শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > রাজনীতি > ‘টার্গেট’ ঢাকা, আগে-ভাগেই মাঠে জাপার প্রার্থীরা

‘টার্গেট’ ঢাকা, আগে-ভাগেই মাঠে জাপার প্রার্থীরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশব্যাপী দলের সামর্থ্য জানান দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এ চ্যালেঞ্জে তাদের প্রধান টার্গেট ঢাকা। এখানকার আসনগুলোতে মরণ কামড় বসাতে চায় দলটি। এজন্য কয়েকটি আসন ধরে আগে-ভাগেই মাঠে নেমে গেছেন এরইমধ্যে ঘোষিত প্রার্থীরা। নির্বাচনের ঠিক আগে যেভাবে হাটে-মাঠে-ঘাটে প্রচারণা চলে, তেমনিভাবে প্রচারণা চালানোর খবর পাওয়া গেছে অনেক আসনে।

প্রচারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছেন ঢাকা-৫ ও ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থীরা। ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী আংশিক) আসনের মীর আব্দুস সবুর আসুদকে অনেক আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ঘোষণার পর থেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

অন্যান্য দলের প্রার্থীরা যখন সীমিত সভা-সমাবেশে আটকে আছেন, তখন জাপার এই প্রার্থী যাচ্ছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। শুক্রবারও (১০ আগস্ট) তাকে নির্বাচনীয় এলাকার ঘোলমারা, ঠুলঠুলি ও শীবপুর গ্রামে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।

এদিন তিনি মহল্লার মুদি দোকান থেকে ক্ষেতে কর্মরত শ্রমিকের সঙ্গে গিয়েও কুশলবিনিময় করেন। এসময় তিনি এরশাদ সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন।

সাবেক ফুটবলার হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে আসুদের খ্যাতি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। বংশ-পরম্পরায় স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় রয়েছেন বাড়তি সুবিধায়ও। আবার দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন টিভি টকশোর পরিচিত-মুখ মীর আব্দুস সবুর আসুদ।

ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি তার, দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় যুব সংহতির। নানা কারণে সবসময়েই এলাকাবাসীর সঙ্গে তার রয়েছে নির্বিঘ্ন যোগাযোগ। এছাড়া আগে-ভাগেই দ্বারে দ্বারে যাওয়ার এলাকার লোকজনও তাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন।

মীর আব্দুস সবুর আসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধ, সায়েবাদ টার্মিনাল, স্টেডিয়াম, পানি শোধনাগার, এরশাদ জনপদ, মুক্তিসরণি, সৈয়দ ফারুক সড়ক ও ধোলাইপাড় সড়কে গ্যাস, বিদুৎ সংযোগ, রাস্তা-ঘাট, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, হাটবাজারসহ সর্বোপরি এরশাদ আমলের উন্নয়ন, সুশাসন ও সংস্কারের কারণে সুবিধায় আছি। মানুষ এখন গেলেই বলে আমরা এরশাদের সময়ে ভালো ছিলাম।

‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয় এবং পরবর্তী উপ-নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা), কুড়িগ্রামে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিজয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ারই প্রমাণ করে। এরশাদের শাসনামলে খুন, গুম, ধর্ষণ, ব্যাংক লুট, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতার দৌরাত্ম্য ছিল না। ছিল না দুর্নীতি দুঃশাসন। বাজারে দ্রব্যমূল্য ক্রমক্ষমতার মধ্যে ছিল। মানুষ উপলব্ধি করে, তারা আবারও এরশাদের শাসনামলে ফিরে যেতে যায়।’

মীর আসুদ আরও বলেন, তিন-চার বছর ধরে মাঠে আছি। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, কর্মীসভা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। বাবা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মীর আবদুর রাজ্জাক এলাকার বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছেন, লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছেন। এলাকায় স্কুল, মসজিদসহ নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বংশ-পরম্পরায় আমি এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। দলের পক্ষ থেকেও আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ চালাতে বলা হয়েছে।

ভৌগোলিকভাবেও অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জানিয়ে মীর আসুদ বলেন, নিজের নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মাতুয়াইল ইউনিয়নে আমার বাড়ি। উত্তরে ডেমরা ইউনিয়ন, পূর্বে সারুলিয়া ইউনিয়ন ও পশ্চিম-দক্ষিণে দনিয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকায় ভোটের সংখ্যা চার লাখ পঁচিশ হাজার। মোট ভোটের ৮৫ শতাংশ এই এলাকার বসবাস করে। অতীতে এই এলাকার প্রার্থীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে এসেছেন। যেখানেই যাচ্ছি মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তারা কথা দিচ্ছেন, ’৮৬ এবং ’৮৮ সালের নির্বাচনের জাতীয় পার্টির এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে ‘পল্লীবন্ধু’ এরশাদকে আবারও উন্নয়ন এবং সুশাসনের সুযোগ দেবে।

অন্যদিকে ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনে বর্তমান এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা আবারও নির্বাচিত হতে দিনরাত মাঠে ঘুরছেন। বর্তমান এমপি হওয়ায় নানান রকম সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যোগ দিচ্ছেন। তাকেই এবারও প্রার্থী করা হবে এটা অনেকটা নিশ্চিত। যদি জোট না হয় তাতেও যেন লাঙলের বিজয় ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে তৎপর আবু হোসেন বাবলা।

আর তুরুপের তাস হিসেবে রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজে। তিনি এবার আগে ভাগেই ঢাকা-১৬ (পল্লবী-রূপনগর) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন এরশাদ।

ঢাকা ‘টার্গেট’ কেন
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে শুধু তৎকালীন রাজশাহী বিভাগ থেকে ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়ে আসে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। অন্য আসনগুলোতে জাপা প্রার্থীদের চরম ভরাডুবি হয়।

তখন এরশাদের দলকে আঞ্চলিক পার্টি হিসেবে ব্যঙ্গ করা হতো। সেই দুর্নাম ঘোচাতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলের নিশ্চিত আসন ছেড়ে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আসনে প্রার্থী দেয় জাপা। এবারও ২০০১ সালের দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফিরছে জাপাকে। সে কারণে সারাদেশে কিছু আসন টার্গেট করে আগে-ভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন দলের প্রার্থীরা। এমনকি অনেক আসনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক নামও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে।
বাংলানিউজ