স্পোর্টস ডেস্ক ॥
ভাঙা কব্জি নিয়ে যখন মাঠ ছাড়লেন তামিম ইকবাল নিজেও হয়তো নিশ্চিত ছিলেন না কবে ফিরবেন মাঠে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জানান হলো ৬ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে যেতে হবে তামিমকে। কিন্তু বাংলাদেশ ইনিংসের শেষের দিকে তামিম যা করে দেখালেন তা শুধু বাংলাদেশই নয় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব অনেক অনেক দিন মনে রাখবে।
ক্রিকেট সমর্থকরা অভিভূত হয়ে দেখেছেন তামিমের সাহসী ও প্রশংসনীয় সেই সিদ্ধান্ত। ৪৭তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান রানআউট হওয়ার সবাই যখন ভেনে নেয় বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ, ঠিক সে সময় স্লিং থেকে ঝুলানো হাত খুলে ব্যাট হাতে নেমে যান বাংলাদেশের তারকা ব্যাটসম্যান তামিম। বাঁহাতি তামিম ডানহাতে দেখালেন অসীম সাহসের সঙ্গে বল ফেরানো।
কী চলছিল তখন তামিমের মনে, কী ভাবছিলেন, কেন এমন সিদ্ধান্ত এসব নিয়েই কথা বলেন ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফোর’ সঙ্গে। মূল সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলোঃ
‘বোলার যখন আমার দিকে দৌড়ে আসছিল ওই ১০ সেকেন্ডে আমি খুব সাহস পাচ্ছিলাম। মাঠে নামার সময় দর্শকদের প্রতিটি চিৎকার আমাকে সাহস যোগাচ্ছিল। আমি হয়তো আউট হয়ে যেতে পারতাম বা যেকোনো কিছুই হতে পারতো, তবে ওই মুহূর্তে আমি দল এবং দেশের জন্য সমূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’
‘এখন মনে হচ্ছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কাজটা। আঘাত পাওয়া হাতটা আমার পেছনে ছিল কিন্তু যদি খেয়াল করে থাকেন শট খেলার সময় ওই হাত সামনে চলে আসে আর বলটি মিস করলেই আমার ওই হাতেই আবার লাগতো।’
‘মাশরাফি ভাই যখন আমাকে নামতে বললেন, আমি ভেবেছিলাম তিনি মজা করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা আমার ছিল। ভাবনা ছিল আমি নন স্ট্রাইকে থাকবো। কিন্তু সেটা হলো না।’
‘রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাড আপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিলো।’
‘যখন মুস্তাফিজ আউট হলো, তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামবো কিনা। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়লাম। আমাকে জিগেস করা হয় আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম।’
‘স্টেডিয়ামে দর্শকদের চিৎকারে আমি সাহস পাচ্ছিলাম। এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরো ৫ কিংবা ১০ রান করতে পারে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে।’
‘আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম।’