বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > নিজের দলেই কোণঠাসা এরশাদপন্থিরা সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

নিজের দলেই কোণঠাসা এরশাদপন্থিরা সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জাতীয় পার্টিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এরশাদপন্থিরা। অনেকের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে নেমে এসেছে বহিষ্কারের খড়গ। এ অবস্থা চলতে থাকলে এরশাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আপন ছোট ভাই ও এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত জিএম কাদের বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করা মুশকিল। তবে স্বাভাবিকভাবে দেখা যাচ্ছে, যারা এরশাদের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছে তারা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।

প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব না থাকলেও ভেতরে ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে এরশাদ ও রওশনপন্থি- দু’টি ধারায় বিভক্ত হয়ে রয়েছে জাতীয় পার্টি। একপক্ষ অন্যপক্ষের নেতাকর্মীদের সহ্য করতে পারেন না। প্রভাব বিস্তারের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই বিদ্যমান কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত।

বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সিএমএইচ’এ ভর্তি করা ইস্যুতে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই নির্বাচনে অংশ নেন রওশন এরশাদের দলে ভিড়ে। এমনকি এরশাদের পাশে সারাক্ষণ যারা ঘুর ঘুর করতেন তাদের অনেকেই রওশনের দলে ভেড়েন।

অন্যদিকে এরশাদের আপন ভাই প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এরশাদের পক্ষে একাট্টা থেকে নির্বাচন বর্জন করেন। তারা এরশাদের মুক্তি দাবিতে পোস্টারিংসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

এ সময় ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা রওশনের দলে ভিড়ে যান। যে কারণে এরশাদ মুক্তি আন্দোলন করতে গিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এরশাদপন্থিদের।

১২ ডিসেম্বর এরশাদকে সিএমএইচ’এ ভর্তি করার পর ১৭ ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকা হয়েছিলো। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাপের মুখেই বাধ্য হয়েছিলেন কর্মসূচি ঘোষণা করতে।

জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব ঘোষিত ওই কর্মসূচিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল।

তারা ফোন করে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের কর্মসূচি বাতিলের কথা জানান। এমনকি সাংবাদিকদেরও ফোনে কর্মসূচি বাতিলের কথা জানিয়েছিলেন তখন।

কথিত রয়েছে মহানগরের এই দুই নেতাই পুলিশকে দিয়ে সভা পণ্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতারা সফল করেছিলেন কর্মসূচি।

তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তোতা মিয়া। পুলিশি বাধা সত্ত্বেও তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত এই নেতার উপর ওই সময় থেকেই ক্ষিপ্ত ছিলেন মহানগরের সভাপতি, সম্পাদক।

তোতা মিয়াকে শায়েস্তা করতে ওই ঘটনার পরদিনেই গোপনে বনানী থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবার আর কোনো রাখ ঢাক না করেই এমনকি কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়েছে ১৯৮৩ সাল থেকে জাপার রাজনীতিতে যুক্ত এই নেতাকে।

তোতা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, স্যারের (এরশাদের) হাত দুর্বল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে অনেকে। এরশাদের পরীক্ষিত নেতাদের বেছে বেছে বহিষ্কার ও কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে সরব ভূমিকা পালন করেন বিমানবন্দর থানা কমিটির সভাপতি নাজিম উদ্দিন ভূইয়া। তাকেও কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়েছে মহানগরের সভাপতি ও সম্পাদক।

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে। ’৯০ এরশাদের পতনের পর চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টিকে ধরে রেখেছিলেন তিনি। তাকেও কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী বাংলানিউজকে জানান, কোনো রকম প্রতিহিংসার কারণে নয়, উপযুক্ত প্রমাণ ও কারণেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি টিভি সাক্ষাৎকারে মহানগরের নেতাদের নামে বিষদগার করেছেন।

তবে এসব বিষয়ে একাধিকবার ফোন দিলেও সাড়া পাওয়া যায় নি জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর।