শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > লাইফস্টাইল > নববর্ষে ভালো থাকুন

নববর্ষে ভালো থাকুন

শেয়ার করুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥

ঢাকা: বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষে বৈশাখে বাইরে যাবেন না, তা কি হয়? রমনা বটমূল, চারুকলা, টিএসসি, ঢাকা শহরের পথে পথে বৈশাখী মেলা ছাড়াও এই বিশেষ দিনে বন্ধুবান্ধব, স্বজন, ভাইবোন নিয়ে অকারণে ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া আর উৎসবে শামিল হতে চান সবাই। যুক্ত হতে চান উৎসব-আনন্দে। তবে মনে রাখবেন, উৎসব-পার্বণেও সুস্থ থাকা চাই। কোনো কারণে অুসস্থ হয়ে পড়লে আনন্দটাই মাটি।

বৈশাখের আগেই কিন্তু এবার বেশ গরম পড়ে গেছে। আকাশে এখন গনগনে রোদ। এই গরমে আর রোদে বেশিক্ষণ বাইরে ঘোরাঘুরি করলে পানিশূন্যতা হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে হতে পারে লবণশূন্যতাও। তাই ঘুরবেন তো নিশ্চয়, তবে যথেষ্ট পানিও পান করবেন। বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে নিয়ে বেরোনোই ভালো। সব জায়গায় বিশুদ্ধ পানি নাও পাওয়া যেতে পারে।
রাস্তাঘাটে দেখবেন, এদিন আখের রস, শরবত, লেবু-পানি ইত্যাদি দেদার বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সাবধান! ওগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। এই মৌসুমেই কিন্তু ডায়রিয়া, টাইফয়েড আর জন্ডিসের প্রকোপ বাড়ে, বাড়ে পানিবাহিত রোগের আক্রমণ। তাই বোতলজাত পানিই ভালো। একইভাবে পথেঘাটে বিক্রি হতে থাকা শসা, আমড়া, কাঁচা ফলমূল—এগুলোও এড়িয়ে চলুন।
অপরিচ্ছন্ন কাঁচা ও খোলা খাবার থেকে নানা রোগ ছড়ায়। খুব ঘেমে গেলে বা পিপাসা পেলে অবশ্য ডাবের পানি খাওয়া যায়। ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে লবণ রয়েছে, যা লবণশূন্যতা রোধ করবে। পিপাসা পেলে অনেকে চটজলদি কোমল পানীয় বা আইসক্রিম কিনে খান। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে এগুলো আরও পিপাসা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর খুব গরমের মধ্যে ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
সকালবেলা পান্তা-ইলিশ বা ভর্তা দিয়ে খিচুড়ি ইত্যাদি হলো নববর্ষের খাবার। কিন্তু সবাই এতে অভ্যস্ত নাও হতে পারেন। খুব ঝাল, অনেক কাঁচা মরিচ বা লাল মরিচ খেতে অভ্যস্ত না হলে না হয় এড়িয়েই গেলেন; বন্ধুদের চাপে পড়ে খেতেই হবে, এমন যেন না হয়। পরে দেখা যাবে, সারা দিন এ নিয়ে গলা জ্বলা, টক ঢেকুর বা অস্বস্তি ভাব চলছে। উৎসবটাই তখন মাটি।
নববর্ষে সাজগোজ তো থাকবেই, কিন্তু হালকা সুতির জামাকাপড় পরাই ভালো এই গরমে। হাঁটতে হবে অনেক, তাই পায়ে উঁচু হিলের জুতা না পরে বরং ফ্ল্যাট স্যান্ডেল বা আরামদায়ক জুতাই বেছে নিন। প্রখর রোদ ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য খারাপ। তাই রোদ থেকে বাঁচতে রোদচশমা ও ছাতা ব্যবহার করুন। সারা দিনের জন্য বেরোলে একটা বড়সড় ব্যাগ সঙ্গে নিন, যাতে পানির বোতল, ছাতা, রুমাল, ভেজা টিস্যু ইত্যাদি সঙ্গে নিতে পারেন। এদিন একটু বিশেষভাবে সাজতে চান সবাই, কিন্তু ভারী মেকআপ এই গরমে আরামদায়ক নাও হতে পারে। বরং গরমে ঘেমে-নেয়ে এই প্রসাধনী গলে গিয়ে ত্বকের লোমকূপ দেবে বন্ধ করে। তাই স্বাভাবিক ও সহজাত প্রসাধনই যথেষ্ট। তার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন তো লাগাতেই হবে। কেবল মুখে নয়, হাত-পায়ের খোলা অংশেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। আর বাইরে থেকে ফিরে এসে ভালো করে প্রসাধনী তুলে ত্বক পরিষ্কার করবেন।
সড়ফবষশিশুদের নিয়ে ঘোরাঘুরির সময় একটু বাড়তি সাবধানতা জরুরি। শিশুরা দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তাই বারবার পানি খাওয়ান। শিশুকেও রোদ থেকে আগলে রাখুন। খুব ভিড়ের মধ্যে শিশুকে নিয়ে না ঢোকাই ভালো। অপেক্ষা করুন, ভিড় কমলে উপভোগ করবেন। আর অবশ্যই শিশুদের চোখে চোখে রাখুন বা হাত ধরে রাখুন, যাতে হারিয়ে না যায়। সঙ্গে বাড়তি পোশাক রাখতে পারেন, যাতে খুব ঘেমে গেলে পাল্টে দেওয়া যায়।
খুব রোদে বা গরমে বেশি হাঁটাহাঁটি করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এমন হলে আক্রান্ত ব্যক্তি চোখে ঝাপসা দেখেন, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, ভুল বকতে পারেন বা খিঁচুনি হতে পারে। এমনটা হলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় বা ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে, জামাকাপড় ঢিলে করে দিয়ে পানি দিয়ে ত্বক স্পঞ্জ করে দিতে হবে, সেই সঙ্গে ভেজা শরীরে ফ্যানের বা হাতপাখার বাতাস করলে ভালো হয়। দেহের তাপমাত্রা কমানোর জন্য বগলের নিচে, ঘাড়ের পেছনে বা কুঁচকিতে বরফ বা আইসপ্যাক দেওয়া যায়। ভিড়ের মধ্যে অনেকেই এ রকম অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে যে-কারও সমস্যায় দ্রুত এগিয়ে যাওয়া ও সাহাঘ্য করা। অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা হাসপাতালে নিতে সাহাঘ্য করা। উৎসবটা তো সবার, সবাই মিলেই হাসি-আনন্দে পার করতে চাই দিনটা, তাই পরিবারের দেখভাল করাও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সবাইকে শুভ নববর্ষ।