বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > দায় এড়াতে মরিয়া সোহেল রানা

দায় এড়াতে মরিয়া সোহেল রানা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দায় এড়াতে মরিয়া সাভারের রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। ভবনটি নির্মাণে ত্রুটি থেকে শুরু করে ফাটল দেখা দেওয়ার পরও পোশাককর্মীদের মৃত্যুগহ্বরে ডেকে নেওয়ার দায়ভারও তিনি নিতে রাজি নন। এখন পর্যন্ত সোহেল রানাকে দু’দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের বিশেষ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে ডিবিও তাকে একাধিক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে বরাবরের মতো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সর্বশেষ দফায় জিজ্ঞাসাবাদেও রানা দাবি করেন, ভবনটি ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণের দায় প্রকৌশলী ও নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের। আর ফাটল দেখা দেওয়ার পরও রানা প্লাজার পোশাক কারখানা খুলে রাখার দায়ভার কারখানা মালিকের। ভবনটি ধসে পড়ায় মালিক হিসেবে তিনি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বেশি তিগ্রস্ত হয়েছেন। সাভারে ভয়াবহতম ট্র্যাজেডির তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত রানাসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই বর্তমানে কারাবন্দি। তাদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। মামলার তদন্তের স্বার্থে বিদেশে থাকা দুই প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র। তারা হলেন সাভারের তৎকালীন টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম ও প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সাভারের তৎকালীন পৌরসভা চেয়ারম্যান রেফাত উল্লাহকে (বর্তমানে বরখাস্ত)।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম ওই ভবনধসের ঘটনায় মারা যান মোট ১ হাজার ১৩১ জন। আর জীবিত উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, সোহেল রানা নিজের দায় অস্বীকার করলেও এরই মধ্যে তার সম্পর্কে পাওয়া তথ্য তার বিরুদ্ধেই কথা বলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি বিজয় কৃষ্ণ কর গতকাল সমকালকে বলেন, মামলার তদন্তকাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে। এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা রানা প্লাজার ঘটনায় যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। চাপমুক্ত পরিবেশে মামলার তদন্তকাজ চলছে বলেও জানান তিনি। দেশের পোশাক খাতের স্বার্থে নিরপে তদন্তের মধ্য দিয়ে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

সোহেল রানা বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯০ সেলে বন্দি। রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। মামলা নম্বর ৫৩ ও ৫৫। শিউলী আক্তার নামের এক পোশাককর্মী আদালতে একটি মামলা করেন। এরপর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। সাভার থানার দুটি ও আদালতে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। অন্যদিকে, রানার ইটভাটা থেকে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ধামরাই থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলা বর্তমানে তদন্ত করছে সাভার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া ২০ জনের মধ্যে দু’জন প্রকৌশলী, গার্মেন্টের মালিক পাঁচজন। এ ছাড়া রানার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে সারোয়ার নামের এক ভুয়া প্রকৌশলীও রয়েছেন। রানা প্লাজা নির্মাণের সময় সুপারভাইজিং প্রকৌশলী হিসেবে সারোয়ার নির্মাণকাজের তদারক করেন।

আলোচিত এ মামলায় ইতিমধ্যে সাভার থানার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সর্দারকে এক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অস্বীকার করেন। তাকে আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে এ মামলায় এখনও সাভার পৌরসভা চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিগগিরই তাকে ডাকা হবে। ঘটনার পর বরখাস্ত হন পৌর চেয়ারম্যান রেফাত উল্লাহ। এ ছাড়া ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে তা সঠিকভাবে নির্মিত হচ্ছিল কি-না, এ ব্যাপারে গাফিলতি ছিল আরও এক প্রকৌশলী ও এক প্ল্যানারের। ২০০৮ সালে সাভারে টাউন প্ল্যানার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফারজানা ইসলাম। তিনি বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। আর প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আলোচিত এ মামলা তদন্তে সিআইডিতে একটি বিশেষ সেল করা হয়েছে। বর্তমানে তারা রানা প্লাজা সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি, তা সংগ্রহের কাজও করা হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আলাদা আলাদা তদন্ত ও পর্যবেণ প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নেয়।