শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > রাজনীতি > তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে যা জানতে চাচ্ছেন

তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে যা জানতে চাচ্ছেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নেতাদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সাক্ষাৎকার চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।

দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিসহ দলীয় মনোনয়ন বোর্ড গতকাল মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

তারেক রহমান মূলত অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার ভূমিকা কেমন ছিল সে বিষয়টি জানতে চাচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীর অতীত রেকর্ড সেই সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য যাচাই করার চেষ্টা করছেন।

বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে চাইলে নেতাদের বহু কাঠখড় পোহাতে হবে। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দমন-নিপীড়ন এবং হামলা মামলার শিকার হতে হবে দলের নেতাকর্মীদের।

এমতাবস্থায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজ এলাকার কর্মী-সমর্থকদের আগলে রাখতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে বারবার জানতে চায় দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সমর্থন নিয়ে টিকে থাকতে পারবেন কিনা সেদিকে ফোকাস ছিল তারেক রহমানেরও।

গতকাল সাক্ষাৎকার দিয়ে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

গতকাল থেকে রংপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় যোগ দেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শামসুদ্দিন দিদার জানান, তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ভূমিকা এবং নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানতে চাইছেন।

সাক্ষাৎকার দিয়ে বেরিয়ে আসার পর দিনাজপুরের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তার কাছে জানতে চেয়েছেন এলাকায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন।

বিএনপির সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে, বিশেষ করে নতুনদের কাছে তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, দলের জন্য অবদান, এলাকায় কী করছেন, মামলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বোর্ডে ছিলেন। বোর্ডের আরেক সদস্য স্থায়ী কমিটির নেতা মির্জা আব্বাস মামলার হাজিরার দিন ধার্য থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়েছেন, কোন নেতার কী অবদান, বিগত ১২ বছর কে কী করছেন, সে খবর দলের কাছে আছে। এর পরই প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে- এই ১২ বছর প্রার্থী সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের দ্বারা কী ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন? তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে কীভাবে ছিলেন? এবং নিজে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?

এর পর সাক্ষাৎকারের জানতে চাওয়া হচ্ছে, এলাকায় প্রার্থীর অবস্থান কতটা শক্তিশালী। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে পারবে কিনা?

যেসব প্রার্থীর কর্মকাণ্ড, নিজ নিজ আসনে অবস্থা ভালো এবং মনোনয়ন পাওয়ার সব যোগ্যতা আছে, তখন ওই প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন তো?

মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, মূলত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কথাটি জানতে চাইছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচন করছে। এ কারণে এটি নিশ্চিত হওয়া দরকার, ওই প্রার্থী আগেই মাঠ ছেড়ে দেবেন, নাকি শেষ পর্যন্ত বিরূপ পরিস্থিতিতে সরে দাঁড়াবেন, সেটি জানতে চাওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্যে সিলেটে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক ও রাজশাহীর মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। এর মধ্যে আরিফুল হক জয় পেয়েছেন। আর বুলবুল একাই লড়াই করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করে বুলবুলের সঙ্গে স্থানীয় নেতারা মাঠে নামলে সেখানেও বিএনপি বিজয় পেতে পারত।

আর বরিশালে দলটির মেয়রপ্রার্থী সেখানে বিএনপির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রাজনীতিক মুজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে এই উদাহরণ টেনে আনছেন মনোনয়ন বোর্ড। তারা জানতে চাইছেন তিন সিটি কর্পোরেশনের ছায়া যদি জাতীয় নির্বাচনেও পড়ে, তবে প্রার্থী মাঠে মরণ কামড় দিয়ে টিকে থাকতে পারবেন কিনা?

ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান প্রত্যেকের কাছে জানতে চাচ্ছেন- কেন দলের প্রার্থী হতে চাইছেন। দলে তার ভূমিকা কী, দলের জন্য তিনি কী করেছেন। তৃণমূল ও এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কেমন ইত্যাদি। মনোনয়ন বোর্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও পুরোটা সময় শুনছেন তারেক।

দিনাজপুর-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেছেন- মনোনয়ন যে–ই পাক, ঐকবদ্ধভাবে সবাইকে দলের পক্ষে কাজ করতে হবে।

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ সোমবার বরিশাল ও খুলনা বিভাগ; মঙ্গলবর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট; বুধবার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হবে।

১২ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করে বিএনপি। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় বিএনপি।

দলটি সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪ হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। সব ফরম জমা পড়লে এই খাতে বিএনপির আয় হবে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিএনপির মনোনয়ন ফরমের দাম ছিল ৫ হাজার টাকা। অবশ্য ফরম জমা দেয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা করে জামানত নিয়েছে দলটি। সূত্র: যুগান্তর