শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > দেশের মানুষ অসাধ্য সাধনে সংকল্পবদ্ধ

দেশের মানুষ অসাধ্য সাধনে সংকল্পবদ্ধ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের যে বাংলাদেশ তা অর্ধ-দশক আগের বাংলাদেশের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাংলাদেশ। এটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। দেশের মানুষ আজ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, যেকোনো অসাধ্য সাধনে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও সংকল্পবদ্ধ।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও উন্নত দেশগুলোতে মন্দাসহ সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু ধরেই রাখেনি, ক্রমাগতভাবে তা এগিয়েও নিয়ে গেছে।

‘গত অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক পাঁচ-এক শতাংশ। আগের ৫ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আমরা চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যথেষ্ট আশাবাদী,’ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের দক্ষতা বেড়েছে, মনোবল বেড়েছে উদ্যোক্তাদেরও। আমাদের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সাহসী উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তা সক্ষমতারই পরিচয় বহন করে।

‘বিগত ৬ বছরে বাজেটের আকার প্রায় ৫ গুণ বেড়ে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রফতানি আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ পৌনে আট গুণ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে,’ উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

দেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বের ৪৫তম ও ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে বলেও জানান তিনি।

বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময়ই বলে থাকি সরকার ব্যবসা করবে না, ব্যবসা করবেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেবে। আমরা তাই করছি। বিগত কয়েক বছরে অবকাঠামো ও নিয়ম-নীতির ব্যাপক সংস্কার করে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি।

এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২০০৬ সালের ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

‘ভবিষ্যতে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণেরও কাজ চলছে’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছি। এর মাধ্যমে সমন্বিত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আমাদের তুলনামূলক দক্ষতার সুবিধা ব্যবহার করতে সক্ষম হবো।

‘‘দক্ষিণ এশিয়া অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে প্রবৃদ্ধির একটি বৃহৎ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এটিকে আর ‘গরীব মানুষের সমিতি’ হিসেবে অবহিত করার অবকাশ থাকছে না,’’ বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক নীতির নির্ণায়কগুলোকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাসমূহ দক্ষভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক নীতির নির্ণায়কগুলোকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে অফুরন্ত সামুদ্রিক সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগকারীদের তা উন্মুক্ত। মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। ব্লু -ইকোনমি এখন নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।

যুব কর্মশক্তির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিপুল যুব কর্মশক্তি রয়েছে। তা কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতের বিভিন্ন সমস্যাগুলোকে তথ্যনিষ্ট ও গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত এবং সমাধানের জন্য ‘প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা হয়েছে। উদ্যোগ নিয়েছি বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার, যা বিনোয়োগকে সহজীকরণ করবে।

সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য ৩০টি এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে আগামী মাসে ১০টি অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান প্রধান বৈদেশিক বিনিয়োগ খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, স্বাস্থ্যসেবা, ঔষধশিল্প, সমুদ্রবন্দর, শিল্পোৎপাদন, হালকা প্রকৌশল, অটোমোবাইল, সিরামিকস, টেক্সটাইল, চামড়া এবং চামড়া-জাত শিল্প, আইসিটি, বিভিন্ন সেবাসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো উল্লেখযোগ্য।

সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে রাজস্ব ও রাজস্ব-বহির্ভূত আকর্ষণীয় প্রণোদনা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিনোযোগকারীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনাদের (বিনোয়োগকারী) সক্রিয় অংশীদার হওয়ার এখনই যথার্থ সময়। কোথাও কোথাও হয়তো এখনও আমাদের খানিকটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আমরা সেসব সীমাবদ্ধতা দ্রুততার সঙ্গে দূর করতে সক্ষম হবো।

‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই এ বিশ্ব একদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। তবে বিশ্বকে করতে না পারলেও বাংলাদেশ তথ্যা দক্ষিণ এশিয়াকে করতো পারবো, সে বিশ্বাস আমরা রাখি।’

বাংলাদেশে বিনোয়োগে আহ্বান জানিয়ে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, দেশি- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, নিশ্চিত করতে চাই আমরা আপনাদের বাস্তবভিত্তিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশে আপনার বিনিয়োগের সুরক্ষা ও বৃদ্ধি সুনিশ্চিত।

‘‘কবির ভাষায় বলতে হয় ‘এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি…’ আপনাদের বিনিয়োগের সর্বোত্তম মুনাফা অর্জনই আমাদের কাম্য,” বলেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, ব্যবসায়ী নেতা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত ছিলেন।