শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরব বিপ্লব

দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরব বিপ্লব

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: নিরাপদে ও দ্রুততার সঙ্গে অর্থ লেনদেন করা যায় বলে মোবাইল ব্যাংকিং ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাত্র তিন বছর আগে চালু হওয়া এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

দেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং-এর বিপ্লব ঘটেছে বলে মত অর্থনীতি বিশ্লষকদের। তারা মনে করেন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মোবাইল ব্যাংকিং-এর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর তার কারণ দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে। অথচ মোবাইল ফোন রয়েছে দেশের ১১ কোটি মানুষের হাতে।

তাই তো মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের যদি আর্থিক সেবার আওতায় আনা যায় তবে দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি পাবে এক বিশাল গতি।

দেশের এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবার। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ণ করে। তারা এ পর্যন্ত মোট ২৮টি ব্যাংককে এ সংক্রান্ত লেনদেনের লাইসেন্স দিয়েছে। যার মধ্যে ১৯টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরুও করেছে।

বর্তমানে যে কয়টি অর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা দিচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত ব্র্যাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’। বর্তমানে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট ছাড়াও বেতন দেওয়া, মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম ক্রয় এবং বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে বিকাশ ব্যবহার করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যতে আরও নুতন নুতন সেবা চালু করবে বিকাশ।

সেবাকে নিরাপদ, স্বস্তির ও জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিকাশ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহারের পাশাপাশি দেশজুড়ে নিয়োগ দিয়েছে ৯৫ হাজার এজেন্ট।

যেহেতু আর্থিক অন্তর্ভুক্তই হচ্ছে বিকাশের মূল লক্ষ্য, তাই বিকাশ এমন এক ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে যার ফলে গ্রাহকরা যে কোনো মান বা ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এ সেবাটি পেতে পারেন।

বিকাশের একাউন্টকে বলা হয় ওয়ালেট। আর এ ওয়ালেট খোলার পদ্ধতি খুবই সহজ। দুই কপি ছবি সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট ও তার ফটোকপি নিয়ে যে কোনো বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে বিকাশ ওয়ালেট খোলা যাবে।

বর্তমানে মোবাইল ওপারেটর বাংলালিংক, গ্রামীনফোন, রবি এবং এয়ারটেল নাম্বার ব্যবহারকারীরা বিকাশ ওয়ালেট খুলতে পারবেন।

বিকাশ ওয়ালেট খোলা এবং ক্যাশ ইনের ক্ষেত্রে কোনো চার্জ দিতে হয়না। ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে চার্জ মাত্র ১.৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ একজন গ্রাহক যদি ৫০ টাকাও ক্যাশ আউট করতে চায় সেক্ষেত্রে তার চার্জ হবে মাত্র ৯২ পয়সা।

বিকাশের এই সেবা দরিদ্র এবং ব্যাংকিং সুবিধা বহির্ভুত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করছে বলে মত অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

বিকাশ-এ লেনদেন করা নিরাপদ। এমনকি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলেও বিকাশ ওয়ালেটে রক্ষিত টাকা নিরাপদ থাকছে। কেননা প্রতিটি বিকাশ ওয়ালেটে একটি গোপন পিন নাম্বার বা পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে যা শুধু ওয়ালেটের গ্রাহক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

দেশে বর্তমানে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে সবার শীর্ষে। বিকাশ-এর সেবা যতটা সহজ ঠিক ততটা নিরাপদ। আর এ সহজলভ্যতা এই সেবাকে করেছে মানুষের আরো কাছাকাছি সংযুক্ত।

রাজধানীর আগারগাঁও, তালতলা এলাকার বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারী নাসিম হাসান আলম মিঠু। পেশায় চাকরিজীবী। পাশাপাশি বিভিন্ন পোশাক করখানায় বিভিন্ন ধরনের সহায়ক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দেশের বেশ কিছু গার্মেন্টসে সহায়ক পণ্য দেই। যেমন, বোতাম, প্যান্টের চেইন, নরমাল সুতা ইত্যাদি। পাইকারি দরে যে পণ্যগুলো কিনি সেগুলো বিকাশের মাধ্যমে। আর আমি পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময়ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেই। চাকরির পাশাপাশি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে আমি বিকাশের ওপরই নির্ভরশীল।

এই বিকাশ ব্যবহারকারী বলেন, ছোট একটা চাকরি করি আমি। তাও আবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত বাজে নয়টা কি সাড়ে নয়টা। যে বেতন পাই, তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল। আর তাই ব্যবসা করতে হচ্ছে। সারা দিন চাকুরি করার পর এতো কম সময় দিয়ে ব্যবসা টিকে আছে; কেবল আমার বিকাশ ওয়ালেট আছে বলেই। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম