শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > তোপের মুখে রনি, টেলিভিশনে বর্জনের আহ্বান বার্তাপ্রধানদের

তোপের মুখে রনি, টেলিভিশনে বর্জনের আহ্বান বার্তাপ্রধানদের

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক পিটিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। নিন্দার ঝড় সর্বত্র। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া মতাসীন দলেও। গতকাল গোলাম মাওলা রনির নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তার শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ব্রডকাস্ট সাংবাদিকরা সংসদ সদস্য রনিকে বর্জন করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন, দোষী হলে রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সাংবাদিকদের হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন গোলাম মাওলা রনি। শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত কোন অগ্রগতি জানাতে পারেনি পুলিশ। শনিবার দুপুরে তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজার ৯ম তলায় এমপি রনির অফিসে হামলার শিকার হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিন সনি ও ক্যামেরা পার্সন মহসিন মুকুল। ওই ঘটনায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন ওই মামলায় আসামি করা হয় এমপি গোলাম মওলা রনিসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে। ওইদিনই গভীর রাতে শাহবাগ থানায় গোলাম মওলা রনি বাদী হয়ে হামলার শিকার হওয়া দুই সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। দু’টি মামলাই থানা গ্রহণ করে। ইন্ডিপেন্ডন্ট টিভির আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর ছিল ওইদিন এমপি গোলাম মাওলা রনির মেহেরবা প্লাজার ব্যবসায়িক চেম্বারে বস্তায় করে বিপুল অংকের টাকা আসার কথা। ওই টাকার অনুসন্ধান করতেই টিভি চ্যানেলটির সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে হামলার শিকার হন।  ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় এমপি গোলাম মওলা রনি নিজে ওই দুই সাংবাদিকদের মারপিট করেছেন, তাদের লাথি মারছেন এবং সাংবাদিক ইমতিয়াজ মোমিন সনির হাতে থাকা মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে আঘাত করছেন। গোলাম মাওলা রনির সঙ্গে হামলায় যোগ দেন আরও কয়েক জন। হামলার শিকার দুই সাংবাদিক জীবন বাঁচাতে আর্তচিৎকারের শব্দ ও শোনা যায় ফুটেজে। তাদের কেবল মেরেই ছেড়ে দেয়া হয়নি একবার পেটানোর পর আবার তাদের ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয় এমপির অফিসে। হামলার শিকার ইমতিয়াজ মমিন সনি ও মহসিন মুকুল জানিয়েছেন, এমপি রনির অফিসে আটকে রেখেও তাদের মারধর করা হয়। তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সাংবাদিক নেতারা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন রনির অফিস থেকে। গুরুতর আহত মহসিন মুকুল গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আবু জাফরের কাছে মামলার তদন্ত অগ্রগতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’টি মামলারই আমি তদন্ত কর্মকর্তা। কেবল মামলা দায়ের হলো। আমরা তদন্ত করে দেখবো আসলে কার দোষ। তারপর সেভাবে রিপোর্ট দেবো। অতি শিগগিরই তদন্ত শুরু করবেন বলে তিনি জানান। অন্যদিকে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলা দ্রুততার সঙ্গে রেকর্ড করা হয়েছে, এখন মামলার তদন্ত দ্রুত হবে। মামলা দু’টি হলেও তদন্তে দোষীরাই ধরা পড়বে। মামলার বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ‘তালাশ’ টিমের সমন্বয়কারী অপূর্ব আলাউদ্দিন বলেন- কি আর বলবো, মারও খেলাম আবার মামলাও হলো। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ খালেদ মুহিউদ্দিনের কাছে তাদের পরবর্তী পদপে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাই আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে, আমরা আইনি লড়াই করবো, তবে বেদনা হলো যে আমাদের সাংবাদিকদের মারধর করলো, ক্যামেরা ভাঙচুর করলো আবার উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হলো।
এমপি রনির সাংবাদিক পেটানো মামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন, তদন্তের পর যেই দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে বিজেএমই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয় পরে মামলা নিয়েছে পুলিশ। যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমপি গোলাম মওলা রনির গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করি না, গ্রেপ্তার করা যায় না। তদন্তের পর দোষ প্রমাণ হলেই কেবল ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন গোলাম মাওলা রনি। গতকাল ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন রনি। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।

রনিকে বয়কটের আহ্বান: এমপি গোলাম মাওলা রনি ও তার সহযোগীদের হাতে দুই সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা। এ ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া  পর্যন্ত এমপি রনিকে কোন টেলিভিশনের কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোরও আহ্বান জানান তারা। গতকাল একটি যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন সমপ্রচার সাংবাদিকরা। সিনিয়র টেলিভিশন সাংবাদিকরা বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিকরা যেভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন তা ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। দেশের নীতিনির্ধারকরা যখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেন তখন সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্যের এ আচরণ তাদের সেই সদিচ্ছাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ঘটনায় এরই মধ্যেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিকরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত এ ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এই ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এমপিকে কোন টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোরও আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা হলেন- মনজুরুল আহসান বুলবুল (বৈশাখী টেলিভিশন), খালেদ মুহিউদ্দিন (ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন), খায়রুল অনোয়ার (এনটিভি), সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা (চ্যানেল ৭১), মোস্তফা ফিরোজ (বাংলাভিশন), ইব্রাহিম আজাদ (একুশে টেলিভিশন), সুকান্ত গুপ্ত অলক (দেশটিভি), সাইফুল আমিন (চ্যানেল আই), জ ই মামুন (এটিএন বাংলা), মুন্নী সাহা (এটিএন নিউজ), রেজোয়ানুল হক রাজা (মাছরাঙা), শরীফুল ইসলাম (এসএ টিভি), লুৎফর রহমান (আরটিভি), মেসবাহ আহমেদ (গাজী টিভি), সোহেল মাহমুদ (মোহনা টিভি) ও  মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি)।

অপরাধ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি কর্তৃক ইন্ডিপেনডেন্ট  টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে পেটানোর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, উভয় পরে মামলা আমলে নিয়েছে পুলিশ। যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকের পর গোলাম মাওলা রনির হাতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধরের বিষয়ে তার অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে কোন প থেকে আক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা আমলে নেবে। গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তাকে (রনি) গ্রেপ্তার করা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলা হলেই তো আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করি না, করতেও পারি না। উভয় পরে মামলা আমলে নিয়েছে পুলিশ। যদি কেউ আইন অমান্য করেন, আক্রমণ করেন, তাহলে যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি অভিযোগকারী নই, বিচারকও নই। এটা যাদের দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দিন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে এ ঘটনাকে নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু, শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম ছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমপি রনির শাস্তি দাবি গলাচিপা আওয়ামী লীগের
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, এমপি গোলাম মাওলা রনি কর্তৃক ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এ ঘটনায় এমপি রনির কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে নির্যাতিত সাংবাদিকসহ গোটা সাংবাদিক সমাজের কাছে দুঃখ ও মা প্রার্থনা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এমপি রনির ব্যক্তিগত আচরণের দায় কখনও দল বহন করবে না। কারণ রনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। দলে তার কোন পর্যায়ের সদস্য পদও নেই। সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল দুপুরে তাৎণিক এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। আওয়ামী ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ, সাবেক সভাপতি আলহাজ মো. শাহজাহান মিয়া, সহসভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে, যুগ্ম সম্পাদক শামসুজ্জামান লিকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মুহাম্মদ শাহ আলম প্রমুখ। মো. হারুন-অর-রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, গোলাম মাওলা রনি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হলেও গলাচিপা কিংবা দশমিনা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। তার সাধারণ সদস্য পদও ছিল না। এর পরও গোলাম মাওলা রনি মনোনয়ন পাওয়ার পর দুই উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অকান্ত পরিশ্রম করে তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বর নির্বাচনের পরের দিনই গোলাম মাওলা রনি প্রমাণ করেছেন, আসলেই তার প্রকৃত সম্পর্ক বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে। ২৯শে ডিসেম্বর দুপুরে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থিত পৌরমঞ্চে কিছু চিহ্নিত ক্যাডার নিয়ে এসে গোলাম মাওলা রনি এ মর্মে বক্তব্য দেন, এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই দুর্নীতিবাজ। তাদের সঙ্গে তার অর্থাৎ গোলাম মাওলা রনির কোন সম্পর্ক নেই। এরপরই রনি ক্যাডারদের নিয়ে বিএনপি অফিসে যান এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের এ বলে আশ্বস্ত করেন, তারা নির্বিঘ্নে রাজনীতি করতে পারবেন। অথচ রনি তার প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় এ মর্মে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে যারা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত এবং হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনার তিনি বিচার করবেন, প্রতিকার করবেন। লুট হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেবেন। অথচ নির্বাচনের পরের দিনই তিনি তা ভুলে গেলেন।
তিনি বলেন, গোলাম মাওলা রনি এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় সদর্পে বলে বেড়িয়েছেন, তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এ সম্পদের উৎস কোথায়, তা আজ খুঁজে বের করার সময় এসেছে। কারণ আজ তিনি যে কোম্পানির মালিক হয়ে বসেছেন, সেই কোম্পানিতে তিনি অর্থাৎ রনি একসময়ে সামান্য বেতনের কর্মচারী ছিলেন। সেই কোম্পানির মালিক কিভাবে হলেন, তার নেপথ্যের সব কিছু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। হারুন-অর-রশিদ জানান, তাকেসহ এখানকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে খুন করার জন্য এমপি রনি একাধিকবার ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেছিলেন। পটুয়াখালী শহরে তার এবং মেয়র আলহাজ আবদুল ওহাব খলিফার ওপর ভাড়াটে খুনিরা রামদা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আহত হয়ে তারা বেঁচে এসেছেন। একই ভাবে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাশীনাথ দত্ত ও দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আজিজের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নদী দখলের প্রতিবাদ করায় তাকে ন্যক্কারজনকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তারা গোলাম মাওলা রনির যাবতীয় কীর্তিকলাপ প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরে তার বহিষ্কার দাবি করেছিলেন। সেদিন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে আজ এমপি রনি সাংবাদিকদের ওপর হামলা করার সাহস পেতেন না। আজ এ জন্য দলকে খেসারত দিতে হচ্ছে। হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ২২ জন এমপিকে দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার করেছিলেন। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা এমন একটি ব্যবস্থা নেবেন, এ আশা করছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এমপি গোলাম মাওলা রনি গলাচিপা-দশমিনা থেকে গত সাড়ে চার বছরে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ৪০ দিনের হতদরিদ্র কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রকল্পের নামে রীতিমতো হরিলুট হয়েছে।
তোপের মুখে রনি, টেলিভিশনে বর্জনের আহ্বান বার্তাপ্রধানদের
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক পিটিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। নিন্দার ঝড় সর্বত্র। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া মতাসীন দলেও। গতকাল গোলাম মাওলা রনির নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তার শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ব্রডকাস্ট সাংবাদিকরা সংসদ সদস্য রনিকে বর্জন করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন, দোষী হলে রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সাংবাদিকদের হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন গোলাম মাওলা রনি। শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত কোন অগ্রগতি জানাতে পারেনি পুলিশ। শনিবার দুপুরে তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজার ৯ম তলায় এমপি রনির অফিসে হামলার শিকার হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিন সনি ও ক্যামেরা পার্সন মহসিন মুকুল। ওই ঘটনায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন ওই মামলায় আসামি করা হয় এমপি গোলাম মওলা রনিসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে। ওইদিনই গভীর রাতে শাহবাগ থানায় গোলাম মওলা রনি বাদী হয়ে হামলার শিকার হওয়া দুই সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। দু’টি মামলাই থানা গ্রহণ করে। ইন্ডিপেন্ডন্ট টিভির আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর ছিল ওইদিন এমপি গোলাম মাওলা রনির মেহেরবা প্লাজার ব্যবসায়িক চেম্বারে বস্তায় করে বিপুল অংকের টাকা আসার কথা। ওই টাকার অনুসন্ধান করতেই টিভি চ্যানেলটির সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে হামলার শিকার হন।  ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় এমপি গোলাম মওলা রনি নিজে ওই দুই সাংবাদিকদের মারপিট করেছেন, তাদের লাথি মারছেন এবং সাংবাদিক ইমতিয়াজ মোমিন সনির হাতে থাকা মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে আঘাত করছেন। গোলাম মাওলা রনির সঙ্গে হামলায় যোগ দেন আরও কয়েক জন। হামলার শিকার দুই সাংবাদিক জীবন বাঁচাতে আর্তচিৎকারের শব্দ ও শোনা যায় ফুটেজে। তাদের কেবল মেরেই ছেড়ে দেয়া হয়নি একবার পেটানোর পর আবার তাদের ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয় এমপির অফিসে। হামলার শিকার ইমতিয়াজ মমিন সনি ও মহসিন মুকুল জানিয়েছেন, এমপি রনির অফিসে আটকে রেখেও তাদের মারধর করা হয়। তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সাংবাদিক নেতারা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন রনির অফিস থেকে। গুরুতর আহত মহসিন মুকুল গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আবু জাফরের কাছে মামলার তদন্ত অগ্রগতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’টি মামলারই আমি তদন্ত কর্মকর্তা। কেবল মামলা দায়ের হলো। আমরা তদন্ত করে দেখবো আসলে কার দোষ। তারপর সেভাবে রিপোর্ট দেবো। অতি শিগগিরই তদন্ত শুরু করবেন বলে তিনি জানান। অন্যদিকে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলা দ্রুততার সঙ্গে রেকর্ড করা হয়েছে, এখন মামলার তদন্ত দ্রুত হবে। মামলা দু’টি হলেও তদন্তে দোষীরাই ধরা পড়বে। মামলার বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ‘তালাশ’ টিমের সমন্বয়কারী অপূর্ব আলাউদ্দিন বলেন- কি আর বলবো, মারও খেলাম আবার মামলাও হলো। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ খালেদ মুহিউদ্দিনের কাছে তাদের পরবর্তী পদপে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাই আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে, আমরা আইনি লড়াই করবো, তবে বেদনা হলো যে আমাদের সাংবাদিকদের মারধর করলো, ক্যামেরা ভাঙচুর করলো আবার উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হলো।
এমপি রনির সাংবাদিক পেটানো মামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন, তদন্তের পর যেই দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে বিজেএমই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয় পরে মামলা নিয়েছে পুলিশ। যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমপি গোলাম মওলা রনির গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করি না, গ্রেপ্তার করা যায় না। তদন্তের পর দোষ প্রমাণ হলেই কেবল ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন গোলাম মাওলা রনি। গতকাল ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন রনি। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।

রনিকে বয়কটের আহ্বান: এমপি গোলাম মাওলা রনি ও তার সহযোগীদের হাতে দুই সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা। এ ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া  পর্যন্ত এমপি রনিকে কোন টেলিভিশনের কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোরও আহ্বান জানান তারা। গতকাল একটি যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন সমপ্রচার সাংবাদিকরা। সিনিয়র টেলিভিশন সাংবাদিকরা বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিকরা যেভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন তা ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। দেশের নীতিনির্ধারকরা যখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেন তখন সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্যের এ আচরণ তাদের সেই সদিচ্ছাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ঘটনায় এরই মধ্যেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিকরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত এ ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এই ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এমপিকে কোন টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোরও আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা হলেন- মনজুরুল আহসান বুলবুল (বৈশাখী টেলিভিশন), খালেদ মুহিউদ্দিন (ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন), খায়রুল অনোয়ার (এনটিভি), সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা (চ্যানেল ৭১), মোস্তফা ফিরোজ (বাংলাভিশন), ইব্রাহিম আজাদ (একুশে টেলিভিশন), সুকান্ত গুপ্ত অলক (দেশটিভি), সাইফুল আমিন (চ্যানেল আই), জ ই মামুন (এটিএন বাংলা), মুন্নী সাহা (এটিএন নিউজ), রেজোয়ানুল হক রাজা (মাছরাঙা), শরীফুল ইসলাম (এসএ টিভি), লুৎফর রহমান (আরটিভি), মেসবাহ আহমেদ (গাজী টিভি), সোহেল মাহমুদ (মোহনা টিভি) ও  মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি)।

অপরাধ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি কর্তৃক ইন্ডিপেনডেন্ট  টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে পেটানোর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, উভয় পরে মামলা আমলে নিয়েছে পুলিশ। যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকের পর গোলাম মাওলা রনির হাতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধরের বিষয়ে তার অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে কোন প থেকে আক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা আমলে নেবে। গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তাকে (রনি) গ্রেপ্তার করা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলা হলেই তো আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করি না, করতেও পারি না। উভয় পরে মামলা আমলে নিয়েছে পুলিশ। যদি কেউ আইন অমান্য করেন, আক্রমণ করেন, তাহলে যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি অভিযোগকারী নই, বিচারকও নই। এটা যাদের দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দিন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে এ ঘটনাকে নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু, শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম ছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমপি রনির শাস্তি দাবি গলাচিপা আওয়ামী লীগের
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, এমপি গোলাম মাওলা রনি কর্তৃক ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এ ঘটনায় এমপি রনির কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে নির্যাতিত সাংবাদিকসহ গোটা সাংবাদিক সমাজের কাছে দুঃখ ও মা প্রার্থনা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এমপি রনির ব্যক্তিগত আচরণের দায় কখনও দল বহন করবে না। কারণ রনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। দলে তার কোন পর্যায়ের সদস্য পদও নেই। সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল দুপুরে তাৎণিক এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। আওয়ামী ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ, সাবেক সভাপতি আলহাজ মো. শাহজাহান মিয়া, সহসভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে, যুগ্ম সম্পাদক শামসুজ্জামান লিকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মুহাম্মদ শাহ আলম প্রমুখ। মো. হারুন-অর-রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, গোলাম মাওলা রনি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হলেও গলাচিপা কিংবা দশমিনা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। তার সাধারণ সদস্য পদও ছিল না। এর পরও গোলাম মাওলা রনি মনোনয়ন পাওয়ার পর দুই উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অকান্ত পরিশ্রম করে তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বর নির্বাচনের পরের দিনই গোলাম মাওলা রনি প্রমাণ করেছেন, আসলেই তার প্রকৃত সম্পর্ক বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে। ২৯শে ডিসেম্বর দুপুরে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থিত পৌরমঞ্চে কিছু চিহ্নিত ক্যাডার নিয়ে এসে গোলাম মাওলা রনি এ মর্মে বক্তব্য দেন, এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই দুর্নীতিবাজ। তাদের সঙ্গে তার অর্থাৎ গোলাম মাওলা রনির কোন সম্পর্ক নেই। এরপরই রনি ক্যাডারদের নিয়ে বিএনপি অফিসে যান এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের এ বলে আশ্বস্ত করেন, তারা নির্বিঘ্নে রাজনীতি করতে পারবেন। অথচ রনি তার প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় এ মর্মে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে যারা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত এবং হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনার তিনি বিচার করবেন, প্রতিকার করবেন। লুট হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেবেন। অথচ নির্বাচনের পরের দিনই তিনি তা ভুলে গেলেন।
তিনি বলেন, গোলাম মাওলা রনি এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় সদর্পে বলে বেড়িয়েছেন, তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এ সম্পদের উৎস কোথায়, তা আজ খুঁজে বের করার সময় এসেছে। কারণ আজ তিনি যে কোম্পানির মালিক হয়ে বসেছেন, সেই কোম্পানিতে তিনি অর্থাৎ রনি একসময়ে সামান্য বেতনের কর্মচারী ছিলেন। সেই কোম্পানির মালিক কিভাবে হলেন, তার নেপথ্যের সব কিছু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। হারুন-অর-রশিদ জানান, তাকেসহ এখানকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে খুন করার জন্য এমপি রনি একাধিকবার ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেছিলেন। পটুয়াখালী শহরে তার এবং মেয়র আলহাজ আবদুল ওহাব খলিফার ওপর ভাড়াটে খুনিরা রামদা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আহত হয়ে তারা বেঁচে এসেছেন। একই ভাবে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাশীনাথ দত্ত ও দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আজিজের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নদী দখলের প্রতিবাদ করায় তাকে ন্যক্কারজনকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তারা গোলাম মাওলা রনির যাবতীয় কীর্তিকলাপ প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরে তার বহিষ্কার দাবি করেছিলেন। সেদিন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে আজ এমপি রনি সাংবাদিকদের ওপর হামলা করার সাহস পেতেন না। আজ এ জন্য দলকে খেসারত দিতে হচ্ছে। হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ২২ জন এমপিকে দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার করেছিলেন। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা এমন একটি ব্যবস্থা নেবেন, এ আশা করছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এমপি গোলাম মাওলা রনি গলাচিপা-দশমিনা থেকে গত সাড়ে চার বছরে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ৪০ দিনের হতদরিদ্র কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রকল্পের নামে রীতিমতো হরিলুট হয়েছে।