বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারেই রানা প্লাজায় ধস

নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারেই রানা প্লাজায় ধস

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাভারের রানা প্লাজা ধসের জন্য নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং প্রকৌশলীদের দায়ী করলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী ও প্রকৌশলীদের তৈরি নকশা ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইনস্টিটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারর্স, বাংলাদেশ (আইইবি) ইআরসি সেমিনার কক্ষে ‘সাভার ট্রাজেডির মতো ঘটনা প্রতিরোধ- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ পরামর্শ দেন।
বসুন্ধরা সিমেন্টের সহায়তায় আইইবি এ সেমিনার আয়োজন করে।
রাজউক চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, “আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে রাজউক স্বাধীন এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে পারছে না। রাজউকে জনবল কম এটা সবাই স্বীকার করে। এরপরও এ প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে সময় লেগেছে চার বছর।”
নুরুল হুদা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “রাজউককে ঢেলে সাজানোর যে চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটা সফল হলে দেশে কোনো বেকার প্রকৌশলী থাকবে না। দেশের সব প্রকৌশলী যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশ পাল্টে ফেলা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “একইসঙ্গে নতুন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে কাঠামোগত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর থাকতে হবে ভবনের নকশায়। ভবন নির্মাণের পরে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রকৌশলীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন লেকচারার প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রকৌশলীরাই দায়ী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাঁচটি কারণে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো হলো- ভবনে ওভারলোড ও এক্সট্রা ফোর্স, আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, অনুমোদনের অতিরিক্ত তলা নির্মাণ, নিম্ন মানের রড ব্যবহার করে দুর্বল কলাম নির্মাণ এবং শেষ তলাটি নির্মাণাধীন অবস্থায় ব্যবহার শুরু করা। সময় থাকতে কলাম সংস্কার করা হলে হয়তো এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।”
বসুন্ধরা গ্রুপ সিমেন্ট সেক্টরের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম হেলালী বলেন, “রানা প্লাজার মতো ঘটনার জন্য দায়ী নির্মাণ কাজে সচেতনতার অভাব। একইভাবে দায়ী ভবন ও গার্মেন্ট মালিক। এই দুই পক্ষের কেউই ভবন নির্মাণ সম্পর্কে সচেতন নন। গার্মেন্ট মালিকদের সচেতন করার দায়িত্ব যেমন বিজিএমইএর, একইভাবে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব আইইবি, এইচবিআরআই, বিএসটিআই, বুয়েট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের।”
তিনি বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপ মনে করে, নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিমেন্ট, রড, টাইলসসহ অন্যান্য সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসা। রানা প্লাজার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে সে লক্ষ্যে আগামী ৭ জুলাই বুয়েট একাডেমিক কাউন্সিলে প্রতিষ্ঠানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বিল্ডিং সেফটি অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক আরও একটি সেমিনারে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আইইবি’র সহযোগিতা পেলে এই ধারাবাহিকতা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রকৌশলীদেরও জাতীয় পুরস্কার প্রদান করতে আগ্রহী।”

এসময় গণমাধ্যমগুলোকে গণসচেতনতামূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রচার ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে বসুন্ধরা সিমেন্টের ব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল সাপোর্ট) প্রকৌশলী সরোজ কুমার বড়ুয়া বসুন্ধরা সিমেন্টের উৎপাদন পদ্ধতি উপস্থানের সময় বলেন, “রানা প্লাজা ধসের একটি বড় কারণ নির্মাণ সামগ্রী। নিম্নমানের সিমেন্টের কংক্রিট তৈরির ক্ষমতা কম। বসুন্ধরা সিমেন্ট তৈরি হচ্ছে আধুনিক পিসিসি পদ্ধতিতে, যা ওপিসির তুলনায় অনেক বেশি টেকসই।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে ৯০ ভাগ কাজ পিসিসি পদ্ধতিতে তৈরি সিমেন্টে। উন্নত নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।”

আইইবি’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এম শামীম জেড বসুনিয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আইইবি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিভিশনের চেয়ারম্যান ড. প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, আইইবি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিভিশনের সেক্রেটারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।