছড়ে পড়েছে আবালবৃদ্ধবণিতার আটপৌরে জীবনে। ক্রিকেট ইতিহাসের গর্বের আসর বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ক্রিকেট খেলার খোদ আবিষ্কারক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আনন্দে ভাসিয়েছে পুরো জাতিকে।
ক্রিকেট খেলা দলীয় খেলা। সেখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য জেতার জন্য ভূমিকা রাখে, কিন্তু খেলার পুরোটা জুড়ে সবাইকে নিজ নিজ যোগ্যতা প্রকাশ করে তবেই দলকে জেতাতে হয়। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তেমনি সর্বোমুখী নৈপুণ্য দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। রুবেল-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের বিশেষ নৈপুণ্যে ও মাশরাফির সময়োপযোগী ক্যাপ্টেন্সিতে বাংলাদেশের ন্যায্য অর্জন এই জয়, যা প্রশ্নাতীত।
সামনে আরও কিছু সম্ভাবনা এ মুহূর্তে বাঙালীর মানসমনে দোল খাচ্ছে। বার বার জয়ের আনন্দে কোন জাতি না ভাসতে চায়! সেখানে আমাদের বাঙালী জাতি তো জন্মগতভাবে আবেগী। তবে আবেগ অনেক ভাল কিছুর পরিবর্তন করতে পারে। যেমন দেখা গেল জয়ের আবেগময় ঘটনা ঘটার পর দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামান্য হলেও পরিবর্তন এনেছে। বিরোধী দল তাদের চলমান হরতাল-অবরোধ এই বিজয় আনন্দে শিথিল করেছে, যা বিজয়ের জোরালো আওয়াজের নিচে হয়তো চাপা পড়ে গেছে, কিন্তু এও আমাদের জাতীয়তাবোধ। যার জন্য আমরা সব ভুলে একসাথে মাততে পারি, আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি।
যাই হোক, ঐ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে বিশ্বকাপের সেরা নৈপুণ্য দেখানো দল পাশের দেশ ভারত। আমরা তাদের সাথেও জিততে চাই। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ মার্চ। এর আগে অবশ্য নিউজিল্যান্ডকে অনেকবার পরাজিত করার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের, নিউজিল্যান্ড হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশের কাছে দুই দুইবার। তার পরও তাদের হালকা করে নেওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া স্বাগতিক হওয়াতে তারা নিজের দেশের মাঠ ও আবহাওয়াজনিত কারণে এগিয়ে থাকবে। যদিও বাংলাদেশও পর পর দুই জয়ে দারুন আত্মবিশ্বাসে আছে। বরঞ্চ ভয় আছে, অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভুগে তারা নিজেদের খেই হারানোর। তাই যদি হয়, তাহলে তা খুব খারাপ হবে। এজন্য অবশ্য কিছু সতর্কতা কোচ ও ক্রিকাটারদের গ্রহণ করা আবশ্যক। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে তারা যাতে নিজেদের খেলায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে তার জন্য সকল প্রকার উচ্ছ্বাসধ্বনী, অতিরিক্ত প্রশংসা ও উন্মাদনা থেকে গা বাঁচাতে হবে ক্রিকেটারদের। অনেক সময় দেখা গেছে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের পরবর্তীতে যাতে নিজেদের মনোসংযোগে চিড় না ধরে সেজন্য বিখ্যাত ক্রিকেটাররা ও দল পত্রিকা পড়া থেকে বিরত থাকে। তা ছাড়া মধ্যবর্তী সময়ে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধনদের সাথে ফোনালাপ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। আমাদের মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যেহেতু স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তাদেরও উচিত নিচে না তাকানো। শুধু অনুশীলন ও পরবর্তী খেলায় মনোযোগ ফেরানো তাদের সব থেকে জরুরী। অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসে খেই হারালেই তার ফল ভাল হবে না।
দেশের সামগ্রিক দূরবস্থার বিপরীতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের এই অর্জন আমাদের কাছে বিরাট কিছু। বরাবরই বড়, কিন্তু গভীর অন্ধকারে সামান্য আলোও দিশা ঠিক করতে উপযোগী হয়। আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে যেমন ভালবাসি, তেমনি চাই তারা আমাদের সকল গ্লানিকে ঘুচিয়ে দিক ধারাবাহিক অর্জন দিয়ে। যাতে আমরা মেতে উঠতে পারি জাতিয়ভাবে একই পতাকার গর্বে একাট্টা হয়ে।