শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিধান রেখেই শ্রম আইন সংশোধনী বিল পাস

ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিধান রেখেই শ্রম আইন সংশোধনী বিল পাস

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারখানায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করার বিধান রেখে আলোচিত ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত করা জিএসপি সুবিধা পেতে এ আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। গতকাল সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। অনুপস্থিতির কারণে বিরোধী দলীয় সদস্যদের আনা বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই প্রস্তাব সংসদে উত্থাপিত হয়নি। তবে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন মহাজোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। কিন্তু মন্ত্রী তা গ্রহণ করেননি। পরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও আওয়ামী লীগের জুনায়েদ আহমেদ পলকের ১২টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

বিলের ওপর আলোচনায় শ্রমমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব বলে শ্রম আইন সংশোধনে এ বিলটি আনা হয়েছে। এ বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অনেক আলাপ-আলোচনার পর বিলটি আনা হয়েছে। তিনি বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আইনটি পাসের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সে সময় শ্রমিকদের হত্যা-নির্যাতন চালানো হয়। আর এখন তাদের একজন হেফাজতের আমির আল্লামা শফী গার্মেন্ট শিল্পে নারীদের কাজ না করার ছবক দিচ্ছেন। আর বিরোধী দলীয় নেত্রী জিএসপি বাতিলের সুপারিশ করছেন। তিনি আরও বলেন, এ আইনটি পাস হলে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত করা জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।

পাস হওয়া শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে ৪৬ ধারায় নতুন একটি উপ-ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে মালিক সংগঠন বা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কনফেডারেশনের কাছ থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে। এবিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হবে।

আইনের ৪ ধারায় যুক্ত ১১নং উপধারায় বলা হয়েছেÑ কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজের জন্য কোনো অস্থায়ী অর্থাৎ সাময়িক, দৈনিকভিত্তিক ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। এতে বলা হয়েছেÑ কোনো শ্রমিকের শিক্ষানবিশকাল শেষে বা তিন মাস মেয়াদ বৃদ্ধি শেষে কনফারমেশন লেটার না দেওয়া হলেও তিনি স্থায়ী বলে গণ্য হবেন। আর চিনি কল, চাতাল প্রভৃতি শিল্প ও মৌসুমি কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের বছরের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিলের ১৪ ধারায় বলা হয়েছেÑ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে কোনো শ্রমিককে তার বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। বিলের ১৩ ধারায় বলা হয়েছেÑ কোনো শ্রমিক বিনা নোটিশে ১০দিনের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাকে ১০ দিনের সময় দিয়ে তাকে ছাঁটাই করা যাবে।

বিলের ২৭ ধারায় বলা হয়েছেÑ ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকুরি করেন এমন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকতে হবে। পেশাগত রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

সংশোধনী আইনে বলা হয়েছেÑ ৫০ জনের বেশি শ্রমিক আছেন এমন কারখানায় সেফটি কমিটি থাকতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন মহড়া দিতে হবে। কারখানায় আবাসনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম একশ স্থায়ী শ্রমিক থাকলে সেখানে গ্র“প বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বিলে শ্রমিকদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছেÑ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রম আইনকে যুগোপযোগী বিশেষ করে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নিশ্চিত, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া সহজ, মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইস্তেহারে এ প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিল।

বহুল প্রত্যাশিত এ বিলটি গত ৫ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি সংশিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধির মতামত নিয়ে বেশকিছু সংশোধনীসহ বিলটি পাসের সুপারিশ করে।