বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > ধরাছোঁয়ার বাইরে মানবপাচারকারী

ধরাছোঁয়ার বাইরে মানবপাচারকারী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ও দালালকে চিহ্নিত করেছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা। তারপরও অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে অধরাই থেকে যাচ্ছে এসব চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ থাকলে বা চিহ্নিত হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি অথচ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন কোনো ঘটনা নেই। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না এবং কখনো কাউকে ছাড় দিইনি। তবে আমাদেরই কেউ কেউ আবার অতিউৎসাহী হয়ে কোনো কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে গুরুতর অভিযোগ তুলছে। সে বিষয়টিও আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছে। আমরা এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখছি যাতে অতিরঞ্জিত কিছু না হয়ে বরং সুনির্দিষ্টভাবে মানবপাচারকারী এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না মানবপাচার। উন্নত জীবন ও অধিক অর্থ উপার্জনসহ বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে পাচারকারী চক্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র, অসহায় নারী,পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বিদেশে পাচার করছে।

তাছাড়া অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের সঙ্গে মিশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত সরকারের কয়েকটি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তরা অবৈধ এ কাজে সহায়তা করছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারের ইমিগ্রেশন পুলিশ, সিভিল এভিয়েশন, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা মানবপাচারে দালাল চক্রকে সহায়তা করেছে।

মানবপাচার বন্ধ না হওয়ার কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কাজে সংশ্লিষ্ট দালাল গ্রেফতার না হওয়া ও গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সহজে বের হয়ে যাওয়াতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না মানবপাচার।

সূত্র জানায়, অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম এই মানবপাচার। প্রতি বছর বাংলাদেশের জল ও স্থল সীমান্ত পথে বিপুল সংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে। এসব নারী, পুরুষ ও শিশুদের অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। পাচার হওয়া এসব অসহায় মানুষ পরবর্তীতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাচারকারী চক্র ভিন্ন দেশে তাদের বিক্রিও করে দিচ্ছে।

সম্প্রতি পাচারের শিকার ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব যাত্রীর সবাই জাল ভিসা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একই বিমানবন্দর থেকে ফেব্রুয়ারিতে আটক হয় আরও ৭৩ জন ভিকটিম। এরা সবাই বাংলাদেশ বিমানযোগে পাচারকারীদের সহায়তায় দুবাই হয়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এদিকে চলতি মাসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৫৫টি অভিযান পরিচালনা করে তারা পাচারের শিকার ৭২৯ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করে।

মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি/দালাল/গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবপাচারের মতো ঘটনায় একাধিক দেশের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত পাচারকারী ও দালাল চক্র, ইমিগ্রেশন পুলিশ, সিভিল এভিয়েশন, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক ও এয়ারলাইন্সের অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের সময়.কম