শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > নাম জেলা পরিষদ কাজ শুধুই লুটপাট

নাম জেলা পরিষদ কাজ শুধুই লুটপাট

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: জেলা পরিষদের টাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে রীতিমতো সাগরচুরির ঘটনা ঘটছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়ে এখন ভুয়া প্রকল্প গ্রহণ করে পুরো টাকায় লুটপাট করা হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের সব ক’টি জেলা পরিষদে কম-বেশি এই মহাদুর্নীতি জেঁকে বসেছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যেন দেখার কেউ নেই। খুব কাছ থেকে যারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিনিয়ত দেখছেন তাদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের সমর্থন নিয়ে জেলা পরিষদে খোলামেলা দুর্নীতি হচ্ছে। আরও সহজ করে বললে বলতে হবে, জেলা পরিষদের ক্ষমতাধর কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশ থাকায় কার্যত প্রকাশ্য এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, অনেক সময় তদন্ত পর্যন্ত করা হয় না।

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অব্যাহত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রকল্পের বিপরীতে বাস্তব চিত্র সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানো হয়। এতে বিস্ময়কর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, যেসব মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যুব সংঘ, ক্লাব ও রাস্তা সংস্কারের নামে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বাস্তবে তার অনেকগুলোর অস্তিত্বই নেই। শুধু খাতা-কলমে প্রকল্প দেখিয়ে পুরো টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের নামধাম ঠিক থাকলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ঠিকাদারও অকপটে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন। তারা জানান, ঢাকা জেলা পরিষদসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পেতে হলে আগাম কমিশন গুনতে হয়। মোদ্দা কথা, আগে ঘুষের টাকা দিয়ে কাজ কিনে নিতে হয়। এছাড়া অনেক সময় সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মীর ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ বরাদ্দ হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা নিজেরা কোনো কাজ না করে বিক্রি করে দেন। ফলে এসব কাজ ২-৩ দফায় বিক্রি হয়। এতে করে বাস্তব কাজ আর হয় না।
ঢাকা জেলা পরিষদ : গত অর্থবছরে ঢাকা জেলা পরিষদে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১২শ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্পে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। নিয়মানুযায়ী জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বরাদ্দ বণ্টন করার কথা এবং এক্ষেত্রে প্রকল্প মনোনয়ন দেবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যানরা। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জমা দিতে পারেননি। এমনকি প্রকল্প চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত হওয়ার চিঠিও পাননি। প্রভাবশালী মহল ইচ্ছেমতো খাতা-কলমে ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প তালিকার ১০৯ থেকে ১৪১ সিরিয়াল পর্যন্ত ধামরাই এলাকার সব ক’টি প্রকল্প ভুয়া। যেমন পাঞ্জেরি রোয়াইল যুব সংঘ উন্নয়ন, প্রভাতী তরুণ সংঘ উন্নয়ন, কৌশিক নন্দন যুব সংঘ উন্নয়ন, আব্রাব সবুজ সংঘ উন্নয়ন, কুহেসাস সবুজ সংঘ প্রভৃতি। তালিকার ৬৫২ নং সিরিয়ালে নবাবগঞ্জ পশ্চিম চূড়াইন কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে ৭৩৭ নং সিরিয়াল পর্যন্ত বেশির ভাগ প্রকল্পের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের নাম ঠিক থাকলেও সেখানে কোনো উন্নয়ন কাজই হয়নি। গালিমপুরে শ্রী শ্রী বৈদ্যনাথ মন্দির উন্নয়ন, শ্রী শ্রী বুড়াবুড়ি ঠাকুরের মন্দির উন্নয়ন প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই বলে অনেকে জানিয়েছেন। এভাবে তালিকার মধ্যে থাকা ৯০ ভাগ প্রকল্পই ভুয়া বলে অনেকে দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্প্রতি বদলি হওয়া (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত) ঢাকা জেলা পরিষদের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী নূরুন্নবী পাঠান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বাস্তবে ১২শ’ প্রকল্পের মধ্যে তার একার পক্ষে ৫ ভাগ প্রকল্পও পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় যদি কোনো প্রকল্পের অস্তিত্ব না থাকে কিংবা কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হয় তাহলে দায়ী হবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। কিন্তু অহেতুক তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. এম হাফিজ উদ্দিন খান এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, জেলা পরিষদগুলোতে প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। লুটপাট করা হচ্ছে জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকা। কাগজে-কলমে নানা প্রকল্প বানিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে তুলে নেয়া হচ্ছে জনগণের টাকা। আমরা জেলা পরিষদের বর্তমান অবস্থার বিরোধী। তার মতে, নির্বাচন না দিয়ে দলীয় নেতাদের দায়িত্ব দিলে এমন লুটপাট হবেই। সরকারের উচিত এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া এবং নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেলা পরিষদ পরিচালনা করা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তদন্ত রিপোর্ট বিলম্বিত : ঢাকা জেলা পরিষদে গত অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত টাকার একটি অংশের খাত পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে জেলা পরিষদ শাখার উপসচিব বেগম জুবাইদা নাসরীন ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পান এবং ৭টি কোয়ারি দিয়ে ফাইলটি উত্থাপন করেন। উল্লেখযোগ্য কোয়ারির মধ্যে রয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্প কি প্রক্রিয়ায় বাছাই করা হয়েছে, উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত হাজিরা বিবরণীসহ জেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার কার্যবিবরণীর মূল কপি না পাঠানোর কারণ কী, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিপূর্বে অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, এসব প্রকল্পের কত শতাংশ কাজ প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে এবং কত শতাংশ কাজ দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে হয়েছে, বরাদ্দকৃত অর্থে কত টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং কত টাকা অবশিষ্ট রয়েছে, প্রশিক্ষণ খাতে অব্যয়িত ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা উন্নয়ন খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে কিনা এবং হয়ে থাকলে কোন আইন/বিধিবলে প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিবর্তে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা জানাতে হবে প্রভৃতি। কিন্তু এ সংক্রান্ত ফাইলের নোটশিট গোপন করে একটি চক্র অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত জেলা পরিষদের আগের প্রস্তাব অনুমোদন করে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে ২৩ জুন যুগান্তরে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এই কমিটি রিপোর্ট দেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঢাকা জেলা পরিষদের দুর্নীতি আড়াল করতে একটি প্রভাবশালী মহল তৎপর রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ : উপজেলাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের নয়-ছয় হচ্ছে। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। বাস্তবায়নকৃত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।
২০১১-১২ অর্থবছরে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ টাকা। এ কাজের কার্যাদেশ পায় প্রকল্প কমিটি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাস্তবে এ প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। উক্ত স্থানে ২ তলার ওপর দুটি কক্ষ নিয়ে রয়েছে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। ২০১০-১১ অর্থবছরে ফটিকছড়ি উপজেলার সোনাই সিপাহী ফেরিঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫ লাখ টাকা। মীর কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাস্তবে এ প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব নেই। উপজেলায় তারাকো ব্রিজের উইং ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় আড়াই লাখ টাকা। ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।
২০১১-১২ অর্থবছরে একই উপজেলার হারুয়ালছড়ি আমানবাজার সড়ক ব্রিক দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫ লাখ টাকা। এ কাজের কার্যাদেশ পায় মেহেদী এন্টারপ্রাইজ নামে জেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর বাকি কাজ না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১০-১১ অর্থবছরে ফটিকছড়ি উপজেলায় আজিমনগর আহমদিয়া রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য কম্পিউটার, আসবাবপত্র ও লাইব্রেরির জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ প্রকল্পের বরাদ্দ ৩ লাখ টাকা। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে একটি মনিটর, একটি সিপিও ও দুটি বেঞ্চ ক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
লোহাগাড়া উপজেলায় ২০১০-১১ অর্থবছরে জেলা পরিষদের অধীন এডিপি তহবিলের আওতায় গৃহীত একাধিক প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসব প্রকল্পের টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শতভাগ হয়েছে দেখিয়ে জেলা পরিষদ থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। লোহাগাড়া থানার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের এলাকার কুসাঙ্গারপাড়া কামিনী সড়ক উন্নয়ন নামে ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কটি ১০ বছর আগের যে অবস্থায় ছিল এখনও ঠিক একই রকম রয়েছে। এ সড়কে কোথাও সামান্য উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহী এন্টারপ্রাইজ বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। কুসাঙ্গারপাড়ার বাসিন্দা ও আখতরাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবুল বড়ুয়া যুগান্তরকে জানান, সড়কটি উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল শুনেছিলাম কিন্তু বাস্তবে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সড়কটির উন্নয়ন না হওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি সড়ক বরাদ্দের টাকা লোপাটকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহী এন্টারপ্রাইজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
একই এলাকার বড়হাতিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের জন্য তমতমিয়া খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে জেলা পরিষদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সরেজমিন গিয়ে এ স্কুলের আশপাশে তমতমিয়া খালের ওপর কোনো কালভার্ট নির্মাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ প্রকল্পের ৩ লাখ টাকার কালভার্ট উন্নয়নের কার্যাদেশ পায় প্রমি এন্টারপ্রাইজ। এ ব্যাপারে প্রমি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নূরুল হক যুগান্তরকে জানান, ৩ লাখ টাকায় কালভার্ট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছিল না ফলে প্রকল্প পরিবর্তন করে একটি ভবনের নির্মাণ কাজ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বড়হাতিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম যুগান্তরকে জানান, একটি ভবনের ২য় তলায় কয়েকটি পিলার তৈরি করেছে। এ কাজে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা সারা দেশে যা হয় তা-ই হয়েছে। আর কোনো কাজ করেনি। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ও চারপাশে ওয়াল তৈরিসহ যাবতীয় কাজের খরচ স্কুল ফান্ডের টাকা দিয়ে করা হয়েছে।
একই বছর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ লোহাগাড়া থেকে চানগাজীপাড়া অবশিষ্টাংশ সড়ক উন্নয়নের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ সড়ক উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ পায় মেসার্স ব্লু-বার্ড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোহাগাড়ায় চানগাজীপাড়ার সড়ক নামে কোনো রাস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, উন্নয়ন তো দূরের কথা। অথচ নথিপত্রে কাজের অগ্রগতি শতভাগ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
একই অবস্থা লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বনপুকুর জামে মসজিদের টয়লেট নির্মাণের টাকা নিয়েও হয়েছে হরিলুট। এ মসজিদটির টয়লেট নির্মাণের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। এ নির্মাণ কাজটির কার্যাদেশ পায় শাহ আমানত ট্রেডিং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে মসজিদের মাঠের দক্ষিণ পাশে একটি পাকা টয়লেট নির্মাণ হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একই উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের নাথপাড়া হতে পুটিবিলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের জন্য ১ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় জেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবে এ সড়কে কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি। প্রকল্পের পুরো টাকা লোপাট করা হয়েছে।
প্রকল্পের টাকা লুটপাট করা হয়েছে পুটিবিলা জাকারিয়াপাড়া জামে মসজিদ পুকুরের ঘাট নির্মাণের জন্য দেয়া জেলা পরিষদের ১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় প্রকল্প কমিটি। কিন্তু পুটিবিলা জাকারিয়াপাড়া জামে মসজিদ পুকুরে ঘাট নির্মাণ করা হয়নি। প্রকল্পের টাকা নিয়ে পকেটে ভরেছে প্রকল্প কমিটির লোকজন। পুটিবিলা গৌড়স্থান সিকদারপাড়া জামে মসজিদের ঘাট নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ ১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি।
ফরিদপুর : জেলা পরিষদের অধীনে বার্র্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় (এডিপি) গত ৫ বছরে ফরিদপুরের ৪ উপজেলায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার ৫টি বড় প্রকল্পের মধ্যে মাত্র দুটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩টি প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান। এসব প্রকল্পে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার শোভারামপুর সøুইসগেট বাজারসংলগ্ন কুমার নদে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘাট নির্মাণ, সদরপুর উপজেলার চর আড়িয়াল খাঁ নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা এইচবিবিকরণ, ভাঙ্গা উপজেলার শরীফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ২ লাখ টাকা, সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদি গ্রামে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা এইচবিবিকরণ, একই ইউনিয়নে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়-কদিয়া স্কুলের কাছের রাস্তা এইচবিবিকরণ, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নে উত্তরপাড়া মসজিদসংলগ্ন কাজে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা উন্নয়ন, বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত মান্দারতলা ২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা উন্নয়নে নিুমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার অনেক কাজে নামেমাত্র কাজ করে নির্ধারিত বিল তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদাররা সরকারদলীয় হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছেন না। স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা নামেমাত্র কাজ করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মোফাজ্জল হোসেন (যুগ্ম সচিব) যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।যুগান্তর