শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > দাতা সংস্থার চক্রান্তে আবারও জুটমিল বন্ধের উদ্যোগ

দাতা সংস্থার চক্রান্তে আবারও জুটমিল বন্ধের উদ্যোগ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: দাতা সংস্থার চক্রান্তে দেশের জুটমিলগুলো আবারও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাট ও পাটশিল্প রক্ষা কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন তৈরির পরেও এমন চেষ্টা দেশের পাটকলগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র বলেও দাবি সংগঠনটির।

পাট ও পাটশিল্প রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেদ হোসেন বলেন, গত ১৭ মে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানি এবং এর অধীনস্থ মিলগুলোকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে রূপান্তর করার সিদ্ধান্তের কথা জানান পাট মন্ত্রণালযের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। কোম্পানির উদ্দেশ্য ও সুবিধা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধও করেন তিনি।

খালেদ হোসেন আরও জানান, এই বিষয়টি বিদেশি দাতা সংস্থার চক্রান্ত। এর আগে ১৯৯৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ নিয়ে আমাদের দেশের জুটমিল বন্ধ করে দেয়। আর বেসরকারি ব্যবস্থায়নায় ছেড়ে দেওয়া জুটমিলগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে খুলনার মহসিন, এজাক্স, আফিলসহ পাঁচটি জুটমিল বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরেও বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া মিলগুলো বন্ধের উদ্যোগ ছাড়া কিছুই নয়। আর এ উদ্যোগ দেশের কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন এবং বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের পথ বন্ধ করার শামিল।

পাট ও পাটশিল্প রক্ষা কমিটির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম চার বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে ৮০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। দেশে ও বিদেশে পাটজাত পণ্যের চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্বখ্যাত আদমজী জুট মিলসহ দেশে প্রায় ৮০টির মতো পাটকল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে। স্বাধীনতা পরবর্তী অবাঙালিদের ফেলে যাওয়া পাটকলসহ ৭৭টি পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮০-৯০ এর দশকে অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত মিল বিশ্বব্যাংকসহ দাতাগোষ্ঠীর ঋণ সহযোগিতা ও পরামর্শে বিক্রি ও বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এর মধ্য দিয়ে হুমকির মুখে পড়ে আমাদের অর্থনীতি। বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে কৃষক, শ্র্রমিকসহ সাড়ে তিন থেকে চার কোটি জনগোষ্ঠী।

একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব পাটের বিপরীতে পলিপ্রপাইলিন বা পলিথিনের ব্যবহার বাড়তে থাকে। আজ এই পলিথিনের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা বিশাল হুমকির সম্মুখীন।

খালিদ হোসেন বলেন, পলিথিনের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা যখন হুমকির সম্মুখীন। তখন পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এছাড়া পাটজাত পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে গবেষণায় বিনিয়োগের দাবি রয়েছে আমাদের। এর পাশপাশি আমরা সিনথেটিক প্যাকেজিং নিরুৎসাহিত করে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করারও আহবান জানাচ্ছি সরকারের কাছে।

বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত না করে আইন কার্যকর করতে হবে। একইসঙ্গে পাট ও পাটশিল্প রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান খালেদ হোসেন।

পাট ও পাটশিল্প রক্ষা কমিটির দেওয়া তথ্যে আরও জানা গেছে এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাতিন আমেরিকার অনেক দেশেই পাটজাত দ্রব্যের বিপুল বাজার রয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে এ বাজার। নতুন বাজোরে প্রবেশ করাও বাংলাদেশের জন্য কঠিন নয়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিলগুলোর সুব্যবস্থাপনা জরুরি।

খালেদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ হলেও এখন পর্যন্ত নীতিমালা হয়নি। তাই আমাদের দাবি পাট ও পাটশিল্প উন্নয়নে নীতিমালা তৈরি এবং পাট শিল্পের উন্নয়নে পরিকল্পনা নিতে প্রধানমন্ত্রীকেও উদ্যোগ নিতে হবে।