শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > ডুবতে বসেছে পাটশিল্প

ডুবতে বসেছে পাটশিল্প

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবন-রহস্য আবিষ্কারে একদিকে বাংলাদেশ পাটের আন্তর্জাতিক নায়ক। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে রফতানি বাজার ধসে পড়ায় দেশে আবারো পাট নৈরাশ্যের নিশানা। সরকার এ সংকটকে ক্ষণস্থায়ী মনে করলেও ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তারা বলছেন, রফতানি বাজারের সংকটে পাট নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের ধ্বংসস্তূপে কৃষক, রফতানিকারক ও শিল্পমালিকরা।

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কাঁচা পাট রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে। পাট ও চটের বস্তায় কমপক্ষে ২৫ ও সুতায় ৫ শতাংশ রফতানি কমবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) জুলাই-আগস্টের তথ্য রফতানি বাজারের এ প্রবণতাকেই সমর্থন করছে।

সংস্থাটি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের (২০১২-১৩) জুলাই ও আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের (২০১৩-১৪) একই সময়ে কাঁচা পাট রফতানি কমেছে ৪৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া পণ্য রফতানির লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৬৬ দশমকি ৪৯ শতাংশ। আবার বস্তা ও চটের রফতানি কমেছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। পণ্যটির রফতানি লক্ষ্যের মাত্র অর্ধেক অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি পিছিয়ে আছে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

দেশের পাটজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান ও লিবিয়া। আবার লিবিয়া থেকে বাংলাদেশী পাটপণ্য রফতানি হতো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এসব দেশের রাজনৈতিক সংকট পাটশিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রফতানি কমায় বিপাকে শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে এ শিল্পে জড়িত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ও কয়েক লাখ কৃষক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাব্বির ইউসূফ বলেন, ত্রিমুখী সংকটে দেশের পাটশিল্প। মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও বিশ্বমন্দার প্রভাবের পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতনের কারণে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে। রুপির দরপতনে ভারতীয় পাট ও পাটজাত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না বাংলাদেশের রফতানিকারকরা।

পাটের সুতা ও দড়ি: গত অর্থবছরে পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি হয় ৫০ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের। ওই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ভারতীয় রুপির দরপতনই এজন্য দায়ী বলে মনে করেন জুট ডাইভার্সিফাইড প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল হক হেলাল।

কাঁচা পাট: গত অর্থবছরে ২২ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের কাঁচা পাট রফতানি হয়। ওই বছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) ও আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডব্লিউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের কাঁচা পাটের সিংহভাগই রফতানি হয় ভারত, পাকিস্তান ও চীনে। এছাড়া ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও আইভোরিকোস্টেও কাঁচা পাট রফতানি হয়।

মধ্যপ্রচ্য সংকট ও রুপির দরপতনের পাশাপাশি রফতানি কমার অন্যতম আরেকটি কারণ বাজেটে উেস করারোপ— এমন মন্তব্য করে বিজেএর সচিব আবদুল কাইয়ুম বলেন, মন্দার সময় বাজেটে উেস করারোপ উদ্যোক্তাদের নিরুত্সাহিত করছে।

পাটের বস্তা ও চট: গত অর্থবছরে ২৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাটের বস্তা ও চট রফতানি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুই মাসে রফতানি ছিল ৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা কমে হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

পাটশিল্পের বর্তমান সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহকারে কাজ করছে উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতীফ সিদ্দিকী বলেন, এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে। রফতানিতে নগদ প্রণোদনা, পাটজাত পণ্য রফতানিতে বাজার বহুমুখীকরণ ও দেশের অভ্যন্তরে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে।